মেসির শরীরের ট্যাটুগুলোর কোনটির কী মানে

লিওনেল মেসি কিন্তু ট্যাটু করাতে খুবই ভয় পেতেন। যেচে পড়ে সুইয়ের নিচে শরীর দিয়ে নিখুঁত নকশা করানোয় তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না। কীভাবে আগ্রহ জন্মাল? বার্সেলোনার হয়ে খেলার সময় ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার দানি আলভেজকে দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। তবু ভয় যাচ্ছিলই না। মনে মনে তিনিও ট্যাটু করাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু ভয়ে আবার পিছিয়ে পড়ছিলেন। সেই সময় এগিয়ে আসেন তৎকালীন প্রেমিকা ও বর্তমান স্ত্রী, মেসির তিন সন্তানের মা আন্তোনেলা রোকুজ্জো। রোকুজ্জোই আগে ট্যাটু করেন আর মেসিকে জানান, খুব একটা ব্যথা লাগে না। এরপর মেসিও সাহস করে প্রথম ট্যাটুটা করান। এরপর আর কোনো থামাথামি নেই। একে একে ১৮টা ট্যাটু করিয়েছেন মেসি। আর প্রতিটাই ‘একান্ত ব্যক্তিগত’। জেনে নেওয়া যাক, এগুলোর ভেতরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ট্যাটুর মানে।

১. মায়ের মুখ

‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসেবে মেসির নামডাক আছে। তাঁর প্রথম ট্যাটুটা বাঁ কাঁধের নিচে তাঁর মায়ের প্রতিকৃতি। মেসি ‘মাম্মা’জ বয়’। মেসি মনে করেন, তাঁর মা তাঁর সফলতার সঙ্গী। আজ তিনি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছেন, এটা সম্ভব হয়েছে মায়ের কারণে। এ কারণেই মাকে সব সময় সঙ্গে রাখতে তিনি মায়ের হাসিমুখ এঁকেছেন। মা সেলিয়া আর ভাই মাতিস—এ দুজন মেসির সব জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের দেখভাল করেন। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত লিও মেসি ফাউন্ডেশনের সব কার্যক্রম এ দুজনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

মেসির প্রথম ট্যাটুটা বাঁ কাঁধের নিচে তাঁর মায়ের প্রতিকৃতি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

২. বড় পুত্র থিয়াগোর হাত

২০১২ সালের ২ নভেম্বর প্রথমবার বাবা হন মেসি। সে সময় ট্রেনিং ফেলে আন্তোনেলার পাশে ছিলেন মেসি। সন্তানের জন্মের পর ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ। সৃষ্টিকর্তা আমাকে এক পুত্রসন্তান উপহার দিয়েছেন। এত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি যে পৃথিবীর সবাইকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে।’ কিছুদিন পরই ছোট্ট থিয়াগোর দুই হাতের ছাপ পায়ে ট্যাটু করেন মেসি।

সন্তানের জন্মের পর মেসি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ’
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

৩. থিয়াগোর নাম

মেসি যখন বাঁ পায়ের গোড়ালির একটু ওপরে পেছন দিকে থিয়াগোর দুই হাতের ছবি ট্যাটু করান, তখন কিছু বিতর্ক রটেছিল। অনেকেই বলাবলি করছিলেন, থিয়াগো নয়, সেটা নাকি ম্যারাডোনার হাত। ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’, যা দিয়ে তিনি বিশ্বকাপে গোল করেছিলেন। বিতর্কের অবসান ঘটাতে মেসি ইংরেজিতে থিয়াগোর নামও ট্যাটু করান।

বিতর্কের অবসান ঘটাতে ইংরেজিতে থিয়াগোর নামও ট্যাটু করান মেসি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

