ক্রেতার মনোভাবে পরিবর্তন জরুরি

বড় কোনো উপলক্ষ সামনে রেখেই ফ্যাশন ট্রেন্ড তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোই সেই দায়িত্ব পালন করে। আমাদের এখানে বিষয়টা উল্টো। এখানে ক্রেতাদের মনোভাবকে গুরুত্ব দিয়েই পণ্য তৈরি করা হয়। অথচ আমাদের ক্রেতারা এখনো সেকেন্ডারি ট্রেন্ডেই থেকে গেছেন।

প্রতীকী ছবিছবি: প্রথম আলো

ঈদ ট্রেন্ডে গ্লোবাল-লোকাল মিলিয়ে একেবারে খারাপ অবস্থাতে নেই আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। হ্যাঁ, আরও ভালো হতে পারে। কমপক্ষে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড হতে পারে। কিন্তু সেখানে সবচেয়ে বড় বাধা ক্রেতা মনোভাব। আমাদের ফ্যাশন ফলোয়াররা যেমন সেকেন্ডারি ট্রেন্ডের বেশি মাথায় নিতে কমই পারে, তেমনি ব্র্যান্ড নলেজের বিশাল গ্যাপের কারণে বায়াসনেসও দেখা যায়।

প্রতীকী ছবি
ছবি: প্রথম আলো

ফলোয়ারস ও ফ্যাশন ভিকটিম

প্রতীকী ছবি
ছবি: প্রথম আলো

আমাদের দেশে নারীদের একটা বড় অংশ ভারতীয় সোপ অপেরায় যা দেখেন, সেটাকেই ফ্যাশন হিসেবে গণ্য করেন। কখনো সরাসরি এই কালচারই আমাদের ফ্যাশন। আবার কখনো পশ্চিমা বিশ্বের উৎসাহে ভারতীয়রা যেটা করছে তথা সেকেন্ডারি ট্রেন্ডই আমাদের দেশের ফ্যাশন হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা এক। যেমন গ্লোবাল ফ্যাশনে ছেলেদের বিয়ার্ড ফ্যাশন বা দাড়ির ফ্যাশন বা মেয়েদের কাফতান প্যাটার্ন কবে থেকে এসেছে, তা নিয়ে আমাদের ধারণা খুব কম।

বরং সেই ট্রেন্ড ভারতীয় মিডিয়াতে এলেই আমাদের সবচেয়ে বড় অংশটি তা ফ্যাশন হিসেবে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে ফ্যাশন ভিকটিমও তৈরি হচ্ছে আমাদের সমাজে। তা আরেকটু সহজ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নন-ব্র্যান্ড শপগুলো। যার জন্য অনেক সময় ডিজাইনারের সৃজনশীলতাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়। অন্তরায় হয় সঠিক ফাস্ট ফ্যাশন বা ট্রেন্ড তৈরির। কারণ তারা দিকে ঝুঁকতে পারে না।

ব্র্যান্ড সেন্স

প্রতীকী ছবি
ছবি: প্রথম আলো

আমাদের দেশের ক্রেতা মনোভাব অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ভাগ করা সম্ভব হয় না একটি মাত্র কারণে; তা হচ্ছে এই ব্র্যান্ড সেন্স। বিগত সময়ের বিশ্লেষণ ও জনপ্রিয় ট্রেন্ডগুলো দেখে সহজেই বলা যায়, অধিকাংশ ক্রেতার ব্র্যান্ড সেন্স নেই। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ, ভারতীয় বা পাকিস্তানি ক্যাটালগের সালোয়ার কামিজ কেনার হিড়িক। এমন না যে টাকা কম লাগে, বরং অনেক ক্ষেত্রে দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের থেকে বেশিই লাগে। একইভাবে ছেলেদের বেলায়ও রয়েছে চাইনিজ বা থাই প্রোডাক্ট কেনার আগ্রহ। যে কারণে অনেক সময় ব্র্যান্ডগুলো নতুন ট্রেন্ডের ব্যাপারে ভাবতে ভয় পায়, বরং অনুসরণ করে নিরাপদ অবস্থানে থাকে। তাতে অন্তত বিক্রিটা ঠিক থাকে।

ব্র্যান্ড লয়ালটি

প্রতীকী ছবি
ছবি: বাটা বাংলাদেশের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

আমাদের মধ্যে ব্র্যান্ড লয়ালটির বড়ই অভাব। তার প্রথম কারণ নিজে কোন স্টাইলের অনুসরণকারী, তা না বোঝা। যেমন কেউ পপ ফ্যাশন প্রোডাক্টও কেনে আবার ক্ল্যাসিকও কেনে। কারণ সে শুধু জানে এসব চলে, মিডিয়াতে পরতে দেখে। তাই নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ড তার দরকার নাই। ‘কমে পাওয়া যাবে, অফার আছে’ ইত্যাদি মনোভবের জনপ্রিয়তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও আছে। কিন্তু আমাদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু বেশিই, তাই ব্র্যান্ডের নাম-মান ম্যাটার করে না অনেক সময়। এর জন্য অবশ্য আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে দায়ী করাই যায়। কারণ আমাদের বেশির ভাগই তো মধ্যবিত্ত।

চকচক করলেই সোনা হয়

প্রতীকী ছবি
ছবি: প্রথম আলো

জ্বি, ঠিকই পড়েছেন। আমাদের একটা বিরাট সংখ্যায় ক্রেতার মনোভব এমনই যে ‘চকচক করলেই সোনা’। উদাহরণ আগেই দিয়েছি। ওই যে অনেক কাজ করা ঝকমকা ডিজাইনের পাকিস্তানি বা ভারতীয় জামা। আর ঝিকিমিকি রঙের থাই বা চাইনিজ টি-শার্ট, প্যান্ট বা জুতা। এখানে বলার আছে দুটো বিষয়। প্রথমত, আমাদের জ্ঞান উপমহাদেশের বাইরে আমাদের নিয়ে যেতে পারেনি; মানে আমরা গ্লোবাল ফ্যাশনের বাইরে। দ্বিতীয়ত, আমাদের নিজেদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়েও আমাদের পরিপূর্ণ আগ্রহ নেই। থাকলে আমরা এমন দোঁআশলা হতাম না। সেকেন্ডারি ট্রেন্ড দ্বারা প্রভাবিত হতাম না। হয় আন্তর্জাতিক মূলধারার ফ্যাশন অনুসরণ করতাম অথবা নিজেদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কিছু ধরে রাখতাম। তাই যত দিন পর্যন্ত চকচক করলেই সোনা হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত নিজেদের ফ্যাশন করা কঠিন।

এবারের ঈদ ট্রেন্ডেও চকচক করলে সোনা হয়েছে। ব্র্যান্ড লয়ালটি কম দেখা গেছে। তাই ট্রেন্ডও থেকে গেছে সেকেন্ডারি। সব মিলিয়ে বলা যায়, আমাদের ক্রেতা মনোভাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় স্তরের ফলোয়ার হয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করে।