এই নামী ব্র্যান্ডগুলোর পোশাক তৈরি হয় বাংলাদেশে

প্রতিবছর বাংলাদেশের অনেক কারখানা থেকে ফ্যাশন পণ্য বিদেশে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সেসব তৈরি করেন। হাজার হাজার টাকার সেসব পোশাক পরেন সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারা।

জিনসের পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায় শীতের সময়।মডেল: আজিম উদ দৌলা ও পিয়া জান্নাতুল। পোশাক: স্নোটেক্স গ্রুপ, স্থান কৃতজ্ঞতা: মোংলা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: সুমন ইউসুফ

‘মেড ইন বাংলাদেশ’। এই একটা বাক্যই ঘুরেফিরে বিদেশফেরত অনেকের মুখে শোনা যায়; বিশেষ করে দেশের বাইরে যখন কেউ কোনো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানে ঢোকেন। হাজার হাজার টাকার সেসব পোশাক পরেন সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারা।

পাশ্চাত্যে পাফ জ্যাকেট সব সময় জনপ্রিয় শীতপোশাক। আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এমন পোশাক তৈরি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানায়।
মডেল: আজিম উদ দৌলা ও পিয়া জান্নাতুল। পোশাক: স্নোটেক্স গ্রুপ, স্থান কৃতজ্ঞতা: মোংলা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, জ্যাকেটের ব্র্যান্ড: জি স্টার ও কলম্বিয়া। ছবি: সুমন ইউসুফ

এ পোশাকই হয়তো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর বা ঢাকার কোনো কারখানায় তৈরি হয়েছে। তারপর সেটা প্যাকেজিং হয়ে সোজা বন্দরের জাহাজে ওঠে। সেখান থেকে পৌঁছে যায় ইউরোপ, আমেরিকা বা আফ্রিকার নানা দেশে।সম্প্রতি তেমনই একটি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা নিতে নকশা টিম যায় মানিকগঞ্জের ঢুলিভিটায় অবস্থিত স্নোটেক্স গ্রুপের কারখানায়, যে প্রতিষ্ঠানের ১৬ হাজার কর্মী দিন–রাত কাজ করেন শতাধিক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরিতে। এখানেই তৈরি হয় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড জারা, লি, ডেকাথলন, জ্যাক অ্যান্ড জোনস, কলম্বিয়া কিংবা জি স্টারের নানা রকম পোশাক।

আজিমের হাতে ধরা জ্যাকেটটি র‌্যাঙ্গলার ব্র্যান্ডের। পিয়া পরে আছেন জ্যাক অ্যান্ড জোনসের জ্যাকেট।
ছবি: সুমন ইউসুফ

প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানা থেকে অনেক ফ্যাশনপণ্য বিদেশে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সেসব তৈরি করেন। স্নোটেক্স আউটার ওয়্যারের পরিকল্পনাপ্রধান মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা গড়ে আড়াই কোটি পিস পোশাক রপ্তানি করি। এ সংখ্যা নিয়মিতভাবে বাড়ছে। করোনার সময় যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, গত বছর থেকে সেটা আবার কাটতে শুরু করেছে। এ বছর পরিস্থিতি আরও ভালো।’

ঢুলিভিটা, সাভার বা গাজীপুরের কারখানায় যেসব পোশাক বা ফ্যাশনপণ্য তৈরি হচ্ছে, এত দিন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়েই তা বিদেশে পাড়ি জমাত।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দর। ঢাকা থেকে মোংলা যেতে এখন সময় লাগে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। মোংলা কাস্টম হাউসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ বন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১১২ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন। একই সময়ে গত বছর এ বন্দর দিয়ে কোনো তৈরি পোশাকই রপ্তানি হয়নি। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলায় জাহাজের আগমন বেড়েছে। আমদানি-রপ্তানির চাপ মোকাবিলা করতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কাজও চলছে।

হাঁটু অবধি হাই হিল বুটের সঙ্গে কলম্বিয়ার জ্যাকেটে পিয়া জান্নাতুল
ছবি: সুমন ইউসুফ

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে তৃতীয়। প্রথম অবস্থানে আছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি।তবে খুশির খবর হচ্ছে, বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের চাহিদা দিন দিন আরও বাড়ছে। আর তাই বিদেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোও আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতি। মেড ইন বাংলাদেশ নিজেই হয়ে উঠেছে একটা গ্লোবাল ব্র্যান্ড।

ব্র্যান্ড পরিচিতি

এই ছবিতে মডেল পিয়া পরেছেন জ্যাক অ্যান্ড জোনসের জ্যাকেট। আজিম পরেছেন ফোরএফের জ্যাকেট।
ছবি: সুমন ইউসুফ