৪.  ফুটবলের ট্যাটু

সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন মেসি মনে করেন, তিনি যদি ফুটবল খেলতে না পারতেন, তাহলে নাকি তাঁকে না খেয়ে মরতে হতো। কেননা, ফুটবল খেলা ছাড়া আর কিছুই নাকি তিনি পারেন না। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই আর কাজিনদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। ফুটবলই তাঁকে এই জীবন দিয়েছে। সেই ফুটবলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই মেসি পায়ে ফুটবলের ট্যাটু করান।

ফুটবলই মেসিকে দিয়েছে এক রাজকুমারের জীবন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

৫. হাতে যীশু

অনেকেই সংবাদ সম্মেলনেই মেসিকে পেশাগত প্রশ্ন রেখে ব্যক্তিজীবন আর ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করা হত। কিন্তু ব্যক্তিজীবন আড়ালে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা অন্তর্মুখী মেসি সেসব নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতেন না। তাই গুজব ছড়িয়েছিল, মেসি নাকি ‘অবিশ্বাসী’। কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না। নীরবে তার জবাব দিতেই হাতে যীশুর ট্যাটু করান মেসি।

নীরবে জবাব দিতেই হাতে যীশুর ট্যাটু করান মেসি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

৬.  পদ্মফুল

যীশুর নীচেই শোভা পাচ্ছে পদ্মফুল। কে না জানে, মেসি আর্জেন্টিনার ছোট্ট শহর রোজারিওতে জন্ম নেন। যে কোনো জায়গায়ই যে কারো জন্ম হতে পারে, এই বিষয়টি তুলে ধরতেই হাতে পদ্মফুলের ট্যাটু। অনেকটা ‘গোবরে পদ্মফুল’ বাগধারার মতো। এই পদ্মফুলের অনেক মানে। পুনর্জন্ম, নতুন শুরু, শুদ্ধতা আর আলোকবর্তিকা— এমনসব মানে বহন করে পদ্মফুল।

পুনর্জন্ম, নতুন শুরু, শুদ্ধতা আর আলোকবর্তিকা— এমনসব মানে বহন করে পদ্মফুল
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

৭. রাজার মুকুট

পদ্মফুলের ডানপাশে রাজার মুকুটের ট্যাটু আঁকা। প্রায় একই রকম রাণীর মুকুটের ট্যাটু আছে স্ত্রী রোকুজ্জোর বাহুর ঠিক একই জায়গায়।

পদ্মফুলের ডানপাশে রাজার মুকুটের ট্যাটু আঁকা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রায় একই রকম রাণীর মুকুটের ট্যাটু আছে স্ত্রী রোকুজ্জোর বাহুর ঠিক একই জায়গায়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

৮. প্রেমিকার চোখ  

এছাড়া মেসির হাতে শোভা পাচ্ছে স্ত্রী আন্তোলেনা রোকুজ্জোর চোখ। প্রথমবার রোকুজ্জোর চেখের দিকে তাকিয়েই নাকি নিমিষে মন দিয়ে ফেলেছিলেন মেসি। সেই চোখটাই এঁকেছেন তিনি। যখন ট্যাটু করেছিলেন, তখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আই ডু’ বলেননি এই জুটি। যদিও ততদিনে তাঁর দুই পুত্রের বাবা–মা।

মেসির হাতে শোভা পাচ্ছে স্ত্রী আন্তোলেনা রোকুজ্জোর চোখ
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

৯. বিশাল এক ঘড়ি

মেসি মনে করেন, জীবনে সময়ের কাজ সময়ে করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। সেটিই মনে করিয়ে দিতে হাতে এঁকেছেন বিশাল এক ঘড়ি।

মেসি মনে করেন, জীবনে সময়ের কাজ সময়ে করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

১০. প্রেমিকার ঠোঁট

এছাড়া মেসির শরীরে আছে রোকুজ্জোর ‘কিসিং লিপ’ এর ছবি। প্রেমিকা বলা হচ্ছে, কেননা মেসি যখন এই ট্যাটু করিয়েছিলেন, তখনো তাঁরা বিয়ে করেননি।

মেসির শরীরে আছে রোকুজ্জোর ‘কিসিং লিপ’ এর ছবি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে