নতুন ভাবনায়, নতুন নকশায় পলা...
পলা আর শুধু লাল রঙে সীমাবদ্ধ নেই। নকশাতেও এসেছে ভিন্নতা। সব মিলিয়ে পলা এখন অনেকের প্রিয় গয়না।
বছর ৭-৮ আগে একবার পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে গিয়েছিলেন তাহমীনা খান। সেবারই লাল রং দেখে শখ করে একটা পলা কেনেন তিনি। আর এখন তা হয়ে গেছে তাঁর সাজের নিয়মিত অনুষঙ্গ। একসময় বিবাহিত হিন্দু নারীর হাতেই শুধু শোভা পেত এই পলা। সেটিই এখন অনেকের সাজের অনুষঙ্গ। এখন ফ্যাশনের জন্য অনেকেই পরছেন। ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পলার রং আর নকশাতেও এসেছে ভিন্নতা।
কেনার সময় পলায় একটা কাঁটা কাঁটা ভাব থাকে। অনেক দিনের ব্যবহারেও এর রং ফিকে হয়ে যায় না, বরং আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। পলা এখন আর শুধু লাল রঙে সীমাবদ্ধ নেই। শাঁখার সঙ্গে জোড় বেঁধে পলা পরার ধারা থেকেও বেরিয়ে আসা হয়েছে। ফলে পলা নিয়ে অনেক বেশি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা যাচ্ছে এখন। নিত্যনতুন উপায়ে পলাপ্রেমীরা সাজাচ্ছেন নিজেদের হাত।
অনলাইন পেজ ‘আটপৌরে’র স্বত্বাধিকারী ইপ্সিতা হুমায়রা বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই পলার একটা চাহিদা আমাদের মধ্যে শুরু হয়েছে। আগে লাল পলার চল ছিল বেশি। এখন তার জায়গা নিয়েছে আকাশি, গোলাপি, সবুজ এমনকি কালো রং। রঙিন পলাগুলো পোশাক বা শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরা হচ্ছে। শুধু বিয়ের আগে বা পরে বলেই নয়, লাল রঙে সীমাবদ্ধ না হওয়ায় যেকোনো বয়সীরাই এখন পলা ব্যবহার করছেন। ইপ্সিতা বলেন, পলার ক্ষেত্রে লাল রংটাকে বিবাহিত নারীদের প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও অন্য রংগুলোর ক্ষেত্রে সেভাবে কোনো প্রতীকের কথা ভাবা হচ্ছে না; বরং উজ্জ্বল ও রঙিন কোনো কিছু পরলেই চারপাশে খুশি ও উচ্ছলতার একটা আমেজ তৈরি হয়। সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে রংগুলো।
সাজের অনুষঙ্গটিতে বৈচিত্র্য আনার ভাবনা থেকেই পলা ডিজাইন করা শুরু করেছিলেন ‘সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি’র স্বত্বাধিকারী ও গয়নার ডিজাইনার জেরিন তাসনিম খান। বলেন, ‘খেয়াল করলাম, সবার পলাই দেখতে একরকম। আবার অনেকে জানতেও চাইছিল আমরা পলা নকশা করি কি না। সেখান থেকেই পলা নিয়ে কাজ করার চিন্তা।’ পলা ডিজাইন করার সময় সব ধরনের ক্রেতার কথা মাথায় রাখেন এই ডিজাইনার, তারপর রঙের ব্যবহার ও ডিজাইনে আনেন বৈচিত্র্য।
জেরিন তাসনিম খান বলেন, ‘পলার মধ্যে মুক্তার শুভ্রতা কিংবা ঘুঙুরের মিষ্টি আওয়াজ যোগ করার চেষ্টা করেছি। পলায় অনেক কিছুই যুক্ত করা যায়। নকশা করা পলাগুলো অন্য চুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে না পরলেও চলে। অনেককেই দেখা যায়, একটা পলা দিয়েই তৈরি করছেন স্টাইল স্টেটমেন্ট। তবে চাইলে অন্য কোনো বালা বা চুড়ির সঙ্গেও অনায়াসে পরা যায় পলা। পলার নকশা এখন এতটাই সুন্দর যে স্বতন্ত্রভাবে পরা হোক কিংবা অন্য চুড়ির সঙ্গে মিলিয়ে, তুলে ধরবে আপনাকে, আপনার সাজকে।’
আটপৌরের সংগ্রহে থাকা পলাগুলোকে নকশি পলা, হাফ বালা, হাফ পলা, প্রজাপতি পলা, ঝুল পলা, পাতা পলা, ফুল পলা—এসব নাম দেওয়া হয়েছে। নকশি পলায় হাতের সূক্ষ্ম কাজে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। ইপ্সিতা বলেন, পলা নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে। তবে বালা-পলার ট্রেন্ড একদম নতুন। সব বয়সীর মধ্যেই এটা চাহিদা তৈরি করেছে। শাড়ি বা সালোয়ার–কামিজের সঙ্গে পলা বেশি যায়। তবে কেউ কেউ পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গেও পলা ব্যবহার করছেন। যেমন কেউ হয়তো পাশ্চাত্য কাটের শার্ট বা টি-শার্টের সঙ্গে একটা লম্বা কোটি পরল, তখন হাতে রং মিলিয়ে পরে নিল পলা।
পলার মূল উপকরণ ভারী প্লাস্টিক। এটা মেশিনের ছাঁচে তৈরি হয়। তারপর সেটার ওপর রুপা বা মিশ্র ধাতু দিয়ে কাজ করা হয়। পরে চাহিদা অনুযায়ী সোনালি বা রুপালি—দুই ধরনের রং বা টোন আনা যায়। বাজারে পাওয়া নানা নকশার পলার দাম শুরু ৮০০ টাকা থেকে। রয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকারও পলা। চাইলে সোনা বা রুপা দিয়েও বাঁধিয়ে নিতে পারবেন পলা। তখন সোনা বা রুপার দামের ভিত্তিতে দাম পরিবর্তন হবে।