মনিকা লিউনস্কি কি এবার ঝড় তুলতে পারবেন তরুণদের মনে?
বয়স ৫০ পেরিয়েছে। তবে এখনো তিনি তরুণদের ক্রাশ। বিশেষ করে মার্কিনদের কাছে এখনো তুমুল জনপ্রিয় মনিকা লিউনস্কি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসার আগে আন্তর্জাতিকভাবে তিনিই প্রথম সাইবার নির্যাতনের বলি বলে মনে করেন কেউ কেউ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিল ক্লিনটনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের তৎকালীন ইন্টার্ন মনিকা লিউনস্কির যৌন কেলেঙ্কারির বিষয়টি দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট সেই মনিকাকে এবার নির্বাচনের কাজে যুক্ত করেছে জনপ্রিয় মার্কিন ফ্যাশন ব্র্যান্ড রিফরমেশন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে গত নির্বাচনে প্রচুর মার্কিন তরুণ ভোটার ভোট দিতে যাননি। আপাতদৃষ্টিতে এসব নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলেও মনে হয় না। তাই ফ্যাশন ব্র্যান্ড রিফরমেশন-এর মডেল হিসেবে আসন্ন নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছেন মনিকা। যেখানে রিফরমেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ভোটডটওআরজি’।
ভোটডটওআরজি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম, অলাভজনক, নির্দলীয় প্ল্যাটফর্ম; এখানে ভোটার নিবন্ধন করা হয়, পাশাপাশি নির্বাচনে মানুষের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মতো উদ্যোগ নিয়েও কাজ চলে। লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক নামী ফ্যাশন ব্র্যান্ড রিফরমেশন ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় নাম। অ্যাডেল, টেলর সুইফট ও জিজি হাদিদের মতো তারকারা এই ব্র্যান্ডের ভক্ত।
মনিকা লিউনস্কি রিফমেশনের যেসব পোশাক পরেছেন, সেসব তাদের নতুন সংগ্রহ। যা এরই মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কাজের জায়গায় পরিধেয় এসব পোশাকের একটি ঘিয়ে রঙের ট্রাউজার স্যুট। ক্ল্যাসিক কাটের রিলাক্স ব্লেজারের সঙ্গে যেখানে মনিকা পরেছেন মাসন প্যান্ট।
আরেকটি লুকে মনিকা পরেছেন চামড়ার কালো ট্রেঞ্চ কোট। যেখানে কোমরে একটা ওভারসাইজ বেল্ট আছে। ডাবল ব্রেস্টেড এই কোটের সামনের অংশে বড় বড় বোতামের নকশা করা।
চেরি লাল রঙের ফ্লেয়ার্ড মিডি স্কার্ট পরা মনিকাকে দেখলে যে কেউ কম বয়সের তরুণী ভেবে ভুল করবেন। এই পোশাকের সঙ্গে মেসি চুলে আত্মবিশ্বাসী এক নারী আপনার নজর কাড়বেই।
ভোটে তরুণদের টানতে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে রিফরমেশন-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে মনিকা বলেছেন, ‘ভোট হলো আমাদের শক্তি। ভোট দেওয়া মানে আমাদের মতামত প্রকাশ করা। ভোট হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে অর্থবহ ও শক্তিশালী অংশ। তাই ভোটের ব্যাপারে তরুণদের উদাসীনতা এ বছরের নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে।’
রিফরমেশন যে বেশ শক্তভাবেই কাজ করছে মনিকার সঙ্গে, সেটা তাদের ওয়েবসাইটে গেলেও যে কেউ বুঝতে পারবেন। সেখানে মনিকার ফটোশুট করা পোশাকগুলোর পাশে চমৎকার দুটি লাইনে লেখা—মনিকা ও ভোটডটওআরজির সঙ্গে যৌথভাবে আমরা আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে আপনি একটা শক্তি দেখানোর সুযোগ পেয়েছেন। তাই এ বছর আপনার ভোট দেওয়া জরুরি।
রিফরমেশনের ওয়েবপেজ থেকে সরাসরি চলে যাওয়া যাবে ভোটডটওআরজির নিবন্ধন সাইটে। সেখানে গিয়ে টুকটাক তথ্য দিয়ে যেকোনো মার্কিন তরুণ ভোটের জন্য নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে ফেলতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, ভোটডটওআরজি যেন নিবন্ধনের কাজটি নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে জন্য রিফরমেশনের এই পোশাকের সংগ্রহের বিক্রি থেকে একটা অংশ এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিচ্ছে ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি।
ফ্যাশন ব্র্যান্ডের এই ক্যাম্পেইনে কী কাজ হয়
গ্রাহক হারানোর ভয়ে আগে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের রাজনৈতিক ইস্যু থেকে দূরে রাখত। কিন্তু গ্রাহকদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসে। ২০২০ সালে ‘ভোগ বিজনেস’ একটি জরিপ চালায়। সেখানে দেখা যায় ‘টিন ভোগ’-এর অর্ধেকেরও বেশি পাঠক নির্বাচনে আগ্রহ বাড়াতে এ ধরনের প্রচারমূলক ক্যাম্পেইনকে সমর্থন করেন। সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, ৬১ শতাংশ পাঠক মনে করেন, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসাটা ফ্যাশন এবং বিউটি ব্র্যান্ডগুলোর দায়িত্ব।
নব্বইয়ের দশকের শেষ ও ২০০০ সালের শুরুতে জন্ম নেওয়া মার্কিনদের জন্য ২০২৪ সালের নির্বাচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া তরুণদের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি তরুণ এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য হয়েছেন। আবার যাঁরা ভাবছেন যে ৫০ বছর বয়সী মনিকা আদৌ তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে পারবেন কি না, তাঁরা চাইলে রিফরমেশনের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের কমেন্টগুলো পড়ে আসতে পারেন। সেখানে তরুণদের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে রিফরমেশন ক্যাম্পেইন কতটা সাড়া ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন হতে এখনো প্রায় আট মাস বাকি। এ সময়ের মধ্যে রিফরমেশনের মতো আরও কিছু ব্র্যান্ড নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ভোটের প্রতি তরুণদের উদাসীনতা দূর করতে কাজ করবে বলে আশা করা যায়। যেমনটা দেখা গেছে ২০২০ সালের নির্বাচনের আগেও। সে সময় বিলাসবহুল ডিপার্টমেন্ট স্টোর ‘স্যাকস ফিফথ অ্যাভিনিউ’ নিউইয়র্কে তাদের ফ্ল্যাগশিপ শপে ভোটার নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করেছিল। আরেক মার্কিন ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘রালফ লরেন’ সে বছর ভোটের দিন কর্মীদের ছুটিও দিয়েছিল।