আফ্রিদি, কোহলি, তাসকিনের মতো ক্রিকেটাররা কেন এই বাংলাদেশি হেয়ার স্টাইলিস্টের কাছে চুল কাটান?

ক্রিকেটার বিরাট কোহলির হেয়ার স্টাইল করে মন জিতেছেন আক্তার আলী
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত ক্রিকেট দল। সে সফরের সময় বিরাট কোহলির চুল কাটার জন্য ডাক পড়ে আক্তার আলীর। হোটেলে গিয়ে বিরাটের চাহিদামতো চুল কেটে দেন তিনি। কাজ শেষে বিরাটের মুখ থেকে ‘বিরাট চওড়া হাসি’ই উপহার পেয়েছিলেন আক্তার আলী। শুধু প্রশংসাই নয়, কাজ ভালো লাগায় বিরাট একটি টিভিসির শুটে আবারও ডেকে নেন আক্তার আলীকে। দুই দিন তাঁর সঙ্গে ‘হেয়ার স্টাইলিস্ট’ হিসেবে কাজ করে দারুণ খুশি আক্তার আলী জানালেন, ‘নিজের চুল ও ত্বক নিয়ে খুবই খুঁতখুঁতে বিরাট। তবে আমার কাজে তিনি খুবই খুশি হয়েছেন।’

শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে আক্তার আলী
ছবি: সংগৃহীত

বিপিএল খেলতে এসে শহীদ আফ্রিদির মতো ক্রিকেটারও চুল কাটাতে ডেকে নিয়েছিলেন আক্তারকে। শুধু বিদেশি ক্রিকেটাররাই নন, দেশের তারকা ক্রিকেটার থেকে বিনোদন জগতের তারকা অনেকেই মাথা পেতে দিয়েছেন আক্তার আলীর কাঁচির নিচে।

দেশি তরুণ ক্রিকেটারদের কাছেও জনপ্রিয় তিনি। মেহেদি হাসান মিরাজ ও শান্ত নিয়মিত আসেন এই স্যালুনে
ছবি: সংগৃহীত

দেশি ক্রিকেটের জনপ্রিয় মুখ মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়, সাব্বির রহমান, নাজমুল হোসেন শান্তর মতো অনেক তারকাই আক্তারের নিয়মিত খদ্দের।

ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়ের কারণে অনেক ক্রিকেটার আক্তার আলীর খোঁজ পেয়েছেন
ছবি: সংগৃহীত

আক্তারও চেষ্টা করেন ক্রিকেটারদের পছন্দমতো চুলের কাট দিতে। কীভাবে এমন আস্থা অর্জন করলেন ক্রিকেটারদের কাছ থেকে? আক্তার আলী বলেন, ‘শুরুতে আমার কাছে চুল কাটাতেন ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়। তাঁর নানা রকম স্টাইল করেছি আমি। তাঁর কাজ দেখে বাকি অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন। এভাবেই একজন থেকে আরেকজন করে অনেক তারকা ক্রিকেটারের চুল ছেঁটে দিয়েছি। তবে ক্রিকেটারদের অনেক ব্যস্ততা থাকে। তাই কখনো হয়তো ফোন দিয়ে জরুরিভাবে বাসায় ডেকে নেন, কেউ ডাকেন হোটেলে। আবার সময় পেলে নিজেরাও চলে আসেন স্যালুনে। তবে তাঁরা যেভাবে চান, সেভাবেই আমি নিজের কাজটা সমন্বয় করার চেষ্টা করি।’

বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেও লিটন দাসকে দেখা গেছে আক্তার আলীর স্যালুনে
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেও নিজেদের চুলের নতুন লুক সেট করে গেছেন ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। আক্তার আলী এবার যেমন মিরাজের চুলে দিয়েছেন আন্ডার কাট থ্রেট স্টাইল। আর লিটনের চুলে স্পাইক কাট দিয়েছেন। আক্তার যখনই কোনো তারকার চুলে হাত দেন, তাঁরা বলতে গেলে নির্ভারই থাকেন।

আরও পড়ুন
হেয়ার স্টাইল করছেন আক্তার আলী
ছবি: সংগৃহীত

কেন অন্যদের চেয়ে আক্তার আলীর চাহিদা বেশি—এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেউ যখন আমার কাছে চুল কাটাতে আসেন, প্রথমেই তাঁর মুখের গড়নটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি। এরপর কোন ধরনের কাটে তাঁকে আরও ভালো দেখাবে, সেটা বোঝাই। ক্রেতা ঠিক আছে বললে তারপর সেই কাট দেওয়ার চেষ্টা করি।’

ক্রিকেটের বাইরে অভিনেতা শাকিব খান, অনন্ত জলিল, অপূর্ব, তাহসান খানের মতো অনেক তারকার চুলের স্টাইলও করেছেন আক্তার আলীর টিম। একাধিক বিজ্ঞাপন, নাটক ও সিনেমার কাজেও হেয়ার স্টাইলিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন আক্তার। এর বাইরে নিয়মিত সাধারণ ক্রেতারাও আক্তার আলীর কাছে চুল কাটাতে আসেন প্রতিদিন।

ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ নিয়মিত যান আক্তার আলীর কাছে
ছবি: সংগৃহীত


ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের (৯/এ) ইস্টার্ন এলিট সেন্টারে তাঁর ‘আক্তার আলী হেয়ার স্টুডিও’ নামে পাশাপাশি দুটি স্যালুন আছে। ক্রেতাদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় একটির পাশে আরেকটি দোকান নিতে হয়েছে বলে জানালেন আক্তার।

ক্রিস গেইল, হাসাল আলী, রিজওয়ান বা মোস্তাফিজের মত দেশি–বিদেশি তারকাদের চুলের স্টাইল করেন আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা আক্তার আলী ২০০১ সালে এই পেশায় আসেন শিক্ষানবিশ হিসেবে। ঢাকার নিউমার্কেট ও কাঁটাবনের বিভিন্ন দোকানে কাজ শিখেছেন বেশ কিছুদিন। নিজের স্যালুন সামলাচ্ছেন সাত বছর ধরে। সেখানে এখন কাজ করেন ২২ জন কর্মী। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর পরিবার। ইউটিউবে চুল কাটানোর নানা রকম ভিডিও দেন বিভিন্ন সময়। অনেকটা শখের বশে সেসব ভিডিও আপলোড করলেও এখন চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার প্রায় চার লাখ। পেয়েছেন সিলভার প্লে বাটনও। করোনার সময় যখন কোনো ক্রেতা ছিল না, তখনো চেষ্টা করেছেন নানা রকম সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতে।
এখন আক্তার আলীর কাছে কেউ চুল কাটাতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিতে হয়। সময় ধরে সেভাবেই ক্রেতাদের সামলান। চুল কাটা ছাড়াও তাঁর স্যালুনে হেয়ার কালার, রিবন্ডিং, ফেশিয়াল, ম্যানিকিউর, পেডিকিউর, মেকআপসহ নানা ধরনের সেবা পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন