আপনার ব্যাগ কেমন হবে

সাধারণভাবে সবগুলোকে ট্রাভেল ব্যাগ বলা হলেও এর আছে বৈচিত্র্যময় রকমফেরছবি: পেকজেলস ডট কম

সময়টাই এখন ছুটে চলার। বিশ্বায়নের বদৌলতে পৃথিবী হয়ে এসেছে ছোট। কাজের প্রয়োজনে, পরিবারে স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে তো বটেই, আমরা এখন ভ্রমণের শখ মেটাতেই অহরহ উড়ে যাচ্ছি এ দেশ থেকে ও দেশে। এ ছাড়া নিজের দেশের ভেতরেও ভ্রমণের প্রবণতা অপ্রত্যাশিত রকমভাবে বেড়েছে গত দশক ধরে। দুদিনের ছুটি পেলেও পরিবারসহ, বন্ধুবান্ধব মিলে অথবা একাই মানুষ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ছে। তবে ব্যাপার হচ্ছে, সাজেক, নাফাখুম, কক্সবাজার হোক আর প্যারিস, সুইজারল্যান্ড, বালি, ভুটানই হোক ব্যাগ বা লাগেজ কিন্তু নিতেই হয়। সাধারণভাবে সবগুলোকে ট্রাভেল ব্যাগ বলা হলেও এর আছে বৈচিত্র্যময় রকমফের।

ডাফেল ব্যাগ

ডাফেল ব্যাগ
ছবি: সংগৃহীত

সম্ভবত আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া ভ্রমণ ব্যাগ এটি। সিলিন্ডার আকৃতির যে লম্বাটে ব্যাগগুলো ব্যবহার করা হয় ভ্রমণের সময়ে, সেগুলোই ডাফেল। এরই আরেক নাম উইকেন্ডার ব্যাগ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরই ছোট আকৃতিরগুলো আবার জিম ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার হয় ব্যায়ামাগারে যেতে। ডাফেল ব্যাগগুলোতে অনেক জিনিস ধরে অথচ স্যুটকেসের চেয়ে অনেক সহজে বহন করা যায় বা যে কোনোখানে রাখা যায় বলে ভ্রমণে এর জনপ্রিয়তা খুবই বেশি। পরিবারসহ কোথাও যেতে এর জুড়ি নেই। বেশ কদিন ধরে বেড়াতে গেলেও এতে আলাদাভাবে থরে থরে গুছিয়ে নেওয়া যায় কাপড়, শুকনা খাবার, প্রসাধনী বা জরুরি ইলেকট্রনিক জিনিস। আজকাল চাকাযুক্ত ডাফেল ব্যাগও পাওয়া যায়, যা কিনা আরও সুবিধাজনক।

ব্যাকপ্যাক

ব্যাকপ্যাক
ছবি: পেকজেলস ডট কম

হালকা, দুই কাঁধে বহনযোগ্য এই ব্যাগগুলো ভ্রমণপিয়াসি মানুষের বা পর্যটকদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্যিকারের শৌখিন ট্রাভেলার বলতেই যেন চোখে ভেসে ওঠে কাঁধের ব্যাকপ্যাকে দুই সেট কাপড়, টুথব্রাশ, ফোনের চার্জার, পাসপোর্ট, টিকিট ব্যাকপ্যাকে ভরে ভ্রমণের নেশায় বেরিয়ে পড়া আবেগময় তরুণ–তরুণীর দল। এই ব্যাকপ্যাক নিয়ে ছুটে বেড়ানো ভ্রমণকারীরা সারা দুনিয়ায় ব্যাকপ্যাকার নামে পরিচিত। এতে দুই কাঁধে নেওয়ার জন্য দুটি স্ট্র্যাপ থাকে, যার দৈর্ঘ্য কমবেশি করা যায়। এতে চেনযুক্ত একটি প্রধান কমপার্টমেন্ট আর দু–একটি পকেট থাকে। খুব বেশি জিনিস না ধরলেও এই হালকা ও টেকসই ব্যাগগুলো খুবই জনপ্রিয় ভ্রমণের জন্য। দুই হাত মুক্ত থাকায় পাহাড়চূড়ার সেলফি তোলা অথবা রাস্তায় বিরতি নিয়ে একটা ডাব খেয়ে নিতে কোনোই বেগ পেতে হয় না ব্যাকপ্যাক নিয়ে।

