শাকিব খানের ভাইরাল লুকের পেছনের গল্প বললেন সাফিয়া সাথী
সামাজিক মাধ্যমে দুদিন ধরে ভাইরাল একটি টিভিসির জন্য শাকিব খানের ১ মিনিটে ৬টি লুক। সেই টিভিসির কস্টিউম নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার সাফিয়া সাথী। জানালেন শাকিবের লুকগুলো তৈরির পেছনের অজানা গল্প।
৮ নভেম্বর হঠাৎ করেই ফ্যাশন ডিজাইনার সাফিয়া সাথীর ফোনে নির্মাতা আদনান আল রাজীবের মেসেজ, ‘কী করছ?’
সাফিয়া লিখলেন, ‘একটা প্রোগ্রামে যাচ্ছি।’
এরপর ফোন করে আদনান তাঁকে মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলির বিজ্ঞাপনের কস্টিউম ডিজাইন করার প্রস্তাব দিলেন। ১৩ নভেম্বর সাফিয়ার সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল। সেটিও পিছিয়ে দিতে বললেন।
সাফিয়া বললেন, ‘আদনান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, তিনি কাজটার বিষয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছেন। আমিও যুক্ত হয়ে গেলাম।’
শাকিবের আপত্তি ছিল না
৯ নভেম্বর বিজ্ঞাপনের গল্প শুনে পোশাকের আইডিয়া নিয়ে সদলবলে মুডবোর্ড আর প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে করতেই পার হয়ে গেল। সেদিনই দেখিয়ে নিলেন নির্মাতাকে। কিছু পরামর্শ নিয়ে রিভিউ করলেন। পরদিন দেখালেন এই বিজ্ঞাপনের প্রধান মুখ অভিনেতা শাকিব খানকে।
শাকিব জানালেন, তাঁর কোনো পোশাকে আপত্তি বা সংশোধন নেই। তিনি কেবল শুটিংয়ে যাওয়ার আগে সব পোশাক একবার করে ট্রায়াল দিতে চান। পোশাকের জন্য নায়কের মাপজোখ নিয়ে ফিরলেন সাফিয়া। এরপর শুরু হলো পোশাক, জুতা ও অ্যাকসেসরিজ সংগ্রহ এবং তৈরির কাজ। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সেসব সম্পন্ন করেছেন সাফিয়া সাথী। ১৬ আর ১৭ নভেম্বর হয়েছে শুটিং।
শাকিবরূপী শাকিব
বিজ্ঞাপনে এটি শাকিবের প্রথম লুক, ৬টি ক্যারেক্টারের লুকের আগের লুক। শাকিবের প্রথম লুক শাকিব হিসেবেই। মানে সুপারস্টার হিসেবেই, যিনি ‘নাম্বার ওয়ান’ শাকিব খান নামে খ্যাত। এখানে তাঁকে দেখা গেছে সাদা টি-শার্টের সঙ্গে সাদা সুতার ফোঁড় তোলা কমলা রঙের জ্যাকেটে।
এই যে সাদা আর কমলা রং, এটি টিভিসির পণ্যের থিম কালার। ঠিক একই কারণে এই বিজ্ঞাপনে ঘুরেফিরে বারবার এসেছে সাদা, কমলা আর সবুজ রংগুলো।
পাইলটের লুকে শুরুতে সানগ্লাস ছিলই না
পাইলট হিসেবে শাকিব খানকে দেখা যায় কেবিন ক্রুদের সঙ্গে নাচতে। এখানে শাকিবের লুকটা লাক্সারিয়াস এয়ারলাইনসের কর্মীদের পোশাক থেকে অনুপ্রাণিত।
মজার ব্যাপার হলো, টিভিসিতে শাকিবকে সানগ্লাসে দেখা গেলেও শুরুতে সানগ্লাস ছাড়াই শটটা নেওয়া হয়েছিল। কেননা পরিচালক এখানে শাকিবের চোখের অভিব্যক্তি দেখাতে চাইছিলেন। অবশ্য সাফিয়ার মনে হয়েছিল, সানগ্লাসেই লুকটা সম্পূর্ণ হয়। পরে সানগ্লাসসহ আরেকটি শট নেওয়া হয়। আর পরের শটটাই রাখা হয় বিজ্ঞাপনে।
তিরন্দাজের জার্সিটা
শাকিবের তিরন্দাজ লুকে অনেক ধরনের প্রপস ব্যবহার করা হয়েছে। সেসব সংগ্রহ করা হয়েছে বাংলাদেশ আর্চারি ফাউন্ডেশন থেকে। এই লুকে শাকিবের জার্সিটা সংগ্রহ করা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
