কেশসজ্জার অনুষঙ্গ

বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে নানা রকম অ্যাকসেসরিজে কেশসজ্জা। একদম চমকে দেওয়ার মতো নতুন কিছু নয়, কিন্তু দেখলে মনে হবে আশি-নব্বইয়ের দশক থেকে টাইম মেশিনে চেপে এসে নতুন সাজে সেজেছে। এ জন্য জেনে নেওয়া যেতে পারে হেয়ার অ্যাকসেসরিজের চলতি ধারা সম্পর্কে।

ফ্যাশন ট্রেন্ডে পোশাকের পাশাপাশি ‘আশাক’ও এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আশাক বলতে বোঝাচ্ছি অনুষঙ্গের কথা। ফ্যাশনসচেতন যেকোনো মানুষই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের অ্যাকসেসরিজ পরতে পছন্দ করেন। এর মধ্যে বেশ প্রাধান্য পায় হেয়ার অ্যাকসেসরিজ। বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে নানা রকম অ্যাকসেসরিজে কেশসজ্জার। একদম চমকে দেওয়ার মতো নতুন কিছু নয়, কিন্তু দেখলে মনে হবে আশি-নব্বইয়ের দশক থেকে টাইম মেশিনে চেপে এসে নতুন সাজে সেজেছে। এ জন্য জেনে নেওয়া যেতে পারে হেয়ার অ্যাকসেসরিজের চলতি ধারা সম্পর্কে।

ছবি: গুস্তাভো ফ্রিং, পেকজেলসডটকম

হেয়ার পিন

হেয়ার পিনের কথা বললে সবার আগে আসবে ববি পিনের কথা। প্রাচীনকালে দূরপ্রাচ্যের মেয়েরা চুল আটকাতে যে ধারালো পিন ব্যবহার করত, তারই ‘কোমল’ রূপান্তর ববি পিন। আমাদের দেশের অনেকে একে পারলার ক্লিপ বলেন। কারণ, পারলারে নানা রকমের কেশসজ্জায় কালো রঙের জিনিসটি ব্যবহার হয় খুব। নব্বইয়ের দশকে দেখা যেত, মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় চুলে বেণি বা ঝুঁটি করে দুই সাইডে কালো ববি পিন লাগাত। অনুষঙ্গটি সব সময়ই ছিল।

হেয়ার পিন
ছবি: কটনবরো, পেকজেলসডটকম

তবে এখন নানা রঙের নানা ঢঙের ববি পিন পাওয়া যাচ্ছে। লাল, নীল, আকাশি, গোলাপি ছাড়াও সোনালি ও রুপালি রং খুব চলছে। প্রিন্ট, মুক্তা বা পাথর বসানো ববি পিনও বেশ দেখা যাচ্ছে। মোটিফে আছে তারা, পাতা, হৃদয়, বো-টাই। ব্যবহারের ধরনে এসেছে বেশ নতুনত্ব। দুই পাশে বা এক পাশে সিঁথি করে দুটি নয়, একসঙ্গে একই রকম বা নানা ডিজাইনের অনেকগুলো ববি পিন পরা হচ্ছে খুব। সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই পরা যেতে পারে এটি। তবে পার্টিওয়্যার বা গর্জাস পোশাকের সঙ্গে সোনালি, রুপালি, মুক্তা, পাথর বা ক্রিস্টালের এ পিন ভালো মানায়।

হেয়ার ক্লিপ বা ব্যারেট

ব্যারেট
ছবি: কটনবরো, পেকজেলসডটকম

ছোট–বড় যেকোনো চুলের জন্যই হেয়ার ক্লিপ বা ব্যারেট আদর্শ অনুষঙ্গ। গত দুই বছরের সব কটি ফ্যাশন উইকের স্ট্রিট স্টাইলসহ রানওয়েতে ডেকোরেটিভ হেয়ার ক্লিপের ব্যবহার খুব দেখা গেছে। এ বছরও ধারাটি বজায় থাকবে। ব্যারেটের চিরায়ত নকশার পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে নতুন কিছু ডিজাইন। ফ্যাব্রিক ও রিবন কভারড আর মুক্তা ও পাথরখচিত ব্যারেট বা হেয়ার ক্লিপের ব্যবহার বেড়েছে।

সাধারণ পোশাকের সঙ্গে এমন অনুষঙ্গ দিয়ে সহজেই লুকে একটি আকর্ষণীয় স্টাইল স্টেটমেন্ট আনা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন রকমের জনপ্রিয় শব্দের ডুডল জায়গা করে নিয়েছে ব্যারেটের ওপরের অংশে। কিছুদিন বিরতি দেওয়ার পর আবার ফিরে এসেছে লেপারড বা চিতা বাঘের প্রিন্ট। গ্লিটার আর ক্লাসিক টোরটোয়িসশেল প্রিন্টের সঙ্গে এখন ব্যারেটে দেখা যাচ্ছে এই লেপারড প্রিন্ট। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকের সঙ্গে বেশি মানালেও যদি কেউ স্টাইলে বোল্ড স্টেটমেন্ট তৈরি করতে চায়, তাহলে শাড়ি বা সালোয়ার–কামিজের সঙ্গে নির্দ্বিধায় এ ধরনের ব্যারেট বা হেয়ার ক্লিপ মিক্স বা ম্যাচ করে পরা যেতে পারে।

