ঈদ ফ্যাশনে গাউন

কান চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে হইচই শেষ। তারকাদের পোশাক এবারও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের গাউনগুলো মন জয় করেছে ফ্যাশনপ্রেমীদের। শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই নয়, গাউন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে আমাদের দেশীয় বুটিক হাউসগুলোতেও। ঈদের ফ্যাশনে এবার জায়গা করে নিয়েছে এই পোশাক। নজর কাড়বে আড্ডা থেকে দাওয়াতের আসরগুলোয়।

কামিজ বা শাড়ি তো থাকছেই, এবারের নতুন আকর্ষণ গাউন। মডেল: এলভিন ও ইশা, পোশাক: ড্রেসিডেল ও মুমু মারিয়া, সাজ: ফারজানা মুন্নী, ছবি: কবির হোসেন
কামিজ বা শাড়ি তো থাকছেই, এবারের নতুন আকর্ষণ গাউন। মডেল: এলভিন ও ইশা, পোশাক: ড্রেসিডেল ও মুমু মারিয়া, সাজ: ফারজানা মুন্নী, ছবি: কবির হোসেন

আমায় কি মানাবে?
গাউন পরলে কি মানাবে? গাউন কেনা বা বানানোর সময় এই প্রশ্ন প্রথমেই মনে আসবে। চলতি ফ্যাশনের কোনো পোশাক প্রথমবার পরতে গেলে একটু দ্বিধা কাজ করে। মুমু মারিয়ার প্রধান ডিজাইনার মারিয়া সুলতানা বলেন, গাউন পরার ক্ষেত্রে বয়স বা শারীরিক কাঠামোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্মবিশ্বাস। গাউন পরলে একটা নির্দিষ্ট কাট পরতে হবে—এমন নয়। আরামবোধ করবেন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বহন করতে পারবেন—এমন কাটের গাউন বেছে নিয়েই পরা উচিত।
যেহেতু বৃষ্টি থাকবে ঈদের সময়, তাই মাটি পর্যন্ত ছেঁায়ানো গাউনগুলো দাওয়াতের জন্য ওঠানো থাক। বাইরে ঘুরে বেড়ানোর সময় পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা গাউনগুলো বেশি মানানসই। আপনার শারীরিক কাঠামো যা-ই হোক, গাউন পরতে পারবেন। শুধু একটু সচেতনভাবে কাটছঁাট বেছে নিতে হবে। এ বিষয়ে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরলেন মারিয়া সুলতানা। কোমরের দিকটা ভারী হলে হাফ বডি স্টাইলে বানানো গাউন পরলে দেখতে ভালো লাগবে। তাহলে কোমরের চওড়া ভাবটা চোখে পড়বে না। ভারী গড়ন হলে প্রিন্সেস লাইন স্টাইলে বানানো গাউনগুলো বেছে নিন। একটু লম্বা ও শুকনা দেখাতে সাহায্য করে এটি। যঁারা একটু খাটো, তঁারা একরঙা গাউনের দিকে মনোযোগ দিন। হেম লাইন সামনে ছোট আর পেছনে বড়—এ কাটটিতে তঁাদের লম্বা দেখাবে। হাফ বডি স্টাইলে বানানো গাউনগুলো এ ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলাই ভালো। দুটো চড়া রঙের মিশ্রণে না গিয়ে কাছাকাছি দুটো রঙের গাউন বেছে নিতে পারেন। শুকনো শারীরিক কাঠামো যঁাদের, তঁারা হালকা রং, বড় বড় ফুলের মোটিফ, চার-পঁাচটা উজ্জ্বল রং আছে—এমন গাউন বেছে নিন।

পশ্চিমা ধঁাচের গাউনও মিলবে
পশ্চিমা ধঁাচের গাউনও মিলবে

গাউনের স্টাইল
বিভিন্ন কাটের গাউন পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এ লাইন, হেম লাইনে এসে সামনে-পেছনে উঁচু-নিচু ও দুই পাশে ঝুলে গেছে, বডি হাগিং, হাফ বডি স্টাইল, এক ছাঁটের গাউন ইত্যাদি কাট প্রাধান্য পাচ্ছে।
ড্রেসিডেলের ডিজাইনার মায়া রহমান বলেন, ‘জর্জেট, শিফন, সাটিন, নেট, লিনেন বিভিন্ন কাপড় দিয়ে গাউন তৈরি করা হচ্ছে। দেশীয় ছোঁয়া রাখতে টাইডাইয়ের ব্যবহার করেছি। প্রিন্টের সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাজও প্রাধান্য পেয়েছে গাউনগুলোতে।’ বৃষ্টির গুমোট আবহাওয়া কাটাতেই এবার উজ্জ্বল রংগুলো এগিয়ে এসেছে। তবে রাতের দাওয়াতে পরার জন্য কালো, গাঢ় নীল, মেরুন, বেগুনি ইত্যাদি রং ব্যবহার করা হচ্ছে।
খুব যেন ভারী বোধ না হয়, এ জন্য পাতলা কাপড় দিয়ে গাউন বানানো হচ্ছে। শিফনের কাপড়ে পানি পড়লে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। পার্টি লুকটাও চলে আসে। শিফন, জর্জেট, নেট, নরম ক্রেপ সিল্ক, লিনেনের তৈরি গাউন পরে আরাম পাওয়া যাবে। এ কাপড়ের তৈরি গাউনগুলোর কাটও ভালো হয়। গরমের কথা চিন্তা করে ছোট হাতা কিংবা হাত কাটা রাখা হচ্ছে বেশি। লম্বা হাতাও আছে।
আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের অংশ হলেও আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির কিছুটা ছেঁায়া কাটছঁাটে চলে এসেছে। অঞ্জন’সের ডিজাইনার শাহীন আহমেদ বলেন, ‘গাউনের মতোই দেখতে কিছু কামিজ করেছি। আনারকলি এবং এ লাইন কাট দেওয়া হয়েছে। কম বয়সীদের কথা মাথায় রেখে লিনেন কাপড়ের ব্যবহার করা হয়েছে। একটু বয়স্কদের সিল্কের কাপড় দিয়ে বানানো কামিজগুলো মানাবে।’
রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা মুন্নী গাউনের সঙ্গে চুল বেঁধে রাখার পরামর্শ দিলেন। তিনি বলেন, গলার কাট কী রকম, তার ওপর নির্ভর করে চুলের স্টাইল করা উচিত। উঁচু গলা হলে অবশ্যই চুল বেঁধে রাখতে হবে। চুল বঁাধা থাকলে দেখতে পরিপাটি লাগবে। গলা বড় থাকলে চুলটা বাইরের দিকে কেঁাকড়া করে ছেড়ে রাখা যেতে পারে। এখন একটু অগোছালো করে চুল বঁাধা হচ্ছে। এ স্টাইল বাড়িতেই করা যায়। খুব ছোটখাটো গয়না পরুন। বড় গলা হলে কানের দুলটা বড় হতে পারে। সকালে খুব ভারী মেকআপ না করলেই ভালো।

লম্বা কামিজের ঢঙে করা হয়েছে কিছু গাউনের নকশা
লম্বা কামিজের ঢঙে করা হয়েছে কিছু গাউনের নকশা