ঈদের পাঞ্জাবিতে এবার কেমন নকশা চলছে
এবারের ঈদে ছেলেদের খাটো ও লম্বা দুই ধাঁচের পাঞ্জাবিতে প্রাধান্য পেয়েছে হাতের কাজ আর ছাপা নকশা। পাশাপাশি আছে এক রঙের পাঞ্জাবিও। সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে শোভা বাড়াবে হালকা ও ভারী নকশার কোটি।
এ বছর ঈদুল ফিতর হবে বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগের সময়টায় ভ্যাপসা গরমই বেশি থাকে। এবারের ঈদ ফ্যাশন তাই গ্রীষ্মকেন্দ্রিক। গায়ে চাপাতে হবে আরামের পোশাক। আমাদের দেশে ছেলে–বুড়ো সবার কাছেই ইদ পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবির আবেদন ও জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। পোশাকটির স্টাইল স্টেটমেন্ট বা পরার ধরনের প্রসঙ্গ উঠলে আমাদের চোখে ভাসে একই ধরনের চিত্র; সাদা বা যেকোনো রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে সাদা পায়জামা বা প্যান্ট এবং এক জোড়া স্লিপার। অনেকে একে ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে এই ধারার বাইরে এখন পাঞ্জাবিতেও এসেছে নানা বৈচিত্র্য। চলুন এবার কোন ধারাগুলো ট্রেন্ডি থাকবে, জেনে নেওয়া যাক।
গলার নকশা
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, কয়েক দশক ধরে ব্যান্ড কলারের পাঞ্জাবিই আমাদের দেশে জনপ্রিয়। আর তাই কলারেই সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। কয়েক বছর ধরে চলতি ধারায় কলার আর কাফ বা হাতায় নকশা করা একরঙা পাঞ্জাবি রয়েছে। কলার আর কাফের এই নকশারও রয়েছে রকমফের—এমব্রয়ডারি, জারদৌসি থেকে শুরু করে কাঁথাস্টিচ, ক্রুশকাঁটার কারুকাজও দেখা যায়। এ ছাড়া ভেলভেট বা ভিন্ন ধরনের ছাপা নকশার কাপড়ও জুড়ে দেওয়া হয় গলার নকশায় আর কাফে। ভিন্ন নকশার পাঞ্জাবি দিয়ে স্টাইল স্টেটমেন্টে নিজস্বতাও আনা যায়। যেমন কলারবিহীন বা গোলগলা, স্যাট কলার, কাবলি, হাইনেক, শাহি কলার পাঞ্জাবিও রয়েছে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর ঈদ সংগ্রহে। একসময় কলারবিহীন বা গোলগলা সাদা পাঞ্জাবিই ছিল ফ্যাশন, যা আবার ফিরে আসছে। তবে রঙে এসেছে পরিবর্তন। সাদার জায়গা দখল করেছে কমলা, হলুদ, গোলাপি, নীল, বেগুনির হালকা শেড। গরমে হালকা রঙের গোলগলা এই পাঞ্জাবিও যে কারও ঈদ লুকে আনবে ভিন্নতা।
ছাপা নকশায় বাড়তি কিছু
প্রায় এক দশক ধরে যেকোনো ধরনের পোশাকেই আধিপত্য ধরে রেখেছে ছাপা নকশা। পাঞ্জাবির ক্ষেত্রেও তা–ই। প্রিন্টের ডিজাইন সব সময়ই নির্ধারিত হয় আন্তর্জাতিক ফ্যাশন থেকে। যে কারণে তরুণদের মধ্যে প্রিন্টের জনপ্রিয়তা এত বেশি। বৈশ্বিক ধারায় গ্রীষ্মের সংগ্রহে এখন নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে টাইডাই, যা অনেক বেশি রঙিন। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বিশ্লেষকেরা বলছেন, রঙিন এই টাইডাই চলবে আরও কিছুদিন। ঈদের সংগ্রহেও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। পুরো পাঞ্জাবিতে ছাপা নকশা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তবে প্রতিবারই অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন দেখা যায়। এ বছর নকশা হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে ফুলেল মোটিফ ও জ্যামিতিক মোটিফের নানা ধরন। এর বাইরে ট্রপিক্যাল বা লতাপাতা, শাখা-প্রশাখাজাতীয় নকশাও থাকবে। পাঞ্জাবিতে আরও একধরনের ছাপা নকশা দেখা যায়। মূলত বুননের মাধ্যমে এটা করা হয়। অর্থাৎ, সুতা থেকে কাপড় বুননের সময়ই নকশা সম্পন্ন করা হয়। এটির বেলায়ও মোটিফ একই রকম।
পাঞ্জাবির কাটের নাক–নকশা
উৎসবের দিনের সাজটা একটু ভিন্ন হবে, এমন চাওয়া থাকে সবারই, সঙ্গে চাই আরাম। এত চাওয়া একসঙ্গে পূরণের জন্য এখন ছেলেদের পোশাকের কাট এবং রং নিয়েও ডিজাইনাররা অনেক ধরনের কাজ করে থাকেন। অনেকে আবার শুধু চলতি ধারায় গা ভাসাতে নারাজ। তাঁরা চান ঐতিহ্য ও আধুনিকতাকে একসঙ্গে ধারণ করতে। তাঁদের জন্য সোজা কাটের একরঙা পাঞ্জাবিতে শুধু বুকে হালকা কাজ হলে হবে না; চাই কাট, প্যাটার্ন ও নকশার সমন্বয়ে একটি পছন্দের পরিধেয়। এ বিষয়ে ডিজাইনার সাফিয়া সাথি বলেন, ছেলেদের পাঞ্জাবির ডিজাইনে সবচেয়ে বেশি নতুনত্ব এসেছে। আগে উৎসবের পাঞ্জাবিতে শুধু বুকে এবং হাতায় বিভিন্ন ধরনের নকশার দেখা মিলত। কিন্তু এখন পুরো পাঞ্জাবিতে দেখা যায় নকশা। শুধু এমব্রয়ডারি বা হাতের বুননের নকশা নয়, পাথর এবং আয়নাও দেখা যায়। কয়েক বছর আগেও হয়তো আমাদের দেশের ছেলেরা এ ধরনের নকশার পাঞ্জাবি গায়ে চাপাতেন না। কিন্তু এখন ডিজাইনারদের নিরীক্ষায় পাঞ্জাবির উপস্থাপনায় এসেছে পরিবর্তন। যে কারণে যেকোনো উৎসবে নকশাদার পাঞ্জাবি পরতে ছেলেরাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ ছাড়া উৎসবের পাঞ্জাবির সঙ্গে দেখা যাবে কটির ধারা। হালকা ওজনের নকশাদার বা ছাপা নকশার কটি দেখা যাবে পাঞ্জাবির সঙ্গে।
রঙের বাহার
নকশাদার পাঞ্জাবির পাশাপাশি ছেলেরা এখন নানা ধরনের উজ্জ্বল রংও বেছে নিচ্ছেন। ট্রেন্ডে রয়েছে সাদা, কমলা, লাল, হলুদ, গোলাপি, নীল, ধূসর, বাদামি, সবুজ, জলপাই, বেগুনি, ল্যাভেন্ডার ইত্যাদি রং এবং এর বিভিন্ন শেড। এ ছাড়া মিশ্র রং হিসেবে রয়েছে ক্রিমসন রেড, বার্ন অরেঞ্জ, পিচ, লাইট পিংক, অ্যাকুয়া গ্রিন, মাস্টার্ড ইয়েলো ইত্যাদি। রংগুলো চোখের জন্য যেমন আরামদায়ক, তেমনি সময় ও উৎসব উপযোগী। ঈদের পাঞ্জাবির দৈর্ঘ্য দেখা যাচ্ছে হাঁটু পর্যন্ত। কিছু ডিজাইনার ও ফ্যাশন ব্র্যান্ড আরও কম দৈর্ঘ্যের পাঞ্জাবিও রেখেছে তাদের ঈদ সংগ্রহে। কাপড় নির্বাচন করা হয়েছে পরিবেশ, আবহাওয়া ও আরামের বিষয়টি মাথায় রেখে। এই তালিকায় রয়েছে সুতি, লিনেন, টিস্যু, জর্জেট, সিল্ক, ডুপিয়ান সিল্ক, হাফ সিল্ক, সামু সিল্ক ইত্যাদি।
পায়জামা না প্যান্ট?
