শীতকালেও তাঁরা শর্টস পরেন কেন

মাঘের শীতে বাঘও পালিয়ে যায়। কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে থরথর করে কাঁপতে থাকে পৃথিবী। জ্যাকেট, সোয়েটার, কানটুপি আর হাতমোজা ছাড়া যখন আমরা ঘর থেকে বের হওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না, তখনো একশ্রেণির মানুষকে দেখা যায়, জ্যাকেটের সঙ্গে শুধু একটা শর্টস পরে দিব্যি হেঁটে চলে যাচ্ছে। প্রশ্ন হতে পারে, এটা কীভাবে সম্ভব? ওদের কি শীত লাগে না?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো, এই মানুষগুলো আমার–আপনার মতোই সাধারণ মানুষ। তাদের মধ্যে আলাদা কোনো শীতপ্রতিরোধী জিন বা ডিএনএ নেই। এর পেছনে আছে অদ্ভুত এক মানসিক শক্তি, যে শক্তিবলেই মূলত তারা প্রবল শীতেও শর্টস পরে বাইরে ঘুরে বেড়ানোর বিলাসিতাটা দেখাতে পারে। তবে ঠিক কী কারণে বিশেষ করে পুরুষের মধ্যে ঠান্ডাকে অগ্রাহ্য করার এই মানসিকতা তৈরি হয়, এককথায় সেটা ব্যখ্যা করা একটু কঠিনই। কারণ, এই মানসিকতার পেছনে শুধু একটা নয়, কাজ করে নানান রকম হিসাব–নিকাশ।

নিজেকে খুব শক্তসমর্থ দেখানোর জন্য পুরুষেরা অনেক সময় শীতকালেও শর্টস পরেন
ছবি: সংগৃহীত

১. মনোবিদ ক্যারোলিনা এস্তেভেজের মতে, নিজেকে খুব শক্তসমর্থ দেখানোর জন্য পুরুষেরা অনেক সময় এই কাজ করেন। শীতকে অগ্রাহ্য করে শর্টস পরে ঘুরতে পারাকে তাঁরা পৌরুষের প্রতীক বলে মনে করেন। বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, এই সহ্যক্ষমতা তাঁদেরকে অন্যের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলবে।


২. অনেকে আবার অন্যদের চেয়ে আলাদা হওয়ার তাড়না থেকেও শর্টস পরে বাইরে বেরিয়ে পরেন। ভারী জ্যাকেট, ট্রাউজার আর কানটুপিতে ঢাকা অনেক মানুষের মধ্যে নিজেকে আলাদা একজন করে দেখানোর জন্য শর্টস বেছে নেন। একই কারণে অনেক নারীও শীতকালে ছোট পোশাকে বের হন। নিজেকে চট করে আলাদা করে ফেলার জন্য, অন্যের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকার জন্য। নিজেকে স্টাইলিশভাবে উপস্থাপনের জন্য।

৩. কিছু মানুষ আবার শর্টস পরেন কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে না পেরে। সারা বছর শর্টস পরে শীতের সময় ট্রাউজার বা জগারে তাঁরা ঠিক স্বস্তি বোধ করেন না। ফলে তাঁরা তীব্র শীতের ‘রোমাঞ্চ’ নিতে রাজি থাকেন, তবুও ট্রাউজার পরে নিজের সারা বছরের অভ্যাস নষ্ট করতে চান না!

মেয়েরাও যে শীতে শর্টস পরেন না, তা নয়
ছবি: সংগৃহীত

৪. কেউ কেউ শুধু নিজের সহ্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও কাজটা করেন। যেমন রায়ান ম্যাককরমিক। ৪৫ বছর বয়সী এই মার্কিন ভদ্রলোক নিজের শরীরের অবস্থা বুঝতেই মূলত শীতের মধ্যে শর্টস পরেন। তিনি বিশ্বাস করেন, যেহেতু কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করার মাধ্যমেই শরীর আরও বেশি পোক্ত হয়ে ওঠে, তাই শীতের মধ্যেও শর্টস পরে ঘুরলে সেটা তাঁর শরীরকে আরও শক্তপোক্ত করে তুলবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মানসিকতা বাড়াবে।


