যেভাবে ডায়ানার কালো পোশাকটি হয়ে দাঁড়াল প্রতিশোধের প্রতীক

১৯৯৪ সালের জুনের এক বিকেল। গাড়ি থেকে নামলেন এক ‘রাজকুমারী’। গন্তব্য লন্ডনের কেনসিংটন গার্ডেনের সার্পেন্টাইন গ্যালারিতে আয়োজিত ভ্যানিটি ফেয়ারের একটি পার্টি। মুহূর্তেই সব গণমাধ্যম, ক্যামেরা তাঁর দিকে ঘুরে গেল। তিনি প্রিন্সেস ডায়ানা। পরনে কাঁধখোলা, আঁটসাঁট একটা কালো সিল্কের ককটেল ড্রেস। পরবর্তী বেশ কিছুদিন রাজপরিবারের নানা বিষয়–আশয় ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠল সেই কালো পোশাক। বিশ্ব গণমাধ্যম ডায়ানার সেই আউটফিটের নাম দেয় ‘রিভেঞ্জ ড্রেস’ বা প্রতিশোধের পোশাক।

বিশ্ব গণমাধ্যম ডায়ানার সেই আউটফিটের নাম দেয় ‘রিভেঞ্জ ড্রেস’ বা প্রতিশোধের পোশাক
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

কেন প্রতিশোধের পোশাক?

ডায়ানার প্রতি সৎ থাকতে পারেননি প্রিন্স চার্লস। তিনি তখন ক্যামিলার প্রেমে মত্ত। দুজনেই বিবাহিত সম্পর্কের প্রায় এক যুগ পর ১৯৯২ সাল থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন। ফলে ১৯৯২ সাল থেকে রাজপরিবার আর ডায়ানা হয়ে যায় দুই পক্ষ। আর গণমাধ্যমে সব সময়ই রাজপরিবারের চেয়ে ডায়ানার পাল্লা ছিল ভারী। পার্টিতে আসলে অন্য একটি পোশাক পরার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে মত বদলে কালো ককটেল মিনি ড্রেসটির দিকে হাত বাড়ান ডায়ানা। আরও তিন বছর আগে পোশাকটি বানিয়েছিলেন ডায়ানার ডিজাইনার ক্রিস্টিনা স্ট্যাম্বোলিয়ান। তখন ডায়ানা পোশাকটি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘অতিরিক্ত সাহসী’। কিন্তু ওই রাতের পার্টির জন্য ডায়ানা কেন যেন শেষ মুহূর্তে মত বদলে ওই পোশাকটিই পরেন।

ডায়না ও দ্য ক্রাউন সিরিজে ডায়ানার চরিত্র
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সেই রাতে একসঙ্গে দুটি ঘটনা ঘটেছিল

১৯৯৪ সালের জুনের সেই রাতে আসলে একটি নয়, একসঙ্গে দুটি ঘটনা ঘটেছিল। ডায়ানা যখন পার্টির প্রধান অতিথি, তখন প্রিন্স চার্লস জাতীয় টেলিভিশনে বহু বছর পর একটা সাক্ষাৎকার দিতে বসেছেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আপনি কি আপনার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত?’ উত্তর দিতে কয়েক সেকেন্ড সময় নেন প্রিন্স। তারপর বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তারপর একটু থেমে বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক এমনভাবে ভেঙে গেল কোনোভাবেই যা আর জোড়া লাগানো যায় না, এর আগপর্যন্ত (আমি স্ত্রীর প্রতি সৎ ছিলাম)।’ এভাবেই চার্লস তাঁর পরকীয়ার কথা পরোক্ষভাবে হলেও পুরো বিশ্বের সামনে স্বীকার করে নেন। আসলে অস্বীকার করারও উপায় ছিল না। চার্লস ও ক্যামিলার প্রেম ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’।

১৯৮১ সালে বিয়ের আগে ডায়ানা অফ শোল্ডার এই গাউনটি পরে রাজপরিবার থেকে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

এরপরই পোশাকটিকে ডাকা শুরু হলো রিভেঞ্জ ড্রেস। কেননা, রাজপরিবারের কোনো নারী সদস্য এ রকম পোশাক পরে জনসমক্ষে আসতে পারেন না। আর এমন পোশাক পরতে হবে, যাতে কোনোভাবেই ক্লিভেজ দেখা না যায়। ডায়ানার পোশাকটি মোটেও রাজকীয় নিয়মকানুনের ভেতর পড়ে না। রাজপরিবারের নারী সদস্যদের কাঁধখোলা পোশাক পরার নিয়ম নেই। হাঁটুর ওপরে দৈর্ঘ্য, এমন ছোট পোশাকও পরাও বারণ। আর হাতে গ্লাভসও বাধ্যতামূলক। সেসব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ডায়ানার এই পোশাক পরাটা ছিল একটা সাহসী সিদ্ধান্ত।

বিয়ের আগে অফ শোল্ডার ব্ল্যাক গাউনে ডায়ানা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

আগেও পরেছিলেন এমন ধরনের পোশাক

১৯৮১ সালে, বাগদানের পর আর বিয়ের আগে ডায়ানা এ রকম আঁটসাঁট কাঁধখোলা ছোট পোশাক পরে একটা পার্টিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই সময়ই তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। ডায়ানার স্টাইলিশ অ্যানা হার্বে ডায়ানার ওই দিনের লুক নিয়ে বলেন, ‘আগের দিন রাতে অন্য একটি পোশাকের ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলাম আমরা। ডায়ানাও মত দিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই পোশাক তুলে নেন। আর সঙ্গে কী কী গয়না পরবেন, কেমন সাজবেন, তা–ও তাৎক্ষণিকভাবে নিজে ঠিক করেন। এটা যেমন বিশ্বের জন্য চমক ছিল, আমাদের জন্যও।’

১৯৯৭ সালে, মৃত্যুর দুই মাস আগে, একটা এইডস হাসপাতালে দাতব্যকাজের জন্য নিজের ৭৯টি গাউন দেন ডায়ানা, সেখানে ভ্যালেন্তিনো, ভারসাচে, ডিওরের সঙ্গে ছিল এই কালো ড্রেসটিও। ৬৫ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয় পোশাকটি। বাংলাদেশি অর্থমূল্যে যা ৭১ লাখ ৫৩ হাজার টাকার সমান!