স্টাইলেও কি কম যায় লুঙ্গি ?

অনেক পোশাক হারিয়ে গেলেও দেশের প্রাচীন পোশাক হিসেবে লুঙ্গি টিকে আছে সগৌরবে। ঐতিহ্য আর আরামের পাশাপাশি স্টাইলেও কি কম যায় লুঙ্গি!

রুহিতপুরের তাঁতে বোনা লুঙ্গির চাহিদা দেশজুড়ে। রুহিতপুরে এক তাঁতির বাড়িতে তোলা এই ছবিতে মডেল হয়েছেন রাতুল, নীল ও রিপন
ছবি: কবির হোসেন

পুরুষদের ঘরের পোশাক হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় লুঙ্গি। অনেকে বাইরেও পরেন। তবে সাধারণভাবে নগরজীবনে তা কমই দেখা যায়। আবার ঘরের বাইরে লুঙ্গি পরে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই পোশাককে তুলেও ধরেন অনেকে। এই যেমন দেশি ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ মাশরাফি বিন মুর্তজা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার হোসেনকে দেখলেই বোঝা যায় লুঙ্গির জনপ্রিয়তা কমার নয়। দেশে-বিদেশে ঊর্ধ্বমুখী লুঙ্গির চাহিদা থেকেও বোঝা যাচ্ছে এর অবস্থান পাক্কা।

ফতুয়া ও লুঙ্গি—দুটোই আরামদায়ক পোশাক
ছবি: নকশা

ক্রিকেটার মাশরাফির কাছে বিশ্রামের সময় লুঙ্গি সবচেয়ে আরামদায়ক। তাঁর বিদেশসফরের আগে ব্যাগ গোছানো পর্বে অগ্রাধিকার পায় এই পোশাকটি। শুধু বাংলাদেশ না, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, জর্ডান, সোমালিয়া বা কেনিয়ার মতো দেশেও লুঙ্গি জনপ্রিয় পোশাক।

লুঙ্গির সঙ্গে মানায় পাঞ্জাবিও
ছবি: নকশা

ডিজাইনার ও গবেষক চন্দ্র শেখর সাহা মনে করেন, এই অঞ্চলে মুসলিম বণিকদের আগমনের সঙ্গে লুঙ্গির যোগসূত্র থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, এ দেশের চেক লুঙ্গির বিশেষত্ব ইন্দোনেশিয়াতে বেশি দেখা যায়। অনেক দেশে যেমন লুঙ্গির প্রচলন রয়েছে, তেমনি পরিচিতিতে বা পরার স্টাইলেও আছে ভিন্নতা। আমাদের চেনা লুঙ্গিই কোনো দেশে সারং, কোথাও আবার মুন্ডা বা কাইলি। লোঙ্গাই নামেও ডাকে কোনো কোনো দেশ।

এভাবেই লুঙ্গি তৈরির জন্য সুতা তৈরি হয়
ছবি: নকশা

কোনো দেশের মানুষ লুঙ্গি পরে গিট্টু দিয়ে, কোনো দেশে লুঙ্গির সঙ্গে বেল্টও পরা হয়। আবার অনেকে লুঙ্গির ভেতরে ওপরের পোশাকটি ঢুকিয়েও (ইন) পরেন। বাংলাদেশে পাঞ্জাবি, শার্ট বা টি-শার্টের সঙ্গে লুঙ্গি পরার চল আছে। গ্রামে আবার লুঙ্গির সঙ্গে শুধু একটা গামছা কাঁধেও বেরিয়ে পড়তে দেখা যায়। শহুরে জীবনে ঘরের পোশাক হিসেবেই লুঙ্গির কদর। তবে ব্যতিক্রমও আছে।

তাঁতে তৈরি লুঙ্গি দোকানে তোলা হয়েছে বিক্রির জন্য

বাংলাদেশের লুঙ্গির প্রধান বৈশিষ্ট্য চেক। ছোট, বড়, মাঝারি—চেকের রকমফের অনেক! তবে ফ্যাশনের নিয়ম মেনে পরিবর্তন এসেছে লুঙ্গির নকশাতেও। মূলত স্বাধীনতার পর থেকেই অল্পস্বল্প পরিবর্তন হয়েছে। ফ্যাশন হাউস আড়ং থেকে নব্বইয়ের দশকে ডিজাইনার চন্দ্র শেখর সাহা প্রথমবার কালো লুঙ্গিতে নতুন নকশা তৈরি করেছিলেন। চেক ছাড়াও লুঙ্গিতে ছাপা, বাটিক, টাই-ডাই, ব্লক, এমব্রয়ডারিসহ নানা কাজ দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে।

যান্ত্রিক তাঁতের প্রচলন বাড়ায় হাততাঁতে বোনা লুঙ্গি হয়ে পড়েছে কোণঠাসা। এক রকম নিয়ম করেই প্রতিবছর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁত। মেশিনে তৈরি লুঙ্গির উৎপাদন খরচ আর কর্মঘণ্টার সঙ্গে তাঁতের লুঙ্গির পাল্লা অনেকটা খরগোশের সঙ্গে কচ্ছপের দৌড়ের মতো। তবে তাঁতে তৈরি লুঙ্গির কদর সব সময় বেশি। অল্প পরিমাণে হলেও তাঁতে বোনা লুঙ্গি টিকে আছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মতো কয়েকটি অঞ্চলে।