৫. এর বাইরে আরও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা জিনস প্যান্ট পছন্দ করে না বিধায় শর্টস পরেন। ঠান্ডা যে তাঁদের একেবারেই লাগে না, এমন নয়। তবে সারা দিন জিনসের মতো ওজনদার একটা জিনিসের ভেতরে ‘চিপকে থাকা’র চেয়ে কয়েক হলকা ঠান্ডা বাতাসকে বরং তাঁদের কাছে বেশি সহনীয় মনে হয়।

মেয়েরা কেন পারতপক্ষে শর্টস পরেন না


কিছু কিছু মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবেই শীত সহ্য করার ক্ষমতা বেশি থাকে। এটা বংশগতও হতে পারে। আবার শরীরের পেশিসংখ্যা, দেহের তাপমাত্রা, জীবনাচরণের ওপর ভিত্তি করেও কিছু মানুষ অন্যান্য মানুষের চেয়ে দ্রুত তাপ উৎপাদন করতে পারেন এবং তাঁদের ঠান্ডা কম লাগে।

অন্যদিকে মেয়েদের শরীরে যেহেতু পেশিসংখ্যা পুরুষের তুলনায় কম, বিপাকীয় কার্যক্রম পুরুষের তুলনায় ধীর, সেহেতু তাঁদের পক্ষে শীত সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি মেয়েদের শরীরের তাপমাত্রাও পুরুষের তুলনায় কম, শীতে হাত-পা ঠান্ডাও হয়ে থাকে বেশি। এর ফলে হয়তো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বহু মেয়েই শীতের মধ্যে শর্টস পরার এই ফ্যাশনটা করতে পারেন না।

শীতের মধ্যে শর্টস পরার স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু?

ঠিক কতটুকু শীতের মধ্যে শর্টস পরে বাইরে যাওয়া উচিত, আর কখন উচিত নয়—এর তেমন নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। বরং মায়ো ক্লিনিকের ডক্টর কাউল মনে করেন, গায়ে একটা জ্যাকেট চড়িয়ে নিলেই শর্টস পরার মধ্যে তেমন কোনো বিপদ নেই। তবে শর্টস পরলে অবশ্যই শুধু টি-শার্ট পরে বাইরে না গিয়ে নিদেনপক্ষে একটা সোয়েটার পরা উচিত।


তবে দিন শেষে সিদ্ধান্তটা আপনার ও আপনার শরীরের। আপনার শরীরই আপনাকে বলে দেবে, আপনার পক্ষে শর্টস পরে বাইরে বের হওয়া সম্ভব কি না। এ ক্ষেত্রে চোখ–কান খোলা রাখতে হবে, দেহ যথেষ্ট তাপ উৎপাদন করতে পারছে কি না, সেই ব্যাপারেও রাখতে হবে সতর্ক দৃষ্টি। খুব বেশি শীতে শর্টস পরার পর যদি পায়ে কোনো ধরনের অসার অনুভূতির সৃষ্টি হয়, দেরি না করে দ্রুত ঘরে গিয়ে গা গরম করে নিন।

ফ্যাশনের চেয়ে সুস্থ থাকার গুরুত্ব অনেক বেশি।

তবে শিশুদের অবশ্যই বেশি শীতে শর্টস পরার অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, একটা শিশুর পক্ষে নিজের দেহ কতটুক শীতসহনীয়, সেটা বুঝতে পারা কঠিন এবং শীতের পরিমাণ বাড়লে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এর ফলে শিশুদের বড় হওয়ার আগপর্যন্ত এই ফ্যাশন থেকে দূরে রাখাই ভালো।


এর বাইরে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য শর্টস পরতে কোনো বাধা নেই। পুরো ব্যাপারটাই একান্ত যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। কাজেই মাঘের শীতে কাউকে শর্টস পরে ঘুরতে দেখলে অবাক হওয়ার প্রয়োজন নেই, তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও কিছু নেই। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক একটা ফ্যাশন হিসেবে নিতে পারলেই বরং ভালো, তবে ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা কম থাকলে এই ফ্যাশন নিজে অনুসরণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।


সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন