লেগিংস যেভাবে মাল্টিবিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠল

২০২২ সালে দাঁড়িয়ে লেগিংসের বাজার ছিল ৩২ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারেরছবি: পেক্সেলস

লেগিংসকে শুরুতে কেউ সিরিয়াসলি নিতেই চাননি!

১৯৮০–এর দশকে লেগিংসের জনপ্রিয়তার পালে যখন হাওয়া লাগতে শুরু করে, ফ্যাশনিস্তা ও ফ্যাশনবোদ্ধাদের একটা বড় অংশ তখনো লেগিংস নিয়ে ঠাট্টা–তামাশা করত।

সে সময় কেউ কল্পনাও করেননি যে ২০২০–এর দশকের শুরুর দিকে এটা একটা মাল্টিবিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হবে। সত্যি বলতে, গত দশকে ফ্যাশনের শেষ হাসি এই লেগিংসই হেসেছে।

ব্যবসাবিষয়ক জনপ্রিয় গণমাধ্যম গ্রোথ মার্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে লেগিংসের বাজার ছিল ৩২ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের। ২০৩১ সালে গিয়ে তা দাঁড়াবে ৫৮ বিলিয়ন ডলারে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণমূলক জার্মান অনলাইন প্ল্যাটফর্ম স্ট্যাটিস্টা জানিয়েছে, কেবল ২০২৭ সালেই ৪০০ কোটি লেগিংস উৎপাদন করা হবে।

এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফ্যাশন ব্র্যান্ড কোনগুলো?

প্রাডা, অ্যাডিডাস, হার্মিস, লো, মোনক্লা ইত্যাদি। এসব ব্র্যান্ড এত দিন ঢিলেঢালা প্যান্ট তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে তারা নতুন সংগ্রহে যোগ করেছে লেগিংস।


‘পারফরম্যান্স ওয়্যার’–এ সীমাবদ্ধ নেই


লেগিংস এখন আর ‘পারফরম্যান্স ওয়্যার’–এ সীমাবদ্ধ নেই। লেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে তলে লেগিংস পরে ওপরে অন্য প্যান্ট বা স্কার্ট পরা হচ্ছে। আঁটসাঁট পোশাক যে নির্ভার আর আরামদায়কও হতে পারে, গত কয়েক দশকে সেটাই প্রমাণ করেছে লেগিংস।

এখন এটিকে ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। টেকসই পোশাক হিসেবেও লেগিংসের নামডাক আছে। বিভিন্ন ধরনের লেগিংসের সঙ্গে টপ, মিনি টপ, ক্রপ টপ, মিডি ড্রেস, ট্যাংক টপ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই দিব্যি মানানসই।

কামিজের সঙ্গেও দিব্যি মানানসই
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

শুরুতে রং ছিল একটাই—কালো। প্রায় সব রঙের পোশাকের সঙ্গেই মেয়েরা চুটিয়ে পরতেন কালো লেগিংস। এরপর এল নানা রঙের লেগিংস। আর ফ্যাশনে কয়েক বছর ধরে ট্রেন্ড হলো ছাপা রংচঙে নকশার লেগিংস। শুরুর দিককার লেগিংসগুলো কয়েকবার ধোয়ার পর এর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যেত। তবে এখন টেকসই হাইটেক ম্যাটেরিয়ালে তৈরি হচ্ছে লেগিংস।

লাক্সারি লেগিংস


একটা লেগিংসের জন্য আপনি পকেট থেকে কত টাকা খোয়াতে রাজি?

বিশ্বের লেগিংসের বাজারে রাজত্ব করা যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড টেক ভুয়োরির এক জোড়া লেগিংস কিনতে গুনতে হবে ৯৮ থেকে ১০৮ ডলার। তার মানে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যে কাপড় দিয়ে এই লেগিংস তৈরি, তার ৭৫ শতাংশই রিসাইকেল করা। তারপরও প্রায় ওজনহীন।

মোটামুটি হাজার দশেক টাকা খরচ করে আপনি মনমতো মানসম্মত লেগিংস কিনতে পারবেন। এই ব্র্যান্ডের অন্যতম স্বত্বাধিকারী সারা কার্লসন জানান, লেগিংসের জন্য সফলভাবে সঠিক ফেব্রিক তৈরি করাটাই তাঁদের সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিভিন্ন ধাপে সঠিক ফেব্রিকটা খুঁজে পেতেই সময় লেগেছে কয়েক বছর!

লেগিংসও এখন লাক্সারিওয়্যার
ছবি: সংগৃহীত

জার্মান ব্র্যান্ড হেই হানি ইয়েগার লেগিংসও বিশ্বখ্যাত। এখান থেকে এক জোড়া লেগিংস কিনতে আপনার পকেট থেকে চলে যাবে ১২০ ডলার (১৩ হাজার ১৪০ টাকা)। লেগিংস পরে যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করা যায়, যেকোনো কাজ করা যায়, সে বিষয়ই গুরুত্ব পেয়েছে তাদের কাছে। আর এটিই লেগিংসের ইএসপি।

কেবল অ্যাথলেজার ওয়্যার হিসেবে নয়, লিঙ্গনির্বিশেষে, ঘরে–বাইরে টাইট কমফোর্টওয়্যার হিসেবে কর্মক্ষেত্রে লেগিংসের বিকল্প পাওয়া ভার। এভাবেই লেগিংস নারী–পুরুষ, ধনী–গরিব, ঘরে–বাইরে পেয়েছে সর্বজনগ্রাহ্যতা!


সূত্র: সিএনএন