আলো–ছায়ার শিল্পী চঞ্চল মাহমুদ
রাজধানীর ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ২০ মে রাতে মারা গেছেন দেশের স্বনামধন্য আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ। ৬৭ বছর বয়সী চঞ্চল মাহমুদ দীর্ঘ দিন হৃদ্রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সাদামাটা জীবনযাপনে কালো রংয়ের মধ্যেই যেন ছিল তাঁর বসবাস। ফ্যাশন ফটোগ্রাফির জন্য পরিচিতি পেলেও ভালোবাসতেন শিশু ও প্রকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলতে। প্রথম আলোর ক্রোড়পত্র ‘অধুনা’য় ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ছাপা হয়েছিল তাঁর ‘স্টাইল’। প্রয়াত আলোকচিত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
‘আমরা আঁকি তুলি দিয়ে। তুমি আঁকবে আলো দিয়ে।’ চিত্রশিল্পী রফিকুন্নবীর এই একটি কথাই জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছিল। আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদের ছবি তোলার যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই থেকে। সেটা ১৯৭৫ সালের ঘটনা। আজ অবধি প্রতিদিনই ক্যামেরার ক্লিক শব্দটি তাঁকে প্রেরণা জোগায়। ছবি তোলার কাজটি শুরু করেছিলেন শখের বশেই। শখটাই পরে রূপান্তরিত হয়েছে পুরোপুরি পেশায়।
কর্মক্ষেত্রের আনাচ-কানাচে সব জায়গায়ই কালোর ছোঁয়া। ক্যামেরা, চেয়ার, স্পিকার, টেলিভিশন, টেলিফোন সব কিছুই কালো রঙের। কাছের মানুষেরা জানেন, পোশাক বলতে কালো রংটিকেই বোঝেন। এর বিভিন্ন শেডের পোশাক পরেন তিনি। কিন্তু কালো রংটি চঞ্চল মাহমুদের পছন্দের রং নয়। তাহলে কেন সারা দিন কালোর মধ্যেই তাঁর বসবাস? জানতে চাইলে বলেন, ‘এটি আমার কষ্টের রং। আমার নীরব প্রতিবাদের ভাষা। আমি বঙ্গবন্ধুকে অনেক ভালোবাসি। তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আমি কালো পরে থাকি। আমাকে সবাই কালো রঙের জিনিসই উপহার দিয়ে থাকেন।’
ভালোবাসেন শিশু ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলতে। কখনো যদি মনমতো জায়গা না পান, ক্যামেরা হাতে ছুটে বেড়ান ফুল, পোকামাকড়ের পেছনে। অবসর নেই বলে জানালেন চঞ্চল মাহমুদ। সারাক্ষণ কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকতেই পছন্দ করেন। খুব সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি। ভাত, ডালের চচ্চড়ি, বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা, সরষে ইলিশ, মটরশুঁটি দিয়ে কই মাছ আছে তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায়। আবার স্যুপ ও পিৎ জাও খান। ভালোবাসেন রান্না করতে। নিজের সব কাজ নিজে করতে পছন্দ করেন।
নিজের শার্টের নকশা নিজে করেন। সাফারি ধরনের পোশাক বেশি পরা হয়। পছন্দের সুগন্ধি হলো কেলভিন ক্লেইন, ফারেন হাইট, গুচি। নিভিয়া লোশন ব্যবহার করেন ৫৪ বছর ধরে। মাথায় বিভিন্ন নকশার টুপি পরেন। সংগ্রহে আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সোনার প্রলেপ দেওয়া ৬৪টি ঘড়ি। হ্যারোটসের ব্লেজার ও মোজা পরেন। জুতার ক্ষেত্রে বেছে নেন মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, গুচি, অ্যাডিডাস ও অ্যাপেক্সকে। প্রতিদিন
রাতে মার্শাল আর্ট অথবা যুদ্ধের ওপর নির্মিত সিনেমা দেখেন। পছন্দ করেন পুরোনো দিনের গান।