লাখ টাকার সিলিকন প্যাডেড ব্রার মতোই কাজ করবে দেশালের ১৬০ টাকার ফিলার
২১ বছর বয়স মানে হুলুস্থুল প্রেমে পড়ার বয়স। তিনিও পড়েছিলেন, সব ঠিকই চলছিল। হঠাৎই প্রেমে তৃতীয় পক্ষ হয়ে আঘাত হানল স্তন ক্যানসার। দিশাহারা হয়ে পড়লেন তিনি। নিজেই উদ্যোগ নিয়ে সরিয়ে নিলেন সম্পর্ক থেকে। প্রেমিককে না জানিয়ে চুপিচুপি গেলেন পাশের দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিছুই বুঝতে না পেরে প্রেমিক পাগলপ্রায় হয়ে খোঁজখবর নিতে লাগলেন। ঠিকই ঠিকানা জোগাড় করে কাঁটাতারের বেড়া পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেলেন ওপারে, সেখানে এক ভাঙা হৃদয় নিয়ে নিজের সব শক্তি জড়ো করে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন প্রেমিকা।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একদিন ঠিকই লোক জড়ো করে দুই হাত এক হলো এই জুটির। তারপর সেই নারী শরীর থেকে ক্যানসারকে বাদ দিতে ম্যাসটেকটমি করালেন, দুই ছেলের মা হলেন, টেলিকমে চাকরি করলেন, কিছুকাল শিক্ষকতা করলেন আর এখন তিনি সফল নারী উদ্যোক্তা। ২২ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়েও তিনি ক্লান্ত নন, জীবনযুদ্ধে টিকে আছেন সর্বশক্তি দিয়ে। সেই নারী-ই আমাদের আজকের মডেল, উমায়রা ইসলাম। দেশালের স্তন ক্যানসার রোগীদের জন্য বিশেষভাবে বানানো পণ্য ব্যবহার করেন তিনি।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসার রোগীর সংখ্যা এ মুহূর্তে যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশি পোশাকের ব্র্যান্ড দেশাল এই রোগে সফল অস্ত্রোপচারের পর যেসব নারী সারভাইভ করেছেন, তাঁদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করেছে ফিলার, ব্লাউজ আর ট্যাংক টপ। ব্লাউজের ভেতর বিশেষভাবে তৈরি পকেটে রাখা হয় ফিলার। ফলে এসব নারী শাড়ি পরে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন। তবে উমায়রা বিশেষ ধন্যবাদ জানালেন ফিলার আর ট্যাংক টপের জন্য। বললেন, ‘আমি নিয়মিত জিম করি। সিলিকনের ফিলার পরে জিম করা সম্ভব হয় না। এটা অনেক দামি, ফেটে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার স্বাচ্ছন্দ্যবোধও হয় না। তাই আগে যখন জিম করতাম, অন্যরা কেমন করে যেন তাকাত। আমাকে দেখিয়ে ফিসফিস করে কথা বলত। অস্বস্তি হতো। এখন ফিলারের ওপর ট্যাংক টপ চাপিয়ে দিব্যি শরীরচর্চা চালিয়ে যাচ্ছি। পণ্যটি খুবই ভালো।’
স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এসব পোশাক বাজারে আনার গল্প শোনালেন দেশালের ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান ডিজাইনার ইশরাত জাহান। বললেন, ‘২০২২ সালের ডিসেম্বরে আমরা এই পণ্যের ওপর কাজ শুরু করি। অক্টোবর মাসে এসব পণ্য বাজারে আনি। এর মাঝে আমাদের একটা লম্বা যাত্রার গল্প আছে। আমরা ক্যানসার হাসপাতাল থেকে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের নম্বর নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা আমাদের পণ্য ব্যবহার করে পরে সুবিধা-অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। তার ওপর আবার কাজ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েছি। এভাবে কয়েক মাস ধরে সাত থেকে আট ধাপের পর এসেছে চূড়ান্ত পণ্য।’
দেশালের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পার্শা রফিক জানালেন, তাঁরা যখন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতেন, তখন বেশ স্নায়ুচাপে থাকতেন। কেননা শুরুর গল্পটাই ব্যতিক্রম, বেশির ভাগ জীবনেই ‘হ্যাপি এন্ডিং’ ঘটেনি। একজনের হয়তো স্তন ক্যানসারের কারণে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদই হয়ে গেছে। ওই স্বামীকে ফোন করায় তৈরি হয়েছে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ। আরেকজন ফোন করে কারণ জানানোর পর পিনপতন নীরবতা। কেননা যাঁর খোঁজে ফোন করা হয়েছে, কয়েক বছর আগেই তিনি না-ফেরার দেশে চলে গেছেন।
ইশরাত বলেন, ‘অনেকেই দেশের বাইরে থেকে লাখ টাকা খরচ করে সিলিকন প্যাডেড ব্রা বা সিলিকনের তৈরি ফিলার কেনেন। সেগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ব্যবহার উপযোগী নয়। কেননা এখানে গরম বেশি। আবার এগুলোর দামও বেশির ভাগেরই আয়ত্তের বাইরে। আরামদায়কও নয়, বরং অস্বস্তি লাগে। খুব একটা টেকসইও নয়। ফিলার রাখার পকেটযুক্ত ওভেন ব্লাউজের দাম ৮০০ টাকা, নিট ব্লাউজের দাম ৭০০ টাকা আর সাদা-কালো ট্যাংক টপগুলো পাওয়া যাবে ৫৫০ টাকায়।’ এসব পণ্য স্তনের আকৃতি, পছন্দ, রুচি নানা কিছুর ওপর নির্ভর করে। তাই বেশির ভাগ ক্রেতাই কাস্টোমাইজ করে বানিয়ে পণ্য কেনেন। অল্প সময়ে পণ্যগুলো ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে এক বা একাধিক অর্ডার আসে।