র‌্যাকস্যাক বা রুকস্যাক

র‌্যাকস্যাক বা রুকস্যাক
ছবি: উইকিপিডিয়া

ব্যাকপ্যাকের মতো হলেও র‌্যাকস্যাক বেশির ভাগ বেশ স্থিতিস্থাপক ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা হয়। চেইন বা জিপারের বদলে র‍্যাকস্যাক ফিতা ও বকলস দিয়ে আটকানো থাকে। সেদিক দিয়ে জিনিস চুরি যাওয়ার ভয় থাকলেও সুবিধা হচ্ছে, পথের মধ্যে যখন-তখন ইচ্ছেমতো জিনিস ঢোকানো বা বের করা যায়। তাই নিত্য ভ্রমণকারীদের কাছে এর আলাদা একটি আবেদন আছে। এতে সাইডে স্ন্যাক্স বা হালকা খাবার ও পানি রাখারও সুবন্দোবস্ত থাকে। স্থিতিস্থাপক বলে এতে হঠাৎ শেষ মুহূর্তে মনে পড়া জ্যাকেটটা যেনতেন ভাঁজ করে যেমন ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তেমনি কোথাও গিয়ে ঝোঁকের মাথায় কিনে ফেলা একগাদা ঝিনুকের মালা, চকলেট, শোপিস অনায়াসে গুঁজে দেওয়া যায় র‌্যাকস্যাকের গহ্বরে।

হ্যাভারস্যাক বা স্লিং ব্যাগ

স্লিং ব্যাগ। আকৃতিতে বড় স্লিং ব্যাগই হ্যাভারস্যাক
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

দিনে দিনে ফিরে আসার পরিকল্পনা থাকলে বা হঠাৎ এদিক-ওদিক গেলে হ্যাভারস্যাক বা স্লিং ব্যাগই সেরা। ব্যাকপ্যাকের আদলে বানানো হলেও এই ব্যাগগুলো অত্যন্ত স্টাইলিশভাবে তৈরি করা হয়। ব্যাকপ্যাকের সঙ্গে এর মূল পার্থক্য হচ্ছে, এতে এক কাঁধে বহন করার ব্যবস্থা থাকে, দুই কাঁধে নয়। আকারে ছোট ও স্লিম ডিজাইনের স্লিং ব্যাগে খুব বেশি জিনিস ধরে না অবশ্য। তবে হ্যাভারস্যাক কিছুটা বড় আকৃতির হয়।

টটে ব্যাগ

টটে ব্যাগ
ছবি: পেকজেলস ডট কম

এই ব্যাগগুলোর আকার–আকৃতি একেবারে ছোট লেডিজ ব্যাগ থেকে শুরু করে আজদাহা ঝোলার মতো অবধি হতে পারে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, টটে ব্যাগ হলো কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। এতে একাধিক জিপ লাগানো কম্পার্টমেন্ট, আগে–পিছে পকেট বা পউচ থাকতে পারে। কাঁধে বা হাতে ঝুলিয়ে এক পাশে বহনযোগ্য এই ব্যাগগুলো ভ্রমণের সময় হাঁটতে কিছুটা কষ্ট দিলেও এর আছে অনেক উপযোগিতা।

টটে ব্যাগের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, বারবার কাঁধ থেকে নামানোর ঝামেলা থাকে না এতে। তাই বাস থেকে নামার সময় টুক করে আয়না, চিরুনি আর মেকআপ কিট বের করে যেমন সব সময় ক্যামেরা ক্লিক উপযোগী রাখা যায় নিজেকে, তেমন শিশুদের মায়েরাই জানেন ভ্রমণের সময় শিশুর দুধ, পানি, স্ন্যাক্স, খেলনা, টিস্যু কত সহজে এই ব্যাগগুলোতে হাতের নাগালে চট করে পাওয়া যায়। নানা বাহারি ডিজাইন ও রঙের এই নয়ন মনোহর ব্যাগগুলো তাই নারীর প্রথম পছন্দ থাকে ভ্রমণকালে। ভেতরের জিপ পকেটে নিরাপদে মূল্যবান জিনিস, টাকা, ট্রাভেলার্স চেক ইত্যাদি রাখা যায় টটে ব্যাগে।

কেমন ব্যাগ প্রয়োজন

স্থান, কাল, পাত্র, সময় বুঝে ভ্রমণের ব্যাগ নির্বাচন করতে হলেও কিছু বিষয় সব সময় মাথায় রাখা উচিত। কথায় বলে, সস্তার তিন অবস্থা। আর ভ্রমণকালে হঠাৎ চেন ফেটে গেলে বা স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে গেলে খুবই ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই দেখেশুনে একটু ভালো মানের ব্যাগ কেনাই ভালো। ব্যাগ প্রশস্ত ও টেকসই হতে হয়। সেই সঙ্গে দেখতে হবে যেন আলাদা আলাদা কম্পার্টমেন্ট ও পকেট থাকে। ট্রাভেল ব্যাগে স্ট্র্যাপ বা বেল্টের দৈর্ঘ্য ছোট–বড় করার ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের নিরিখে একটু গাঢ় রঙের পানিনিরোধক উপাদানের তৈরি ব্যাগই বেশি উপযোগী। যে ব্যাগগুলো দুই কাঁধে বা হাতে সবভাবেই নেওয়া যায়, সেগুলো বেছে নিলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। সঙ্গে নিচে চাকা থাকলে তো কথাই নেই। আর আজকাল ল্যাপটপ বহন করা যায় এমন ব্যাকপ্যাক অবশ্যই থাকা উচিত।

এবার আপনার প্রয়োজন মতো ব্যাগ কিনুন।