প্যাচওয়ার্কের পোশাক জোড়াতালি নয়, এটাই এখন শীতের ফ্যাশন

রঙিন টুকরা কাপড় একসঙ্গে জুড়ে তৈরি করা হয় প্যাচওয়ার্কের পোশাক। শীতের আবহাওয়ায় আরাম এবং রং দুটোই পাওয়া যায় এ ধরনের কাপড়ের তৈরি পোশাক থেকে।

প্যাচওয়ার্কের চাদরমডেল: স্নিগ্ধা, পোশাক: পিঁপড়া বিডি, সাজ: পারসোনা। ছবি: সুমন ইউসুফ

ছোটবেলায় মায়ের সেলাইকাজের পর পড়ে থাকা টুকরা কাপড় দিয়ে পুতুল বানাতেন মাহমুদা শান্তা। দেখতেন টুকরা কাপড় জোড়াতালি দিয়ে মা–ও তৈরি করছেন কাঁথা, টেবিল ম্যাট। বড় হয়ে পিনটারেস্ট দেখে জানলেন, নানা রঙের টুকরা কাপড় একসঙ্গে জুড়ে এভাবে কাপড় তৈরি করাকে বলে প্যাচওয়ার্ক।

আর সেই প্যাচওয়ার্ক কাপড় দিয়ে তৈরি হয় নানা পোশাক। ২০২৩ সালে নিজেই অনলাইনে প্যাচওয়ার্কের পোশাক বিক্রি করা শুরু করেন মাহমুদা শান্তা। আমাদের দেশে এ কাজে সাফল্য কতটুকু পাবেন, তা নিয়ে শুরুতে সন্দিহান ছিলেন মাহমুদা।

এখন তাঁর ‘পিঁপড়া বিডি’ পেজের পোশাক তৈরির জন্য কাজ করেন ৪০ জন কর্মী। ‘পিঁপড়ার ঢিবি’ নামে একটি বাড়ি করার স্বপ্ন দেখেন শান্তা, যে বাড়িজুড়ে থাকবে প্যাচওয়ার্কের নানা নিদর্শন।

আরও পড়ুন
মিলেনিয়াল থেকে জেন-আলফা—সবার পরনেই দেখা যাচ্ছে নানা রঙের প্যাচওয়ার্কের পোশাক
মডেল: স্নিগ্ধা, পোশাক: পিঁপড়া বিডি, সাজ: পারসোনা। ছবি: সুমন ইউসুফ

১৯৬০–এর দশকে হিপ্পি সংস্কৃতির হাত ধরে শক্তপোক্তভাবে ফ্যাশন জগতে ঢুকে পড়ে প্যাচওয়ার্ক। আর এখন তো বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে টুকরা কাপড়ের তৈরি পোশাক।

মিলেনিয়াল থেকে জেন-আলফা—সবার পরনেই দেখা যাচ্ছে নানা রঙের প্যাচওয়ার্কের পোশাক। ‎সাধারণত বর্গ, আয়ত ও ত্রিভুজাকার কাপড়ের টুকরা দিয়ে প্যাচওয়ার্ক করতে দেখা যায়।

তবে প্যাচওয়ার্কের কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম বা ব্যাকরণ নেই। যেকোনো রকমের যেকোনো আকারের কাপড়ের টুকরা দিয়েই করা যায় প্যাচওয়ার্ক। টুকরা কাপড় জোড়া দেওয়ার পর তার ওপর হাতে করা হয় কাঁথা সেলাই।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে পোশাককে টেকসই করতে প্যাচওয়ার্কের অপর পাশে জুড়ে দেওয়া হয় একরঙা কাপড়।

শাড়িতে এবং ব্লাউজে প্যাচওয়ার্কের কাজ
মডেল: স্নিগ্ধা, পোশাক: পিঁপড়া বিডি, সাজ: পারসোনা। ছবি: সুমন ইউসুফ

‎‎বিবিয়ানার স্বত্বাধিকারী লিপি খন্দকার বলেন, ‘একসময় গ্রামবাংলায় ব্যবহৃত অথবা নতুন কাপড় জোড়া দিয়ে সেলাই করে তৈরি করা হতো শীতে গায়ে দেওয়া কাঁথা।

আজকাল পুনর্ব্যবহার ও জিরো ওয়েস্টের ধারণা থেকে মানুষ আবার এই কাপড় জোড়া দেওয়ার ধারায় ফিরছে।

যেমন আমরা যারা পোশাক নিয়ে কাজ করি, টুকরা টুকরা অনেক কাপড় বেঁচে যায়। তখন সেই টুকরা কাপড়গুলো জোড়া দিয়ে প্যাচওয়ার্ক করা হয়।’

আরও পড়ুন

হরেক রকম নকশা ও রং প্যাচওয়ার্ককে দেয় বোহেমিয়ান এক অনুভূতি। বৈশ্বিক ফ্যাশনে প্যাচওয়ার্কের পোশাকের জন্য ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার জঁ পল গোতিয়ে, বেলজিয়ামের ফ্যাশন ডিজাইনার রাফ সিমন্স এবং জাপানি লেবেল খোকির কাজ বেশ প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশের বেশ কিছু ফ্যাশন হাউস ও ডিজাইনার প্যাচওয়ার্ক নিয়ে কাজ করে। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বরঙ, আফসানা ফেরদৌসী, খুঁত, ভারমিলিয়ন।

হরেক রকম নকশা ও রং প্যাচওয়ার্ককে দেয় বোহেমিয়ান এক অনুভূতি
মডেল: স্নিগ্ধা, পোশাক: পিঁপড়া বিডি, সাজ: পারসোনা। ছবি: সুমন ইউসুফ

‎ফ্যাশন ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসী বলেন, ‘পরিধানকারীর ব্যক্তিত্বে নতুন মাত্রা যোগ করে প্যাচওয়ার্ক। প্যাচওয়ার্ক শুধু টুকরা জোড়া লাগানো নয়, বরং ভিন্ন স্মৃতি, অনুভূতি ও সংস্কৃতির অংশগুলোকে একসঙ্গে করে একটি নতুন গল্প তৈরি করা।’

আজকাল শাড়ি, শাল, পায়জামা, মাফলার, বেল্ট ও গয়নায়ও মিলছে প্যাচওয়ার্কের কাজ। এ ছাড়া বিছানার চাদর ও টেবিল ক্লথেও প্যাচওয়ার্ক করতে দেখা যায়।

‎‎কাপড়ের পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতাকে ফুটিয়ে তোলা যায় বলে ডিজাইনাররা যেমন প্যাচওয়ার্ক নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন, তেমনি প্যাচওয়ার্ক করা নানা রঙের বাহারি পোশাকের দিকে ঝুঁকছেন একদল ক্রেতা।

এ ছাড়া পরিবেশসচেতন ফ্যাশনপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় পাকাপোক্ত জায়গা করে নিচ্ছে প্যাচওয়ার্ক।

আরও পড়ুন