বাঁধনহারা ফেরদৌস আরা

যখন তিনি গানের শিক্ষক
যখন তিনি গানের শিক্ষক
পঅবসর মানেই নজরুলের গান-বিষয়ক বই পড়া,্ রতিদিন রেয়াজ করেন
পঅবসর মানেই নজরুলের গান-বিষয়ক বই পড়া,্ রতিদিন রেয়াজ করেন

নজরুলসংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। লাল টিপ পরতে ভালোবাসেন। শাড়ি পরেন নানা রকমের। সব রকম খাবারই পছন্দ করেন।
‘নজরুল তো ছিলেন বাঁধনহারা। তেমনি আমার সাজ-পোশাকেও কোনো একটি রঙে বাঁধা নেই। সব ধরনের উজ্জ্বল রংই আমার পছন্দের।’ প্রতিদিনকার জীবনে নজরুলের প্রভাব নিয়ে এ কথাই বললেন ফেরদৌস আরা।
নজরুলসংগীতের জনপ্রিয় এই শিল্পীর পছন্দের পোশাক শাড়ি। পাড় দেওয়া যেকোনো শাড়ি পরতেই ভালোবাসেন। সঙ্গে মিলিয়ে কপালে একটা বড় টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক আর চোখে আইলাইনারের শেড। অনুষ্ঠান বা দাওয়াতের ধরন বুঝেই শাড়ি বেছে নেন। রাতের কোনো দাওয়াতে গেলে ভারী কাজের শাড়ির সঙ্গে মেকআপ নেন আর গাঢ় করে চোখ সাজান। চুলটা সেই পরিচিত স্টাইলেই ‘হাত খোঁপা’ করে নেন। গুঁজে দেন একটা ফুল। সাধারণ শাড়ির সঙ্গে পরেন ভারী গয়না। আবার শাড়ি যখন জমকালো, তখন পরেন কম গয়না। জুতা বা স্যান্ডেল যা-ই হোক, সেগুলোতে সব সময় হিল থাকবেই। ফেরদৌস আরার মতে, ‘হিলে মেয়েদের স্মার্ট লাগে।’
বাড়িতেও কি শাড়ি পরে থাকেন? ‘না। বাসায় আমি সালোয়ার-কামিজ পরে থাকতে ভালোবাসি। তবে সেটা সম্পূর্ণ ঘরের মানুষদের সামনে। মেহমান বা আমার স্কুলের (সুরসপ্তক) ছেলেমেয়েরা এলেও আমি শাড়ি পরে তাদের সামনে যাই।’
নানা ধরনের অনুষ্ঠানের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে কাটলেও বাড়িতে তিনি সমান ব্যস্ত। আলু বা পেঁয়াজ ফুরোলো কি না, আজ কী রান্না হবে—সব খোঁজই নেন। নিজেও রান্না করেন। শাশুড়ির দেখভাল বা সন্তানদের খোঁজ নেওয়া—সবকিছুই সামলান দুহাতে। এর বাইরে একটু ফুরসত মিললে? ‘এই তো বসে যাই নজরুলের গানবিষয়ক বইগুলো নিয়ে। নজরুলের গান শুনে এখনো শেখার চেষ্টা করি। আমি গাছ ভালোবাসি। বাসার ছাদে একটা বাগান আছে। সেখানে নানা ধরনের গাছ দিয়ে ভরে ফেলেছি। সময় পেলে সেগুলোরও পরিচর্যা করি।’

ফেরদৌস আরা শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে টিপ পরেন। খোঁপায় ফুল। ছবি: সুমন ইউসুফ
ফেরদৌস আরা শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে টিপ পরেন। খোঁপায় ফুল। ছবি: সুমন ইউসুফ

বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আর শিক্ষার্থীদের সময় দিয়ে বাসায় ফিরতে অনেক দিনই রাত দুপুর হয়ে যায়। এরপরও গানের চর্চা করেন অনেক সময় ধরে। কখনো গাওয়া, কখনো শোনা—এই করেই কাটে ঘণ্টা খানেক। তারপর ঘুমাতে যান। সকালে উঠে আবার তৈরি হতে থাকেন সারা দিনের জন্য। শিল্পী ফেরদৌস আরা বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে অনেক রাতে গানের রেয়াজ হতো। এই সময়টা খুব নিরিবিলি থাকে। সুর সাধনার জন্য মধ্যরাতই আমার পছন্দের। ছোটবেলা থেকে যে সুর আমাকে বেশি টানত, সেগুলোই শিখেছি। আর বড় হলে দেখলাম এর সবটাই নজরুলের।’
এভাবেই নজরুলের সুরের ভক্ত বনে যান ফেরদৌস আরা। নিজের স্কুল সুরসপ্তক ছাড়াও নজরুল ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নজরুলের গানের তালিম দিচ্ছেন এই শিল্পী। এখন আবার ব্যস্ত নিজের একক কণ্ঠে সহস্র গান সিরিজের অ্যালবামের কাজ নিয়ে। আর এভাবেই নজরুলকে নিজের মধ্যে লালন করে চলেছেন বলে জানান।