অতিমারি-অভিজ্ঞতায় সফলতা

ফ্যাশন মানুষের যাপনধারারই অংশ। নতুন অনলাইন ফ্যাশন ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ার্ডরোবও তাই ফ্যাশন–অনুরাগীদের প্রতিদিনের যাপনের অংশ হতে চায়।

ওমার আবদুল্লাহ ২০১৮ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাম লড সম্মাননাসহ মার্কেটিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন। সে বছরই বোন রেহনুমা চৌধুরীর সঙ্গে ফিফথ অ্যালায়েন্স গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেড নামে একটা বায়িং হাউস চালু করেন। দুই বছরের মধ্যে তাঁরা আমেরিকা, পোল্যান্ড, জাপান, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে পোশাক রপ্তানি করছেন। তৈরি পোশাকশিল্পে ক্যারিয়ার শুরু করার ফলে কাপড়, পোশাকের সোর্সিং, উত্পাদন এবং গ্লোবাল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নানা বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করেন ওমার। তিনি ফিফথ অ্যালায়েন্স গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের পরিচালক। তবে এ গল্প অন্য। তাঁর অন্য একটি উদ্যোগ ওয়ার্ডরোবকে নিয়ে।

২০২০ সালে করোনা অতিমারির প্রথম ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী অর্ডারগুলো বাতিল হতে শুরু করে। সে মুহূর্তেই ওমার চিন্তিত হয়ে পড়েন। কারণ, রপ্তানি আয়ের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন তাঁরা। অথচ এভাবে অর্ডার বাতিল হতে থাকায় কর্মীদের বেতন দেওয়া তাঁদের পক্ষে বেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময়েই তিনি লোকাল মার্কেটকে নিয়ে ভাবা শুরু করেন। আর সিদ্ধান্ত নেন নতুন উদ্যোগ নেওয়ার। একটু অবাক করা বিষয় হলো স্থানীয় বাজারে ওয়ার্ডরোবের শুরু লুঙ্গি দিয়ে।

লুঙ্গি বিক্রি করার এ আইডিয়া তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া বলে জানান ওমার। সঙ্গে আরও যোগ করলেন লুঙ্গি সাধারণত নিউমার্কেট, রাজলক্ষ্মী, মৌচাক মার্কেট ছাড়া সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই তিনি ঠিক করলেন উঁচুমানের লুঙ্গি যুক্তিসংগত দামে বিক্রির। আর সেটাও তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার। টেক্সটাইল এবং কাপড় সম্পর্কে পূর্বাভিজ্ঞতা থাকায় তিনি কিছু লুঙ্গি ডিজাইন করে সিরাজগঞ্জের একটি মিল থেকে বানিয়ে নেন।

লুঙ্গি বিক্রির আইডিয়াটা বেশ জনপ্রিয় হয়

ওমরের ডিজাইন করে লুঙ্গি বিক্রির আইডিয়াটা বেশ জনপ্রিয় হয়। ফলে সেউৎসাহ ও সাফল্যে ওয়ার্ডরোব এখন বিভিন্ন স্টাইল ও ফেব্রিকের লুঙ্গি বিক্রি করছে। কেবল লুঙ্গি নয়, পাশাপাশি পুরুষদের জন্য চিনোস ও জুতাও বিক্রি করে ওয়ার্ডরোব।

এ প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই ছিল অনলাইন গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন, আস্থা তৈরি। কারণ, অনলাইনে গ্রাহকেরা নিয়মিত ত্রুটিযুক্ত পণ্য, নিম্নমানের পণ্য, বিলম্বিত সরবরাহে কিছুটা বিরক্ত। গ্রাহকদের এই ধরনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে চায়নি ওয়ার্ডরোব। তা ছাড়া তাদের সেবার বিশেষত্ব ছিল অর্ডার করা পণ্য পছন্দ না হলে পণ্যটি ফেরত না নিয়ে বরং সরবরাহের চার্জসহ পুরো টাকা ফেরত দেওয়া। বিষয়টি গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া পণ্যের গুণমান ও উন্নত পরিষেবায় ওয়ার্ডরোবের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা গ্রাহকদের প্রশংসা পায়।

ট্রেনারও বিক্রি করেছে

ওমার মনে করেন, গ্রাহকই মূল। এ জন্য তাদের সন্তুষ্টি সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সঠিক পণ্য আর সেবা নিশ্চিত করে গ্রাহকদের ধরে রাখতে ও বারংবার ফিরিয়ে আনতে চান। এখন পর্যন্ত সেটা তাঁরা করতে পেরেছেন।

শুরুতে কেবল লুঙ্গি নিয়ে কয়েক মাস কাজ করার পর বেশি প্রয়োজনীয় পোশাকের সেবার আগ্রহ লক্ষ্য করে সেদিকে নজর দেয় ওয়ার্ডরোব। ফলে জিম লেগিংস, ইয়োগা প্যান্ট ও রানিং সুজ বিক্রি শুরু করে। এরপর তালিকায় যোগ হয় বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙের পিরিয়ড প্যান্টি; ক্রমেই বাড়তে থাকে পণ্যের সংখ্যা। যোগ হয় থাই-হাই ফ্যাশন সক্স, স্টকিংস, ফিশনেটস, প্যান্টিহোস ইত্যাদি। কারণ, এ ধরনে ফ্যাশন অনুষঙ্গের চাহিদা থাকলেও এসব নিয়ে কেউ আগ্রহ দেখায় না।

গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় ছোট ও বড়দের নানা ধরনের মোজার সংগ্রহ সমৃদ্ধ করে ওয়ার্ডরোব। আরও যোগ করে স্লাইড, স্যান্ডেল ও স্পোর্টস শু।
একজন গ্রাহক হিসেবে অনলাইন শপিংয়ে ওমারের অভিজ্ঞতা খুব যে ইতিবাচক, তা নয়। সে জন্যই নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে সমস্যাগুলোকে দূর করে গ্রাহকদের আনন্দময় শপিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।

মিলবে বাচ্চাদের প্রোডাক্টও

ওমার মনে করেন, বাংলাদেশের গ্রাহকেরা যথেষ্ট উদার; কেবল প্রয়োজন তাদের প্রতি একটু যত্নশীল হওয়া। তাহলেই তারা খুশি; গ্রাহককে আপন করে নিতে বেশি কিছুর প্রয়োজন পড়ে না।

ওমার আরও বললেন, ‘এখন আমাদের সব ধরনের গ্রাহক আছেন। সেলিব্রিটি থেকে ইনফ্লুয়েন্সার, ব্যবসায়ী থেকে ব্যাংকার, এমনকি শিক্ষার্থীরাও। দেশের প্রতিটি বিভাগের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষ এখন আমাদের গ্রাহক। তাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন সর্বদা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’

পণ্যের সঠিক মান ও যুক্তিসংগত দাম আর সময়মতো সরবরাহকে অগ্রাধিকার দেওয়া একটি ফাস্ট মুভিং ফ্যাশন ব্র্যান্ড।

প্রযুক্তির উৎকর্ষ সঙ্গী করে ওয়ার্ডরোব তাদের গ্রাহক পরিষেবার মান বৃদ্ধি ও ফ্যাশনের নিত্যনতুন ট্রেন্ডকে উপস্থাপন করা লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজনে শিগগিরই গ্রাহকদের অনলাইন শপিংয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতা দিতে প্রত্যয়ী এই অনলাইন ফ্যাশন ব্রান্ড। কারণ, তারা এখন কাজ করছে ছবির মাধ্যমে কাপড়ের মাপ নির্ণয়ের বিষয়টি। ফলে খুব সহজেই নিখুঁত সাইজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে ওয়ার্ডরোবের পক্ষে। পাশাপাশি আরও চলছে অর্ডার যেদিন দেওয়া হবে, সেদিনই সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করার কাজ।

অনলাইন শপিংয়ের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা পরিবর্তনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ওমার বলেছেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছেন তিনি তাঁর স্বপ্নের ওয়ার্ডরোবকে নিয়ে।

ছবি: ওয়্যারড্রোব