নাজিফা তুষির কোন ভাবনা থেকে পিঠে উঠে এল সাপ, পেছনের গল্প দেখুন ভিডিওতে

গুলতি চরিত্রের বিষণ্নতা ও রহস্যময় দিকটি পোশাকের কালো রঙের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন ডিজাইনার ফায়জা আহমেদ
ছবি : কবির হোসেন

বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। সামনে ফুচকা আর চা। এই আবহাওয়াতেই শুরু হলো পোশাক নিয়ে আমাদের আড্ডা। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০২২ অনুষ্ঠানে অনেক অভিনেত্রী নতুন পোশাক বানিয়ে থাকেন। কয়েক ঘণ্টার অনুষ্ঠান হলেও এর পেছনে থাকে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের পরিশ্রম। একটি পোশাক বানানোর পেছনে থাকে নানা ধরনের চিন্তা আর ঘটনাও। অভিনেত্রী নাজিফা তুষি এ বছরের অনুষ্ঠানের জন্য চাচ্ছিলেন ভিন্ন কিছু। ফ্যাশন হাউস মানাসের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার ফায়জা আহমেদ তুষিকে দিয়েছেন সেই ভিন্ন সাজই। বিষয়টি জানার জন্যই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে নকশা দল গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল মানাসে। অপেক্ষা চলছিল নাজিফা তুষির আসার।

তবে তিনি আসার আগেই বেশ নাটকীয় সব পরিস্থিতির তৈরি হয়ে গিয়েছিল সেখানে। তুষির পিঠের পেছনে যে সাপ থাকবে, সেটির সব কটি চেইন জট পাকিয়ে গোল হয়ে বসেছিল। সেটা ছাড়াতেই সবার নাজেহাল অবস্থা। এর মধ্যেই ফ্যাশন ডিজাইনার ফায়জা আহমেদের কাছ থেকে জানছিলাম পোশাকের পেছনের না-জানা সব তথ্য।

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০২২ অনুষ্ঠানের রেড কার্পেটে নাজিফা তুষি
ছবি : কবির হোসেন

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০২২ অনুষ্ঠানের জন্য নাজিফা তুষি বেছে নিয়েছেন ‘হাওয়া’র গুলতি চরিত্রটি। ফায়জা আহমেদ জানালেন, ‘নাজিফা তুষি আমাকে ফোন দেয় দুই মাস আগে। প্রথমেই আমাকে বলেছিল, সে এখনো গুলতি চরিত্র থেকে বের হতে পারেনি। বিষয়টি আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। আমরা যখন একটা পোশাক বানাই কারও জন্য, অনেক কিছু বিবেচনায় রাখি।

যে পরবে সে কী চায় এবং আমি কী দিতে পারব। নাজিফা তুষি যেহেতু গুলতি চরিত্রেই থাকতে চাচ্ছিলেন, সেই চরিত্রের কোনো না কোনো উপস্থাপনা থাকতে হবে পোশাকে, কিন্তু স্টাইলিশভাবে। পুরো বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।’ অনেকগুলো কফি মিটিংয়েও বসতে হয়েছে নাজিফা তুষি ও ফায়জা আহমেদকে। প্রতিবারই কিছু না কিছু যোগ-বিয়োগের বিষয় এসেছে সাজে।

গুলতির শাড়ির রং ছিল বেগুনি। সেখান থেকে পদ্মফুলের রং নেওয়া হয়েছে
ছবি : কবির হোসেন

পোশাকটির পেছনের ভাবনায় সময় নেওয়া হয়েছে অনেক। এই চরিত্রের বিষণ্নতা ও রহস্যময় দিকটি পোশাকের কালো রঙের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন ফায়জা আহমেদ। তবে তিনি চেয়েছেন, তুষির ব্যক্তিত্বও যেন প্রকাশ পায় সাজে, গুলতির চাপে যেন তুষি হারিয়ে না যায়। নাজিফা তুষি বলেন, ‘ফায়জা আপু যখন আমাকে বললেন, পেটিকোট তো সব সময় লুকিয়ে রাখা হয়, তুমি ওটাকে বের করে আনো। যেহেতু আমি বেদেনি ছিলাম, শাড়িটাকে একটু উঁচু করে পরার সুযোগ ছিল। গুলতির শাড়ির রং ছিল বেগুনি। সেখান থেকে পদ্মফুলের রং নেওয়া হয়েছে। আর সেই ফুল থেকেই মনসা উঠে গেছে আমার পাঠে। পিঠের সাপটি ধাতব হওয়ায় ঠিকমতো বসারও একটি বিষয় আছে। কয়েকবার এটা এই কারণে ট্রায়ালও দিয়েছি। এই সাপই হবে আমার সাজের মূল অলংকার।’

মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো সাজে যেন সামঞ্জস্য থাকে সে বিষয়টি খেয়াল রেখেছেন ফায়জা আহমেদ। তুষির পায়ে কালো রঙের জাপানিজ জুতা পরার পরামর্শ তিনিই দিয়েছেন। পুরো সাজে কোন জায়গায় তুষিকে আনা যাবে, আর কোন জায়গায় গুলতিকে, বিষয়টি বেশ ভেবেচিন্তেই বের করেছেন। এই পোশাকের সঙ্গে চুল একদম নিপাট করে আঁচড়ে বেণি করেছেন তুষি। এতে করে বেদেনির লুক এসেছে আবার স্টাইলিশভাবটাও আছে। পিঠের ধাতব সাপটি থেকে বেশ কয়েকটি চেইন গিয়ে আটকে গেছে মূল ব্লাউজের সঙ্গে। চেইনগুলো যথাসম্ভব চিকন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। শাড়িটি পরাও হয়েছে একদম ভিন্নভাবে।

বেদেনির লুকে স্টাইলিশভাবটাও এসেছে
ছবি : কবির হোসেন

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০২২ অনুষ্ঠানে অনেকে বুঝতেও পারেননি যে পদ্মফুলসহ পেটিকোট বের হয়ে আছে। সবকিছু মিলিয়েই দুটি চরিত্র একটি মানুষের মাধ্যমেই সেদিন প্রকাশিত হয়েছিল এবং নজর কেড়েছিল শত মানুষের ঝলমলে পোশাকের মধ্যে থেকেও।