জ্যাক অ্যান্ড জোনস

ইউরোপের একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড জ্যাক অ্যান্ড জোনস। ডেনমার্কভিত্তিক এই ব্র্যান্ড খুব দ্রুত সবার পছন্দের ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে। বিশ্বের ৩৮টি দেশে ১ হাজারের বেশি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। জ্যাক অ্যান্ড জোনসের এই শীতের পোশাকটি এখন ইউরোপের বাজারে। অথচ কিছুদিন আগেও এগুলো বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় ছিল।

জারার এই নীল জ্যাকেটটি বাংলাদেশে তৈরি।
ছবি: সুমন ইউসুফ

জারা

স্প্যানিশ বহুজাতিক ব্র্যান্ড জারা, অনেক ধরনের পোশাক তৈরি করছে বাংলাদেশে। জারার মলূ ক্রেতাদের একটি বড় অংশ তরুণ, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশ থেকে জারার যেসব পণ্য তৈরি হয়, এর মধ্যে শীতের পোশাক অন্যতম।

পিয়া পরেছেন কলম্বিয়া ব্র্যান্ডের জ্যাকেট
ছবি: সুমন ইউসুফ

কলম্বিয়া

বিশ্বব্যাপী ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় নাম কলম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার। ১৯৩৮ সালে পল ল্যামফ্রম ও মারি ল্যামফ্রম প্রতিষ্ঠিত এই ব্র্যান্ড মলতূ হ্যাট বিক্রি করত। ১৯৬০ সালে কলম্বিয়া হ্যাট কোম্পানি থেকে প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় কলম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার কোম্পানি। এখন তারা নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও বাইরে পরার পোশাকও বিক্রি করে। যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ড

কলম্বিয়ার এই জ্যাকেটে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম পশম।
ছবি: সুমন ইউসুফ

শহরে জন্ম নেওয়া এই ব্র্যান্ডের পোশাক এখন বিশ্বে ৭২টি দেশের ১৩ হাজার খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। তাপ প্রতিফলিত উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে বাংলাদেশ থেকে অম্‌নি হিট জ্যাকেট তৈরি করছে কলম্বিয়া। এ ধরনের জ্যাকেটের মাধ্যমে যেকোনো আবহাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

মডেল জান্নাতুল পিয়ার পরনের লি ব্র্যান্ডের টপটি বাংলাদেশে তৈরি। মডেল আজিম উদ দৌলার এই ডেনিম শার্টটি র‌্যাঙ্গলার ব্র্যান্ডের। বাংলাদেশে তৈরি এই শার্টের চালানটি এরই মধ্যে র‌্যাঙ্গলারের সদর দপ্তরেে পৌঁছে গেছে।
ছবি: সুমন ইউসুফ

র‌্যাঙ্গলার

যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড র‌্যাঙ্গলার। মলতূ জিনস পোশাকের কোম্পানি হিসেবেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠানটির পোশাক তৈরি হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনায় ব্র্যান্ডটির সদর দপ্তর। ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্র্যান্ডের পোশাক কিনতে পাওয়া যায় ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন দেশে।

লি

জিনস ও ডেনিমের পোশাক দিয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পাওয়া ব্র্যান্ড লি। হেনরি ডেভিড লি ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৮৯ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলাইনার গ্রিন্সবরোতে লির সদর দপ্তর। টেকসই আর ফ্যাশনেবল জিনসের পোশাক তৈরি করে লি। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা—সবারই পছন্দের তালিকায় আছে লি।

উজ্জ্বল রঙের শীতপোশাক উষ্ণতা ছড়াবে মনেও। পিয়া পরে আছেন ফোর এফের জ্যাকেট।
ছবি: সুমন ইউসুফ

ফোর এফ

ফোর ফেসেস একটি জনপ্রিয় পোলিশ ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডটি খেলাধুলা, ভ্রমণ ও ক্যাজুয়াল পোশাক তৈরি করে কম সময়ে পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। দক্ষিণ–পূর্ব ইউরোপেই তাদের ২৩০টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরেও ৪০টি দেশের ৫০০ মাল্টিব্র্যান্ড শপে পাওয়া যায় ফোর এফের পোশাক।

নটিকার জ্যাকেটে আজিম
ছবি: সুমন ইউসুফ

নটিকা

৩৯ বছর আগে ডেভিড চু এই ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর খুব কম সময়ে মার্কিন এ ব্র্যান্ডের পোশাক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নটিকার এই শীতের পোশাক গুলো সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমিয়েছে পশ্চিমে। এরই মধ্যে হালের জনপ্রিয় তারকাদের গায়েও দেখা গেছে এই শীতপোশাক।