পাঞ্জাবির সঙ্গে বটম বা পায়জামা কী হবে, এই নিয়ে অনেকে বেশ চিন্তায় থাকেন। পাঞ্জাবির সঙ্গে সাদা পায়জামা ক্ল্যাসিক লুকেরই অংশ। তবে যাঁরা এর বাইরে নিজেদের সাজাতে চান, তাঁরা বেছে নিতে পারেন ভিন্ন কিছু। উৎসবের দিন যদি রোদের তীব্রতা বেশি থাকে, তবে আরামদায়ক ও ট্রেন্ডি পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবির সঙ্গে পরতে পারেন জগার। বিশেষ করে তরুণেরা এটি বেছে নিতে পারেন। কেননা তাঁরা উৎসবের দিনও ঘুরে বেড়াতে চান। তাঁদের জন্য একটু সহজ থাকাটা জরুরি। তবে পাঞ্জাবির সঙ্গে জগারের সমন্বয় কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে নিজের ওপর। স্ট্রিট ফ্যাশনের নতুন সংস্করণ হিসেবে পাঞ্জাবির সঙ্গে এটি পরা যেতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে ক্যাজুয়াল স্ট্রিট স্নিকার কিংবা জিম স্নিকার। জগারে অস্বস্তি হলে ডেনিম বা চিনোস প্যান্ট বেছে নেওয়া যেতে পারে। সঙ্গে লোফার বা স্নিকারস বেশ মানাবে। বেশি আরামের জন্য পরা যেতে পারে লিনেন ট্রাউজার। সাধারণত পাঞ্জাবির সঙ্গে পায়জামা, চুড়িদার পায়জামা, চিনোস কিংবা ডেনিম ট্রাউজার বেশি বেছে নিতে দেখা যায়। তবে লিনেন ট্রাউজারও বেছে নেওয়া যায়। কারণ, লিনেন গরমকালে পরার জন্য খুব আরামদায়ক, ফ্যাশনের দিক থেকেও দৃষ্টিনন্দন। সঙ্গে পরতে পারেন লোফার কিংবা ট্যাসেল সু, যা দেবে অভিজাত রূপ।
পুরোনো স্টাইল মেনে চলতে চাইলে আছে সোজা কাট বা প্যান্ট কাটের পায়জামা, যা একটু কম দৈর্ঘ্যের বা হাঁটু পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের পাঞ্জাবির সঙ্গে দারুণ মানায়। যেকোনো কিছুর সঙ্গে বা যেকোনো ধরনের পাঞ্জাবি গায়ে চাপানোর আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। যেমন খেয়াল রাখতে হবে, পাঞ্জাবির হাতা যেন কবজির ওপরে না ওঠে। পাঞ্জাবির দৈর্ঘ্য অতিরিক্ত বেশি বা কম না হয়। কারণ, নির্দিষ্ট মাপের পাঞ্জাবি লুককে স্বাভাবিক রাখে এবং আকর্ষণীয় লাগে। পাঞ্জাবির সঙ্গে প্যান্ট যেন অতিরিক্ত লম্বা না হয়। জুতার রং যেন মানাসই হয়।