হেয়ারব্যান্ড

হেয়ারব্যান্ড
ছবি: র‌্যানডাইলি ডেলিজেরো, পেকজেলসডটকম

নব্বই দশকের এই আদূরে অনুষঙ্গটি ফিরিয়ে আনার পেছনে হাত আছে ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনের। বছর তিনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে আকর্ষণীয় সব হেডব্যান্ডে। এরপর থেকে বেলা হাদিদ, জেন্ডায়া, জেসিকা অ্যালবা, কায়া গারবার, সালমা হায়েকের মতো বাঘা বাঘা সেলিব্রেটি রেড কার্পেট শো থেকে শুরু করে সুপার শপ, সবখানেই হেডব্যান্ড পরা অবস্থায় ক্যামেরা বন্দী হচ্ছেন।

হেয়ারব্যান্ড
ছবি: ফিলিপ ওয়ার্প, পেকজেলসডটকম

এখন মার্কেট ছেয়ে গেছে স্টাইলিশ ডিজাইনের সব হেডব্যান্ডে। সিঙ্গেল প্যাডেড, ডিপলি প্যাডেড, বিডেড ব্যান্ডের পাশাপাশি আছে টুইস্টিং রিবন হেডব্যান্ড। এর অর্নামেন্টেশনে বিভিন্ন ফ্যাব্রিকের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এর ভেতর এগিয়ে আছে ভেলভেট। এ ছাড়া অ্যানিমেল প্রিন্ট ও ফ্লোরাল প্রিন্টও বেশ দেখা যাচ্ছে। কোনো উৎসবে পরার জন্য অনেকে বেছে নিচ্ছেন মুক্তা ও পাথর বসানো হেডব্যান্ড। আর একদম মিনিমালিস্টদের জন্য আছে সিম্পলের ভেতর গর্জাস সিঙ্গেল বিডেড বা প্লেইন কম্ব বা জিগজ্যাগ কম্ব হেডব্যান্ড।

স্ক্রাঞ্চি

স্ক্রাঞ্চি
ছবি: স্কাইলার ইউয়িং, পেকজেলসডটকম

এখন পর্যন্ত যত পুরোনো ট্রেন্ড ফিরে এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ক্রাঞ্চি। পিন্টারেস্টের একটি প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, ২০২০ সালে সব ট্রেন্ডের মধ্যে শীর্ষ স্থানে এখন স্ক্রাঞ্চি। এই ট্রেন্ডসেটার ওয়েবসাইটের খোঁজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩০৯ শতাংশ। ফ্যাশন সমালোচকদের মতে, এই জনপ্রিয়তার রহস্য এর কোমলতা এবং নানা রকম স্টাইলিংয়ের সুযোগ। প্লাস্টিক রাবার ব্যান্ড চুলের ড্যামেজের জন্য দায়ী। কিন্তু স্ক্রাঞ্চিতে চুলের কোনো ক্ষতি হয় না। এ জন্য অনেক হেয়ার এক্সপার্ট এটি দিয়ে চুল বেঁধে ঘুমানোর পরামর্শ দেন।

ওয়েস্টার্ন টু এথনিক, সব ধরনের লুকের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায় এটি। স্লিক হাই পনিটেইল, লো পনিটেইল, হাফ বান, সাইড পনিটেইল মেসি বান, স্পেস বান—সব রকমের হেয়ারস্টাইল করা যাবে এটি দিয়ে। পোশাকের পাশাপাশি জুতা, বেল্ট, ব্যাগ—এমনকি লিপস্টিকের সঙ্গেও ম্যাচিং করে পরা যেতে পারে। এখন অবশ্য মাস্কের সঙ্গেও মিক্স-ম্যাচ-কন্ট্রাস্ট করে অনেকে এটি পরছেন। ভেলভেট, কটন, সিল্ক, স্যাটিন, অরগ্যাঞ্জা, জর্জেট, জ্যাকারড, চারমিউস, সফট লেদারের স্ক্রাঞ্চি পাওয়া যাচ্ছে। প্যাটার্নে এসেছে ফ্যাশনেবল ফ্লোরাল, ফ্রুট এবং অ্যানিম্যাল প্রিন্ট। বাদ যায়নি চেক ও পোলকা ডট। সাধারণ স্ক্রাঞ্চির পাশাপাশি শর্ট বো এবং লং বো স্টাইলের জয়জয়কার এখন সবখানেই। টুইগি এবং জাম্বো সাইজ স্ক্রাঞ্চির ব্যবহারও বেশ লক্ষণীয়।