‘আমি কোনো দিন শর্টকাট খুঁজিনি, সময় দিয়েছি’

যেসব বাংলাদেশি মডেল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি অন্যতম। তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত আছে ‘মিস আয়ারল্যান্ড ২০১৪’, ‘মিস আর্থ ২০১৬’–এর মতো বিশেষণ। জন্ম আর বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরের ফার্মগেটে হলেও পাকাপাকিভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি থাকছেন আয়ারল্যান্ডে। হঠাৎ প্রথম আলো কার্যালয়ে প্রিয়তির সঙ্গে দেখা। ঢেঁকি নাকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, প্রচলিত বাংলা বাগ্‌ধারার সেই সূত্র অনুযায়ী ভালো–মন্দ আলাপের মোড়কে নেওয়া হয়ে গেল সাক্ষাৎকার। সেই কথোপকথনের কিছু অংশ।

মডেল প্রিয়তি
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রশ্ন :

কত বছর পর এলেন?

শেষবার এসেছিলাম ২০২০ সালের শুরুতে। করোনা মহামারি শুরু হলে সেবার শেষ ফ্লাইটে আয়ারল্যান্ডে ফিরেছিলাম।

প্রশ্ন :

কী কাজে এলেন এবার?

২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মডেল অনুসন্ধান এবং ফ্যাশন ইভেন্ট ‘টপ মডেল’। ২০২১ সালে আমি ‘টপ মডেল’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে টপ মডেল বিজয়ীরা এখানে অংশগ্রহণ করে। আমি বিজয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে যাতে প্রতিবছর মডেলরা অংশ নিতে পারেন, সে জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জন্য রেজিস্ট্রেশন করি। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিজয়ী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়ে যাওয়ায় সেবার ‘টপ মডেল বাংলাদেশ’ লন্ডনে মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি। এ বছর এপ্রিলের মধ্যে টপ মডেল বাংলাদেশকে খুঁজে বের করতে চাই। যাতে তাঁর গ্লুমিং পর্ব, ভিসা, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেপ্টেম্বরে লন্ডনে অনুষ্ঠেয় মূল পর্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। সে জন্য আসা।

২০২১ সালে ‘টপ মডেল’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন প্রিয়তি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

প্রশ্ন :

পুরো কাজ কি আপনার তত্ত্বাবধানে ঘটছে?


হ্যাঁ, আমার সমন্বয়ে, সবার সহযোগিতায়। নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন ওপেন আছে। রেজিস্ট্রেশন কবে বন্ধ হবে সেই দিন–ক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।

প্রশ্ন :

ঢাকায় এসে কেমন লাগছে?

যানজট আরও বেড়ে গেছে। আমার পরিবার উত্তরাতে শিফট করেছে। ফলে সারা দিনে আমি যেকোনো জায়গায় যেতে পারি। এখানে এমনিতেই কাজের গতি একটু ধীর, তারওপর তীব্র যানজটের কারণে কাজের পরিমাণ আর গতি, দুটোই কমেছে। তা ছাড়া ভালো লাগছে। অনেক দিন পর আপনজনদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। উপহার দিচ্ছি এবং পাচ্ছি।

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রশ্ন :

আপনার সন্তানদের বয়স কত হলো? তারা কি এসেছে?

তাদের একজনের বয়স ১১ আর আরেকজনের ১২। একজন সিক্সে, আরেকজন সেভেনে পড়ে। তাদের দুজনের স্কুল খোলা। আমাকে অন্তত এক মাস এখানে থাকতে হবে এবং আমি কাজে ব্যস্ত থাকব। তাদের সেভাবে সময় দিতে পারব না। তাই নিয়ে আসিনি।

প্রশ্ন :

সারা দিনে আপনি কী খান? কীভাবে শরীরের যত্ন নেন?

আমার দিন শুরু হয় ভোর ছয়টায়। ঘুম থেকে উঠে লেবু–পানি খাই। তারপর হাঁটতে বের হই বা দৌড়াই। ঘরে ফিরে প্রতিদিন সকালে দুটি সেদ্ধ ডিম খাই। ৮–৯ বছর ধরে প্রতিদিন সকালে দুটি সেদ্ধ ডিম খাই। পুরোপুরি সেদ্ধ নয়, ক্রিম বয়েল। দুপুরে বেশির ভাগ সময় সালাদ বা স্যুপ—হালকা কিছু খাই। বিকেলে বাদাম, ফল, স্মুদি, দই—এ রকম কিছু খাই। দুপুরে ভাত বা ভারী কিছু খেলে ক্লান্তি লাগে। রাতের খাওয়া সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সেরে ফেলি। সর্বোচ্চ সাড়ে ছয়টা। এর বেশি দেরি করি না। রাতে মাছ অথবা মুরগির মাংস—যেকোনো একটা খাই। আমি যে মডেল এ কারণে শরীরের যত্ন নিতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। যেকোনো যন্ত্রের কাছ থেকে আপনি যদি ভালো ফল চান, যত্ন নিতে হবে। আমাদের শরীরও তা–ই।

প্রশ্ন :

চিট মিলে কী খান?

সপ্তাহে এক দিন রেড মিট খাই। গরুর মাংস বা খাসির মাংস। মাঝেমধ্যে নিজেকে ট্রিট দিই। কফিশপে যাই। আপেল পাই বা ডেজার্ট খাই। হয়তো কোনো একটা দিন অনেক পরিশ্রম গেল, নিজেকে ওই দিন ভালো খাবার খাইয়ে পুরস্কার দিই।  

প্রিয়তি একাধারে সিঙ্গেল মাদার, মডেল, পাইলট আর লেখকও
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রশ্ন :

আপনার বাসায় কে রান্না করে?

আমি। প্রতিদিন রান্না করি। তবে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেলায় তিন–চার পদ নয়। যেকোনো এক পদ রান্না করলে চলে।

প্রশ্ন :

একটা ঝটপট রেসিপি দিন

স্যামন মাছের ফিলের পিস নেবেন। সেটা ধুয়ে পরিষ্কার করে পানি ঝরিয়ে রাখুন। ফ্রাইপ্যান পর্যাপ্ত গরম করুন। তারপর সেখানে মাছের চামড়ার পাশটা দেবেন। অপর পাশে তেরিয়াকি সস দেবেন। প্রথম পাশ হয়ে গেলে উল্টে দেবেন। আরেক পাশ হয়ে গেলে তুলে ফেলবেন। এরপর খেয়ে নেবেন। তেল, লবণ কিচ্ছু লাগবে না। খুবই স্বাস্থ্যকর ও মজাদার। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য সব মিলিয়ে সময় লাগবে পাঁচ থেকে সাত মিনিট।  

প্রশ্ন :

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচকতা সামাল দেন কীভাবে?

প্রথমদিকে তো পেশাদার সাহায্য নিতে হয়েছে। কাউন্সিলিং করিয়েছি। এখন আর এসব গায়ে লাগে না। এগুলো থাকবেই। মানুষ অসুখী। কোনো সুখী, তৃপ্ত মানুষ কখনো অন্যকে গালাগালি করে, নীচে নামিয়ে আনন্দ পায় না। একজন মানুষের ভেতর কী পরিমাণ ক্ষোভ, অশান্তি, হীনম্মন্যতা জমা থাকলে সে যাকে চেনে না, জানে না, জীবনে কোনোদিন দেখা হবার সম্ভাবনা নেই, তাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্রাব্য কথাবার্তা বলে!

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

প্রশ্ন :

আমরা জানি, মডেলিং মোটামুটি নড়বড়ে পেশা। এখানে বেশির ভাগ আসেন হারিয়ে যেতে। আপনি প্রায় এক দশক এই ইন্ডাস্ট্রিতে সফলতার সঙ্গে টিকে আছেন। এ ছাড়া আপনি একজন সিঙ্গেল মাদার, পাইলট আর লেখকও। এত সব কীভাবে সামলান?

আমি কেন টিকে আছি জানেন? আমি কোনো দিন কোনো কিছুর জন্য ‘শর্টকাট’ খুঁজিনি। সময় দিয়েছি। একটু একটু করে এগিয়েছি। আমি খুব ছোটবেলায় মা হয়েছি। দুই সন্তানকে একা হাতে বড় করছি। আমি পাইলট। এটা আমার মেধার বহিঃপ্রকাশ। আমি মডেল, এটা আমার আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। আমি লিখি। কেননা আমি আমার অনুভব, বোঝাপড়া প্রকাশ করতে চাই, ভাগ করে নিতে চাই। সবকিছুতে ডিসিপ্লিনের কোনো বিকল্প নেই। আর যাঁরা শর্টকাট খোঁজেন, যেকোনো মুহূর্তে তাঁদের হুড়মুড় করে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

যাঁরা শর্টকাট খোঁজেন, যেকোনো মুহূর্তে তাঁদের হুড়মুড় করে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, বললেন প্রিয়তি
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন