গরমে আরাম পাবেন এই ধারার পোশাক পরলেই

কো-অর্ড সেট এমন এক ধারা, যাতে পোশাকের পুরোটাই তৈরি হয় একই নকশার কাপড় দিয়ে। গরমের জন্য এটি আদর্শ পোশাক। কারণ, বেশির ভাগ কো-অর্ড সেট বানানো হচ্ছে বেশ ঢিলেঢালা কাটে। উপকরণও রাখা হচ্ছে আরামদায়ক। এ কারণে এই পোশাক গরমে স্বস্তিই দেয়।

কো–অর্ডে কাপড়ের রং আর নকশা থাকবে একমডেল: সিফাত, পোশাক: যাত্রা, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: কবির হোসেন

এ বছর পোশাকের ফ্যাশনধারায় জনপ্রিয় এক স্টাইল, কো-অর্ডিনেট সেট। সংক্ষেপে কো-অর্ড। এটি এমন এক ধারা, যাতে একই নকশার কাপড় দিয়ে তৈরি হয় পোশাকের পুরো সেট। রং তো বটেই, কাপড়ের নকশাও থাকে একেবারেই এক। কো-অর্ড কিন্তু নতুন কিছু নয়। রিসোর্ট ওয়্যার, লাউঞ্জ ওয়্যার বা বিচ ওয়্যার হিসেবে কো-অর্ডের প্রচলন আগে থেকেই ছিল। তবে বৈশ্বিক ফ্যাশনধারায় কো-অর্ড এখন রোজকার ব্যবহার্য পোশাক। সময়ের সঙ্গে বদলেছে শুধু প্যাটার্ন আর কাট।

কোন জামার সঙ্গে কোন পায়জামা পরবেন, এমন ভাবনায় সময়ও নষ্ট করতে হয় না
পোশাক: সোলাস্তা, ছবি: কবির হোসেন

এখনকার কো-অর্ড পোশাকগুলো কাটের কারণেই যেন নজর কেড়েছে বেশি। গরমের জন্য এটি আদর্শ পোশাক। কারণ, বেশির ভাগ কো-অর্ড সেট বানানো হচ্ছে বেশ ঢিলেঢালা কাটে। উপকরণও রাখা হচ্ছে আরামদায়ক। এ কারণে গরমে স্বস্তিই দেয় এ পোশাক। আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, কোন জামার সঙ্গে কোন পায়জামা পরবেন, এমন ভাবনায় সময়ও নষ্ট করতে হয় না।

আরও পড়ুন
সুতির কাপড়ের কো–অর্ড
পোশাক: সোলাস্তা, ছবি: কবির হোসেন

ভারতীয় অভিনেত্রী ও দুই বোন কারিনা কাপুর খান ও কারিশমা কাপুর ২০২২ সালের মার্চে যখন মালদ্বীপ থেকে ফেরত আসেন, এয়ারপোর্টে তাঁদের কো-অর্ডিনেট পোশাকে দেখা যায়। আরামদায়ক এ পায়জামা আর শার্টের কাহিনি কী? নকশার জন্য নয়, কাটিংয়ের জন্যই আলোচনায় চলে আসে পোশাকটি। পরে বেশ কিছুদিন কারিনা কাপুরকে এ ধরনের কাটের পোশাক পরা অবস্থায় দেখা যায়। ধীরে ধীরে এ স্টাইলের পোশাকে কাটের ভিন্নতা চোখে পড়তে শুরু করে। অনেকে লম্বা কুর্তার সঙ্গে পায়জামা বা প্যান্ট বানাতে থাকেন। অনেকে আবার সালোয়ার, কামিজ, ওড়না—তিনটিতেই একই নকশা রাখছেন। অধিকাংশ কো-অর্ডই নিত্যব্যবহার্য। অবশ্য উৎসব-আয়োজনেও কো-অর্ড পরা যায়। কোন ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি, সেটির ভিত্তিতে ঠিক করে নেওয়া হয় কখন, কোথায়, কোন কো-অর্ডটি পরা যেতে পারে।

কো–অর্ডে টাই–ডাইয়ের নকশা
পোশাক: রিটা আমীর প্রেট-এ-পোর্টার, ছবি: কবির হোসেন

আমাদের দেশে গত বছর থেকেই এ ধারার পোশাকের চল দেখা গেলেও এ বছর যেন জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশি। গরমে আরামদায়ক, টেকসই, সুতি কাপড়ের তৈরি কো-অর্ড অনায়াসেই হয়ে উঠতে পারে আপনার রোজকার পোশাক। সাধারণত ‘ওভারসাইজড’ হয়ে থাকে কো-অর্ড, যাতে আসে ‘স্মার্ট লুক’, জানালেন অনলাইনভিত্তিক দোকান রিটা আমীর প্রেট-এ-পোর্টারের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার শাহারিয়া রিটা।

