আকসুর সৃজনে জীবনের জয়গান

প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালের নার্সদের অনুপ্রেরণায় তৈরি বোরা আকসুর পোশাকছবি: রয়টার্স

প্রথম দিনে বারবেরির ফিটিজাল ক্যাটওয়াকের পর লন্ডন ফ্যাশন উইকের দ্বিতীয় দিনে ছিল মিশ্র উপস্থাপনা; ডিজিটালের পাশাপাশি ছিল ফিজিক্যাল শো। দর্শক উপস্থিতিতে ফ্যাশন ক্যাটওয়াক হয়েছে মার্ক ফাস্ট আর আর বোরা আকসুর সংগ্রহের।

বোরার আকসুর পোশাকে ছাপার সঙ্গী হয়েছে ফ্রিল
ছবি: রয়টার্স

তবে সূচনা দিনে লাইভস্ট্রিমিংয়ে বারবেরির বনপথে ফ্যাশন ক্যাটওয়াকের রেশ থাকলেও তুরস্কের ফ্যাশন ডিজাইনার বোরা কিন্তু তাঁর সৃজনের বোদ্ধাদের মুগ্ধ করেছেন। সামাজিক দূরত্ব মেনেই অনুষ্ঠিত এই আয়োজন। বিশেষত কভেন্ট গার্ডেনের সেন্ট পলের গির্জা প্রাঙ্গণের এই ফ্যাশন শোতে দর্শকদের বসার ব্যবস্থাও ছিল উল্লেখ করার মতো।

বোরার অতিমারি-প্রাণিত বসন্ত-গ্রীষ্ম ২০২১ কালেকশনের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নার্সদের সফল্যগাথা। সেও এক অতিমারি কাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে স্প্যানিশ ফ্লুর দাপটে বিস্রস্ত ইউরোপ। সেই সময়ে সেবাময়ীদের অকাতর সেবার গল্পই যেন শতবর্ষ পেরিয়ে পোশাকের পরতে পরতে শুনিয়েছেন বোরা আকসু।

নার্সদের প্রেরণায় তৈরি এবারের সংগ্রহ
ছবি: রয়টার্স

১৯১৮ সালের গল্প। যুদ্ধাহত সেনাদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন স্প্যানিশ ফ্লুতে। তাঁদের পাশে থেকেছেন মমতার ফল্গুধারা নিয়ে নার্সরা। সেবা দিয়ে সারিয়ে তুলেছেন। তাঁদের এই নিবেদিত ভূমিকাই শুনিয়েছে আশার কথা। কারণ এরপর পৃথিবী আবার স্বাভাবিক হয়েছে। হয়তো অদ্ভুত এই সময়ে দাঁড়িয়ে বোরাও হয়তো তাঁর সৃজনের মধ্যে দিয়ে সেই আশার কথাই বলতে চেয়েছেন।

সাদা আর কোমল রঙে সমর্পিত বোরা যেন পুনরাবিষ্কারের নেশায় মেতেছেন। ভাগে ভাগে বিন্যস্ত স্কার্ট, ফ্রিল দেওয়া হাতা যেন হালের হল্লা থেকে আমাদের ফিরিয়ে নেয় অতীতের স্নিগ্ধতায়। তাঁর সিগনেচার কোমল বর্ণবিভার বলয়ে বিচরণ বিমুগ্ধ করে। গোলাপি, নীল, গাঢ় পার্পল পরত বুলিয়েছেন ঢিলেঢালা লেস দেওয়া পোশাকে। সঙ্গে দোসর হয়েছে ছাপা। মাড় দেওয়া কলার আর রাফল বসানো অ্যাপ্রন কোনো সন্দেহ নেই নস্টালজিক করে ফ্যাশন অনুরাগী আর বোদ্ধাদের। দৃষ্টিনন্দন এই পোশাক সংগ্রহে চমৎকার যোজট হয়েছে স্বচ্ছ অর্গানজা কাপড়ে তৈরি মাস্ক। এখানে অনুঘটকের অন্য নাম যে অতিমারি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

হালকা রঙের ব্যবহার মুগ্ধ করে
ছবি: রয়টার্স

ঢিলেঢালা সাদা ড্রেস, লম্বা মোজা আর সাদা বুটে বিম্বিত নার্সদের সামান্য সজ্জা উপভোগ্য এবং ভাবনা উসকে দেয়। উপস্থাপনা শেষে সুলতান সুলেমানের দেশের এই পোশাকনকশাবিদ বলেন, ‘মানুষের উপস্থিতি বাদ দিয়ে কোনো কিছু আমি করতেই চাইনি।’

আসলে ভালো দিন সামনে আসবে। যেমন হয়েছে অতীতে। এই সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে সেই বক্তব্যই পুনরাবৃত্তি করেছেন বোরা। ভালো দিনের প্রতীক্ষায় অবশ্যই বোরার মতো সারা বিশ্ব। তবে সেই সুদিন যখনই আসুক, লন্ডনের হৈমন্তী রোদের দৃষ্টিসুখের আনন্দে উদ্বেল করা পোশাক দর্শকদের কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্মৃতিমেদুর করার পাশাপাশি আশাবাদী করেছে।

বোরার সৃষ্টিতে দৃষ্টিসুখের আনন্দ
ছবি: রয়টার্স

যেকোনো কালেকশন এবং ফ্যাশন প্রকৃতপক্ষে সময়কেই বিম্বিত করে থাকে। সেই সময়ের মধ্যেই তো আমাদের বিচরণ, বলেছেন বোরা। অতএব এই দিন দিন নয়, ভালো দিন অবশ্যই আছে। এটাই তাঁর বার্তা বিশ্ববাসীর উদ্দেশে, এবারের ফ্যাশন সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে।

১৪ বছর ধরে লন্ডন ফ্যাশন উইকে অংশ নিচ্ছেন বোরা আকসু। সব সময়ই লাইভ শো করেছেন। এবার তার ব্যত্যয় ঘটাননি। সে জন্যই তো তিনি মাত্র তিনজনের একজন, যিনি অতিমারির রেশ রয়ে যাওয়া সময়েও ফ্যাশন শো করেছেন দর্শকের উপস্থিতিতে।

তথ্যসুত্র: রয়টার্স ও ইন্টারনেট