নকশার চার পাঠককে যেভাবে দেওয়া হলো নতুন রূপ, দেখুন ভিডিও

সাজপোশাকে পরিবর্তন আনা যায় যেকোনো বয়সেই। চোখের ভুরুর স্টাইল, চুলের কাট বা রংবদলেও নিয়ে আসা যায় পরিবর্তন। তবে অনেক সময় ধরে চলে আসা স্টাইলে পরিবর্তন আনতে প্রয়োজন মনের জোর। স্বাচ্ছন্দ্যের বাইরে এসে নিজেদের সাজ নিয়ে নিরীক্ষা করলেন চার পাঠক। নিজেদের তুলে ধরলেন নতুনভাবে।

নকশার আয়োজনে ‘নতুন আমি’ বিভাগে চার প্রজন্মের চার পাঠকের সাজ নিয়ে নিরীক্ষা করলেন কানিজ আলমাস খান।মডেল: ইফফাত জেবীন, হাসিনা মমতাজ. ফাহমিদা রহমান ও অনিন্দিতা পাল। পোশাক: হুমায়রা খান, স্থান কৃতজ্ঞতা: ক্যানভাস, ছবি: সুমন ইউসুফ

বয়স প্রায় ৫০ ছুঁই ছুঁই। বেণি করলেও সেটি এখন বেশ চিকন হয়ে পিঠের ওপর পড়ে থাকে। কপালের সামনের অংশ তো খালিই হয়ে গেছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইস্তিরি না করেই কাপড় পরার প্রবণতাও কি বেড়ে যাচ্ছে? একই স্টাইল বা সাজে পার করে দিয়েছেন হয়তো জীবনের এতটা সময়। এভাবেই হয়তো পার করে দিতে চান বাকিটা জীবন।

অনেকে আবার হয়তো জীবনের মাঝপথে এসে ভাবেন, পরিবর্তন দরকার। তরুণ বয়সে এই ভাবনার বাস্তবায়নে থাকে না কোনো দ্বিধা বা অস্বস্তি। অথচ যেকোনো বয়সেই কিন্তু নিজের সাজ বুঝে ইতিবাচক পরিবর্তন বা মেকওভার করা যায়। বয়সের চেয়ে ইচ্ছাটাই এখানে মূল ভূমিকায় থাকুক।

রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান বলেন, ‘খুব ছোট ছোট পরিবর্তন দিয়ে শুরু করা যায়। ভুরু তুলে, লিপস্টিকের মাধ্যমে ঠোঁটের আকার পরিবর্তন এনে, কাজল বা আইলাইনার দেওয়ার নতুন কোনো স্টাইল দিয়ে, কনট্যুর করার মাধ্যমে গাল বা নাকের আকারে আরও ধারালো ভাব এনে কাজটা করা যায়।’ আর বড় পরিবর্তন আনতে হলে চুল কেটে রং করতে হবে। মেকওভারের ক্ষেত্রে চুলটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চেহারার একদম কাছে থাকার কারণে চুল ছেঁটে ফেললে কিংবা রং করলে পরিবর্তনগুলো বোঝা যায়। যেমন মাঝারি চুল থাকলে যথেষ্ট খাটো করতে হবে। কাঁধের ওপরে থাকলে ভালো।

পুরোনো রূপে ইফফাত জেবীন, হাসিনা মমতাজ. ফাহমিদা রহমান ও অনিন্দিতা পাল
ছবি: সুমন ইউসুফ

পুরোপুরি মেকওভারের ক্ষেত্রে পোশাকের দিকেও নজর দিতে হবে। সব সময় যারা হালকা রং পরেন, উজ্জ্বল বা গাঢ় রঙের দিকে নজর দিন। পাশ্চাত্য পোশাক কখনো না পরা হলে সেই ধাঁচের পোশাকের কথা ভাবতে দোষ নেই। প্রথম দিনই যে শার্ট-প্যান্ট পরে বের হয়ে যেতে হবে, এমন না। পোশাকের নিচের অন্তর্বাস যেন সঠিক মাপের হয়, সেই বিষয়টির দিকেও খেয়াল রাখুন।

আর যেকোনো ধরনের মেকওভারের ক্ষেত্রেই মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। মানসিক সাহসের ওপর জোড় দিলেন কানিজ আলমাস খান। না হলে এই পরিবর্তন ১০ দিনও বহন করতে পারবেন না। জীবনযাপনেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। কারণ মেকওভারের সঙ্গে জীবনযাপনও জড়িত। আরেকটি বিষয়, নতুন স্টাইল তৈরি করার সময় নিজের আরামের গণ্ডি (কমফরটেবল জোন) থেকে বের হয়ে আরেকটি আরামের গণ্ডি তৈরি করতে হবে। সঙ্গে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। না হলে পুরোনো আমিতে নতুনত্ব আনা যাবে না। চলুন উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝানো যাক।