আরও পড়ুন

প্রিয় নকশায় প্রিয় রং

কো-অর্ডে থাকতে পারে নানা নকশার সমন্বয়। তবে জামা-পায়জামা দুটিতেই সেই নকশার বিস্তৃতি থাকতে হবে। কারুকাজের ভারিক্কি না থাকলেই গরমে আরাম পাবেন। প্রিন্ট কিংবা একরঙা কো-অর্ড বেছে নিতে পারেন। ফুলের মোটিফ, জ্যামিতিক মোটিফ কিংবা টাই-ডাইয়ের কো-অর্ড দেখতেও সুন্দর। গরমে সাধারণত একটু হালকা রঙের পোশাকই বাছাই করা হয়ে থাকে। পীতাভ সবুজ, হালকা বেগুনি, পাউডার পিংক, পাউডার ব্লু কিংবা ক্রিমরোজ ইয়েলো অনেকেরই পছন্দ। তবে নিউট্রাল রঙের বাইরেও সবুজ, নীল, নিয়ন, শর্ষে হলুদ, হট পিঙ্কের মতো উজ্জ্বল কিংবা গাঢ় রংও কো-অর্ডে মিলবে।

ঢিলাঢালা কাটের কো–অর্ড
পোশাক: রিটা আমীর প্রেট-এ-পোর্টার, ছবি: কবির হোসেন

গরমে, আরামে

এই গরমে আরামদায়ক, নরম সুতি কাপড়ের কো-অর্ড আনতে যাচ্ছে অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ রঙিন পিরান। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার সিলভিয়া খান বলছিলেন, নকশিকাঁথা ফোঁড়ে হালকা ধাঁচের নকশা করা এসব কো-অর্ড গরমে দারুণ উপযোগী। পোশাকের পুরোটাই থাকছে ঢিলেঢালা। বগলের অংশটা চেপে থাকলে গরমে, ঘামে ভীষণ অস্বস্তি হয়। তাই রঙিন পিরানের কো-অর্ডের হাতার কাটটাই থাকছে এমন, যাতে এ অংশটা চেপে না থাকে। সঙ্গে থাকছে ঢোলা প্যান্ট।

আরও পড়ুন

যেমন ধারায় যেমন পোশাক

যেকোনো কাটের পোশাকেই হতে পারে কো-অর্ড। কুর্তা বা পাঞ্জাবির মতো কাট রয়েছে রিটা আমীর প্রেট-এ-পোর্টারের এথনিক ধারার কো-অর্ডে; সঙ্গে থাকছে প্যান্ট, চাপা সালোয়ার কিংবা টিউলিপ প্যান্ট। আধুনিক ধারায় তাঁরা এনেছেন কাফতান। আরও রয়েছে উঁচু-নিচু কাটের শার্ট। এ ধারায় সঙ্গে থাকছে কোমর উঁচু প্যান্ট, প্যান্টের নিচের অংশে চওড়া কাট (ওয়াইড লেগ প্যান্ট) এবং সোজা কাটের প্যান্ট। অলংকরণের জন্য বেল্ট কিংবা বিশাল আকারের বোতামের ব্যবহারও রয়েছে।

কো–অর্ডে কাঁথা ফোঁড়ের নকশা
পোশাক: যাত্রা, ছবি: কবির হোসেন

আরও কো-অর্ড

যাত্রা বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ইমতেনান মোহাম্মদ জাকি বলছিলেন, যাত্রার কো-অর্ডগুলো একরঙা। প্রকৃতি থেকে নেওয়া হালকা রংগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে। খাদি আর রিমি সুতির এসব কো-অর্ড একরঙা হলেও বুনন আর বয়নের কল্যাণে ফুটে ওঠে ভিন্নতর এক রূপ। খাদি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কামিজ আর পায়জামা। খাদির কো-অর্ডে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাঁথা ফোঁড়ের সাদামাটা নকশা। রিমি সুতা দিয়ে বানানো হয়েছে ভিন্নধারার কো-অর্ড, যার মধ্যে রয়েছে ক্রপ টপ, খাটো কামিজ, টপ। এগুলোর কোনোটি ফুলহাতা, কোনোটি হাতাকাটা। সঙ্গে থাকছে ঢোলা প্যান্ট, ঢোলা পায়জামা, সোজা কাটের প্যান্ট, ডিভাইডারের মতো পায়জামা কিংবা হারেম প্যান্ট।

যেকোনো কাটের কামিজ, কুর্তা বা ফতুয়ার সঙ্গে মানানসই ধরনের পায়জামা বা প্যান্ট দিয়েই হতে পারে দারুণ সব কো-অর্ড। স্কার্ট আর টপেও হয় কো-অর্ড। অনেকে জামা বা টপের ওপর কটি পরেন। কো-অর্ডের এই কটিও হতে পারে একই কাপড়ের।

আরও পড়ুন