শাকিব খান একটু গাঢ় ভাইব্রেন্ট রঙের পোশাকে স্বচ্ছন্দ। আমরা এমন একটা জার্সি খুঁজছিলাম, যেটার ফেব্রিক খুব ভালো মানের, নন-ব্র্যান্ডের, আর শাকিব খানের পরার উপযোগী। ফ্যাশন বিজনেসে আমার যত বন্ধুবান্ধব আছেন, সবাইকে দিয়ে খোঁজ করিয়েছি। কেননা তখন ফেব্রিক সংগ্রহ করে জার্সির নকশা করে তৈরি করার মতো সময় ছিল না। একটা মেরুন রঙের হুডি পেয়েছিলাম, তবে মনে ধরেনি। একেবারে শেষ মুহূর্তে এই জার্সিটা পাই।সাফিয়া সাথী, ফ্যাশন ডিজাইনার
টক-শোর উপস্থাপক
এখানে শাকিবকে দেখা গেছে ফরমাল লুকে। শাকিব বর্তমানে যে সিনেমার শুটিং করছেন, সেটির চরিত্রের প্রয়োজনে গোঁফ রেখেছেন। এই বিজ্ঞাপনেও তাই তাঁকে গোঁফসহ দেখা গেছে।
বিয়েবাড়ির কাজি
এখানে শাকিব খানকে দেখা গেছে শেরওয়ানি আর সাদা সিল্কের পাগড়িতে। কে বলবে এটা শাকিব খান! এই দৃশ্যে বিয়ের কনে হিসেবে দেখা গেছে মডেল প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে। তাঁর ওয়েডিং আউটফিটও সাফিয়া সাথীর ব্র্যান্ডের।
আইনস্টাইনরূপে স্টপওয়াচ হাতে
এই লুকটি কিঞ্চিৎ ‘ফানি’। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের লুক থেকে অনুপ্রাণিত। এই লুকে শাকিবের হেয়ারস্টাইল করেছেন রবিন। এই লুকে শাকিবের হাতে একটি পুরোনো ধাঁচের স্টপওয়াচ দেখা যায়। বেশ কিছু অ্যান্টিক শপ ঘেঁটে সাফিয়া স্টপওয়াচটি সংগ্রহ করেছেন।
শেষ লুকটিতে সাফিয়ার সিগনেচার টাচ
মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারের লালগালিচার জন্য অনেক তারকার পোশাক ডিজাইন করেছেন সাফিয়া সাথী। শাকিবের এই লুকের পোশাক যে সাফিয়া সাথী নিজেই করবেন, সে তো বলাই বাহুল্য।
প্রথম লুকে যেমন শাকিব খান, শাকিব খান হিসেবেই দেখা দিয়েছেন, শেষ লুকেও তা–ই। এ যেন বৃত্ত পূর্ণ করে আবার নিজের আপন পরিচয়ে ফেরা। লালগালিচায় সুপারস্টাররূপে শাকিব হাঁটছেন, এই লুকের পোশাকটি সাফিয়া সাথী নিজেই তৈরি করেছেন।
সাফিয়া বললেন, ‘শাকিব খানকে একটা ব্লেজার আর বেলবটম প্যান্ট পরানো হয়েছে। ব্লেজারের ওপর জারদৌসির কাজ করা। নকশাটা যখন করছিলাম, সেই ভিডিও ইন্টারনেটে আছে। এটা পরার পর শাকিব খান আমাকে এই পোশাকের ফিটিং আর ফিনিশিংয়ের জন্য অনেক প্রশংসা করেছেন।’
২০২০ সাল থেকে টিভিসির কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন সাফিয়া সাথী। বললেন, ‘অনেকেই বলেন, ইন্ডাস্ট্রির সব তারকার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। এটা আসলে টিভিসি করতে গিয়েই হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আয়োজনে, লালগালিচায় ফ্যাশন-মুহূর্ত তৈরির জন্য, এমনকি তাঁদের বিয়ের জন্যও আমাকে দিয়ে পোশাক করিয়েছেন। আমার শুরু থেকেই মানসম্মত, চরিত্রনির্ভর কস্টিউম (ক্যারেক্টার ডিজাইন) নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। আর ইচ্ছা ছিল শাকিব খান একদিন আমার নকশা করা পোশাক পরবেন। এই টিভিসির মধ্য দিয়ে দুটি স্বপ্নই একসঙ্গে পূরণ হয়ে গেল।’
শীতকাল বিয়ের মৌসুম। এই মুহূর্তে সাফিয়া সাথী তাঁর নয়া ওয়েডিং কালেকশনের কাজ করছেন। সেসব নিয়েই বেশ ব্যস্ততা যাচ্ছে সাফিয়ার।