পূজার সাজে যেভাবে সাজলেন অভিনেত্রী মন্দিরা চক্রবর্তী
দেশীয় উপকরণের ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর আটপৌরে সাজেই পূজার সময় আনতে পারেন উৎসবের আমেজ। নকশার বিশেষ আয়োজনে অভিনেত্রী মন্দিরা চক্রবর্তীর জন্য পোশাকগুলোর নকশা করেছেন ‘মানাস’–এর ডিজাইনার ফায়জা আহমেদ।
উৎসবের সাজ শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যই নয়, ভেতরের গভীরতাকেও প্রকাশ করে। দেশীয় উপকরণে তৈরি পোশাক আর হালকা সাজের মাধ্যমেও পুরো লুকে নিয়ে আসা সম্ভব পূজার আমেজ। স্টাইলিংয়ের সময় পোশাকটি কোন ঢঙে আমাদের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলবে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
অভিনেত্রী মন্দিরা চক্রবর্তীকে পূজার চার সাজে সাজানোর সময় ডিজাইনার হিসেবে আরাম, স্বকীয়তা আর স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিয়েছি বেশি। প্রতিটি সাজেই ছিল টেকসই নকশার ছোঁয়া।
সপ্তমীর আয়োজনে
সপ্তমীর দিনটি আরাম দিয়েই শুরু হোক। শাড়ির পরিবর্তে আধুনিক পোশাকেই সেজে ওঠা যাক। ঘোরাঘুরির সময় আরাম পাওয়া যাবে। পরের দিনগুলোতে নাহয় শাড়ি পরা যাবে। সবুজ রঙের টপটি হাতে বোনা সুতির কাপড়ে বানানো হয়েছে।
টপের ওপরে লাগানো হয়েছে নবজাত শিশুদের গায়ে দেওয়ার কাঁথা। যশোরে বানানো কাঁথা থেকে ছোট একটু অংশ কেটে বেল্টের মতো করে কাঁধের ওপর আটকে দেওয়া হয়েছে। এতেই পুরো টপে চলে এসেছে ভিন্নতা। সঙ্গে হ্যান্ডলুম কাপড়ে বানানো ব্যাগি স্টাইলের ঢোলা প্যান্ট। এটাকে পায়জামা স্টাইলের প্যান্টও বলা যেতে পারে।
পূজার আমেজ আনতে একদম নিচে দেওয়া হয়েছে ব্লকের কাজ। বেঁচে যাওয়া ব্লাউজের কাপড় থেকে বানানো হয়েছে পায়জামার ফিতার ট্যাসেল।
অষ্টমীর শুভ্রতায়
শুভ্রতা কি শুধু সাদাতেই থাকে? বরং গেরুয়া বা গাঢ় লালেও বেরিয়ে আসে মুখের উজ্জ্বলতা। আমার কাছে এটাও শুভ্রতা। চুল নিপাট আঁচড়ে পেছনে খোঁপা করা হয়েছে।
নবমীর জন্য
স্টাইলিংয়ের সময় আরেকটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। একটা সাজেই যেন সারাটা দিন পার করা যায়। মানাসে পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়। নবমীর জন্য যে শাড়িটি বানানো হয়েছে, সেটায় পুরোনো মালা শাড়ির অংশও আছে।
শাড়িটির কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তাই আঁচলটি কেটে নতুনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে শাড়িটিতে ব্লক প্রিন্টের কাজ আছে।
দশমীর ফিউশন সাজ
দশমীর জন্য ফিউশন স্টাইলে বানানো এই পোশাকের নাম ‘আবেগ ও বিদায়’। সপ্তমীর আরামের দিকটি দশমীতেও রাখতে চেয়েছি। সেদিন যেহেতু সিঁদুর খেলা হয়, মন্দিরা চক্রবর্তীর খালি পায়ে লাগানো হয়েছে আলতা, পরানো হয়েছে রুপার অ্যাংকলেট।
আর কোনো গয়না ব্যবহার করা হয়নি। সুতির কুর্তার ওপর আছে ব্লকের খাড়ি কাজ। স্কার্টেও সেই একই খাড়ি কাজের ছোঁয়া। মেকআপ এখানেও বেশ কম।
সাদামাটা গয়নায়
সাজগুলোতে গয়না হিসেবে বেলি ফুলের মালা, লাল সুতা এবং রুদ্রাক্ষের মালা ব্যবহার করা হয়েছে। আমার মনে আছে, আমাদের ছোটবেলায় শরৎকাল বেশ ঠান্ডা ছিল। অস্বাভাবিক উষ্ণায়নের কারণে এই সময়টায় এখন গরমই থাকে।
কিন্তু পূজার জন্য জমকালো আয়োজনই যেন মানায়। কোনো উৎসবের সময়ই সাদামাটা শাড়ি বেছে নেওয়া হয় না। জরির কাজ থাকবেই কিছুটা। আমার কাছে মনে হয়, পূজার সময় লাল রঙের ব্যবহার হবেই।
উজ্জ্বল রং আর জরির কাজের সঙ্গে বেশি অলংকার যুক্ত করলে এই আবহাওয়ার জন্য অতিরিক্ত মনে হবে। এই চিন্তা থেকেই স্টাইলিংয়ে অলংকারের পরিমাণ রাখা হয়েছে কম।
পোশাক নকশা করার সময় চিন্তায় থাকে সহজাত আর আমাদের আঞ্চলিক উপকরণের ব্যবহার। পোশাক নিয়ে স্টাইলিং করার সময় স্বাধীনতা থাকাটা আবশ্যক। যেমন একটা কুর্তা চাইলে ডেনিমের সঙ্গেও পরা যাবে, স্নিকার্স বা মোজা দিয়েও মানাবে, আবার আলাদা লম্বা পোশাক হিসেবেও পরা যাবে। মানে এক পোশাকে থাকবে নানা রকম সম্ভাবনা।
লেখক: মানাস–এর স্বত্বাধিকারী এবং ডিজাইনার
অনুলিখন: রয়া মুনতাসীর