উৎসবে থাকুক দেশীয় পোশাক

বাংলাদেশেের বড় বড় ডিজাইনার, বুটিক হাউস থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, প্রত্যেকেই যেন ঈদের অপেক্ষায় থাকেন। এই উৎসবকে ঘিরেই জমে ওঠে পোশাকের বাজার।

ঈদে দেশীয় শাড়ির আবেদন চিরন্তনমডেল: জলি ও নিকি, শাড়ি: লা রিভ ও কে ক্র্যাফট, গয়না: শৈলী ও কে ক্র্যাফট, ব্লাউজ: দ্য মসলিন, সাজ: পারসোনা, স্থান কৃতজ্ঞতা: দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জ, ছবি: কবির হোসেন

বাংলাদেশে বছরজুড়ে কোন পোশাকের ধারা জনপ্রিয় হবে, ঈদুল ফিতরেই তা নির্ধারিত হয়ে যায়। বড় বড় ডিজাইনার, বুটিক হাউস থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, প্রত্যেকেই যেন এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকে। এই উৎসবকে ঘিরেই জমে ওঠে পোশাকের বাজার।

দেশীয় শাড়িতে জমে উঠুক এবারের ঈদ
শাড়ি: কে ক্র্যাফট ও লা রিভ

এই পোশাকের বড় একটা অংশ তৈরি করেন আমাদের দেশীয় উদ্যোক্তারা। ফ্যাশন হাউস কে–ক্র্যাফটের নির্বাহী পরিচালক খালিদ মাহমুদ খান বলছিলেন, শুধু পোশাকের ম্যাটেরিয়াল নয়, পোশাকের নকশা ও কাটিং—সবকিছুতেই থাকে দেশীয় আবহ। ঈদের পোশাকে এমন মোটিফের ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা পার্শ্ববর্তী দেশের পোশাক থেকে আমাদের পোশাককে আলাদা করে তোলে। বরাবরের মতো এবারের ঈদপোশাকেও প্রাধান্য পেয়েছে ব্লক, প্রিন্ট, সুই–সুতার কাজ, হ্যান্ডপেইন্টে নিজস্ব ধারা।

পোশাকে প্রাধান্য পাচ্ছে হালকা রঙ
পোশাক: কে ক্র্যাফট, গয়না: শৈলী, ছবি: কবির হোসেন

বড় ফ্যাশন হাউসগুলোর ডিজাইনার ও স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সালোয়ার-কামিজে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে গলা ও হাতায়। কামিজের ঝুল ও ঘের দুটোই বেড়েছে। এবার অফ শোল্ডার বা কাঁধ থেকে একটু নামানো কামিজ ও টিউনিক খুঁজছেন অনেকে। আবার পাঞ্জাবি গলা এবং হাইনেকের কামিজের প্রতিও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। হাতা কাটা, লম্বা হাতা, কনুই পর্যন্ত হাতা, সবকিছুরই চল দেখা যাবে।

ঈদপোশাকে জনপ্রিয় হচ্ছে টপস
পোশাক: ক্লাব হাউস, ছবি: কবির হোসেন
কুর্তায় আছে জমকালো ছাপা নকশা
পোশাক: লা রিভ, গয়না: কে–ক্র্যাফট, ছবি: কবির হোসেন

ঈদে গরম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গরমের কথা ভেবে এবার হালকা রংগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বেশি। সাদা, ঘিয়ে রং, হালকা গোলাপি, নীল রংগুলো এবার চলবে বেশি। প্রায় সব বুটিক হাউসেই থাকছে রাজশাহী এবং অ্যান্ডি সিল্কের পোশাক। এ ধরনের পোশাকের ওড়নায় থাকছে নকশিকাঁথার কাজ। কখনো আবার কামিজের পাড়ে কনট্রাস্ট কাপড়ের পাইপিং আর সুতার বুননে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উৎসবের আমেজ। পোশাকের গলা ও হাতে ভরাট কাজের নকশিকাঁথার ওপর থাকছে চুমকির নকশা। এদিকে রং বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, হাফসিল্ক, মসলিন আর সিল্কের পোশাকগুলো তৈরি হচ্ছে এ লাইন কাটে। লম্বা ধাঁচের এই পোশাকগুলোতে দেখা গেল কারচুপি, এমব্রয়ডারি আর হাতের কাজই বেশি।

লাল বেনারসিতে তৈরি পোশাক। স্কার্টটিতে ব্যবহার করা হয়েছে সিল্ক।
পোশাক: দ্য মসলিন ও শেষের কবিতা, গয়না: গ্লুড টুগেদার

একটা সময় ছিল যখন ঈদবাজারে শাড়ির নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতো ভিনদেশি সিনেমা, সিরিয়াল বা নায়িকার নাম। তবে কয়েক বছর ধরে আমাদের মসলিন, তাঁত, সিল্ক, কাতান, জামদানি শাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ঈদ সামনে রেখে দেশীয় এসব শাড়ির নকশায়ও আনা হচ্ছে উৎসবের আবহ। আঁচলে জরির কাজ, কুঁচির অর্ধেকজুড়ে নকশা—এবার শাড়িতে এসব চোখে পড়ল বেশি। মসলিন শাড়ির জমিনেও বেশ নতুনত্ব দেখা গেল। কখনো ডিজিটাল প্রিন্ট, আবার কখনো এমব্রয়ডারি নকশায় পাড়ে ও আঁচলে এসেছে জমকালো আবহ। চল্লিশের দশকে কাতান শাড়িতে যে গুটির নকশার প্রচলন ছিল, সেটাই এবার অনেক বুটিকসে খাঁটি সিল্কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কামিজে প্রাধান্য পাচ্ছে দেশীয় নকশা
পোশাক: নিপুণ, দুল: শৈলী, হাতের বালা: কে ক্র্যাফট

ঢাকার মিরপুরের বেনারসিপল্লির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেল, শাড়ির রঙে প্রাধান্য পেয়েছে গাঢ় নীল, সবুজ, মেরুন, গোলাপি ইত্যাদি। কসমস, ফুলকলি, বালুচরি, কাঞ্জিভরমসহ আরও বৈচিত্র্যময় নকশার কাতান এবং বেনারসি শাড়ি। এসব শাড়ির বুননে থাকছে কলকি, ফুল আর বরফি নকশার জমকালো কাজ। কোনো কোনো শাড়িতে তিন রঙের ব্যবহারে থাকছে মিনার কাজ, চওড়া জরি পাড়ের নকশা।

এই ঈদেও থাকছে কো–অর্ড
পোশাক: ক্লাব হাউস ও শেষের কবিতা, গয়না: শৈলী

ফ্রক ছাঁটের কামিজ, ঘের দেওয়া আনারকলি, গাউন ছাঁটের পোশাকগুলোয় একটু ভিনদেশি ছাঁটের আবহ থাকলেও দেশীয় উপকরণে তৈরি এসব পোশাকও বেশ চলছে এবারের ঈদে। ঈদে রাতের দিকে থাকে বড় সব দাওয়াতের আয়োজন। এ প্রসঙ্গে ড্রেসিডেলের স্বত্বাধিকারী মায়া রহমান বলেন, এই সময়ের জন্য বেছে নিতে পারেন একটু গাঢ় রং আর অভিজাত ছাঁটের পোশাক। চলতি ধারার এসব পোশাক রাতের সাজে আদর্শ হবে বলে জানান তিনি।