হাসিনা মমতাজ

প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা, সিলেট

বয়স: পঞ্চাশোর্ধ্ব

ছোটবেলা থেকেই চুলের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা। ঢেউখেলানো চুল বড় করতে গিয়ে নিচের বেশ খানিকটা অংশ পাতলা হয়ে গেছে। সাজেন না খুব একটা। চোখ সাজানোর ওপর প্রাধান্য দেন। সাধারণত দেশীয় ঘরানার পোশাকই পরে থাকেন। হাসিনা মমতাজের চুলের জন্য স্টেপ লেয়ার কাট বেছে নিয়েছিলেন কানিজ আলমাস খান। প্রথমবারের পরিবর্তনটি স্বল্প পরিসরেই করতে চেয়েছেন।

নতুন রূপে হাসিনা মমতাজ
ছবি: সুমন ইউসুফ

পেশা ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে মিলিয়ে চুলে হালকা হাইলাইট করা হয়েছে। চাইলে পরবর্তী সময় সেটা আবার বদলে নিতে পারবেন। তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে শাড়ি ও সালোয়ার–কামিজ। কামিজের সামনের অংশটি ফাড়া দেওয়া। সঙ্গে প্যান্ট থাকায় স্মার্ট লুক তৈরি হয়েছে।

ডা. ফাহমিদা রহমান

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

(মা ও শিশু), জ্যেষ্ঠ মেডিকেল কর্মকর্তা

শিশু বিভাগ

বয়স: চল্লিশোর্ধ্ব

কোঁকড়া চুলগুলোই তাঁর প্রধান সৌন্দর্য। এটাকেই আরেকটু সেট করে দিলে দেখতে সুন্দর লাগবে, বললেন কানিজ আলমাস খান। খুব উগ্রভাবে কখনোই সাজেননি। বছরে দুবার চুল কাটা হয় সাধারণত। মেহেদি লাগান নিয়মিত। চুলে সব সময় থ্রি স্টেপস কাট দেন। সাধারণত সালোয়ার–কামিজ ও শাড়িই পরা হয়।

কোঁকড়া চুলগুলোই ফাহমিদা রহমানের অন্যতম সৌন্দর্য
ছবি: সুমন ইউসুফ

তাঁর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল কমলা কো-অর্ড। চুলে দেওয়া হয়েছে মাঝারি লেয়ার কাট। বার্গেন্ডি টোন বেছে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু চুলে মেহেদি লাগান নিয়মিত, সেটার সঙ্গে মিলে যাবে। কাজে বের হওয়ার সময় মুস দিয়ে সেট করে নিলেই হবে। ত্বকের যেসব জায়গায় ব্রণের সমস্যা আছে, কনসিলার, পাউডার ব্যবহার করলেই হবে।

ইফফাত জেবীন

সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক

বয়স: ত্রিশোর্ধ্ব

ইফফাত জেবীনের চুল কাঁধ ছাড়িয়েছিল। চুলে কখনো রং করাননি। তাঁর চুলের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে টুইগি কাট এবং বাদামি রং। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল ঢাকতে কনসিলার এবং ফেস পাউডার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন কানিজ আলমাস খান। লাগাতে পারেন বাদামি রঙের আইশ্যাডো।

ইফফাত জেবীনের চুলে দেওয়া হয়েছে টুইগি কাট এবং বাদামি রং
ছবি: সুমন ইউসুফ

চুল কাটার বিষয়টিতে তিনি বেশ উৎসাহী ছিলেন। ফটোশুটের জন্য তাঁকে একাধিকবার সাজানো হয়। একই চুলে নানা রকম স্টাইল দেখে মজা পাচ্ছিলেন বেশ। চুল নিয়ে আর একঘেয়েমিতে ভুগবেন না, এটা বুঝে গিয়েছিলেন।

অনিন্দিতা পাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মার্কেটিং বিভাগ, প্রথম বর্ষ

বয়স: বিশোর্ধ্ব

অনিন্দিতার চুলের আসল রং ছিল বাদামি। দেখে মনে হচ্ছিল হাইলাইট করা। চুলের প্রতি ভালোবাসা বেশি। তবে লম্বা চুলের নিচের দিকে বেশ কিছুটা অংশ ফেটে গিয়েছিল, ওপরের তুলনায় পাতলাও ছিল। নিজেকে অন্যভাবে দেখতে এই মেকওভারে অংশ নেন। অনিন্দিতার চুলের জন্য বাছা হয়েছে নরম বাদামি টোনের একটি শেড। যেহেতু প্রথমবার চুলে রং করাচ্ছেন, বহন করতে সুবিধা হবে বলে মনে করেছেন কানিজ আলমাস খান। অস্বস্তি বোধ করতে হবে না।

সাজার পর অনিন্দিতা পাল
ছবি: সুমন ইউসুফ

চুল আগে থেকেই স্ট্রেইটনিং করা, এ কারণে লম্বা লেয়ার করা হয়েছে। মেকআপ একদম হালকা। যেকোনো ধরনের পোশাকেই অনিন্দিতা স্বাচ্ছন্দ্য। মসলিনের সেটটিতে চারটি অংশ—ভেতরে খাটো টপ, তার ওপরে লম্বা হাতাকাটা জ্যাকেট, স্কার্ট স্টাইলের পালাজ্জো ও ওড়না। বয়স কম দেখে মেকআপ কম রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। এই কাটের পর যেকোনো স্টাইলেই চুল সেট করতে পারবেন তিনি।