নেকলেসের বাহার

ছবি: প্রথম আলো

পবন সারা, চম্পাকলি, সাত নাড়া, থুসি, কান্তি—আরও কত কত নাম আছে নেকলেস নামের গয়নাটির। আর নেকলেস শব্দটি শুনলেই গলাভরা গয়নার একটা ছবি ফুটে ওঠে চোখের সামনে। মনে হয়, এক অপূর্ব রূপবতী নারী এক গলা সোনার গয়না পরে দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে।

ধীরে ধীরে নেকলেস নারীদের অধিকারে চলে আসে
ছবি: প্রথম আলো

অন্তত বইপত্রে, সিনেমায় আমরা সে রকমই দেখে আসছি। কিন্তু শুনে অবাক হবেন, নারীরা এখন নেকলেস ব্যবহার করলেও একসময় এটি পুরুষদেরও গয়না ছিল। নারী–পুরুষ উভয়েই সে সময় গয়না ব্যবহার করত। ধীরে ধীরে কীভাবে যেন নেকলেস নারীদের অধিকারে চলে আসে।

পরবর্তী সময়ে, বিশ শতকে পুরো পৃথিবীর ফ্যাশন–সচেতন নারীদের কাছে নেকলেসকে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় করে তোলেন ডাকসাইটে ফ্যাশন ডিজাইনার শ্যানেল। তিনি তাঁর কস্টিউম জুয়েলারির ধারণায় নেকলেসকে ফ্যাশন–সচেতন আধুনিক নারীদের উপযোগী বাহুল্যহীন ছিমছাম করে তুলেছিলেন। কিন্তু ফ্যাশন বলে কথা। আজকের ট্রেন্ড কালকেই উবে যেতে পারে। শ্যানেলের যুগও পাল্টেছে।

বিশ শতকে পুরো পৃথিবীর ফ্যাশন–সচেতন নারীদের কাছে নেকলেসকে জনপ্রিয় করে তোলেন ফ্যাশন ডিজাইনার শ্যানেল
ছবি: প্রথম আলো

নেকলেসের ফ্যাশনও বদলেছে। স্লিম ছিমছাম নেকলেসের বদলে এখন আবার এসেছে চোখে পড়ার মতো করে নেকলেসের ব্যবহার।

এখন গলায় একটা বড় নেকলেসই আপনার সাজের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হয়ে উঠতে পারে। পোশাকটা হবে তারই পরিপূরক। ‘বোল্ড’, ‘স্টেটমেন্ট’, ‘চাংকি’—নানা রকম বিশেষণ বসানো হলেও ব্যাপার একই। আকারে বড়, সবার আগে চোখে পড়ে এমন নেকলেসই এখন চলছে।

নকশায় বৈচিত্র্য

সাধারণ সুতির কামিজ বা টপের সঙ্গে ফ্যাশনেবল নেকলেস বেশ পরছেন তরুণীরা। পোশাকের গলার অংশটা লো কাট বা ছড়ানো হলে গলার নিচের ওই খালি অংশটা ভরাট করে ফ্যাশনেবল নেকলেস পরুন। ধাতুর তৈরি প্যাঁচানো নকশার (স্পাইরাল) নেকলেস বেশ চলছে এখন। বিভিন্ন শোরুম ঘুরে দেখা যায়, পাথরের বদলে ধাতব নেকলেসের চাহিদাই বেশি।

ধাতুর তৈরি প্যাঁচানো নকশার নেকলেস বেশ চলছে এখন
ছবি: প্রথম আলো

সাদামাটা পোশাকের সঙ্গেই এ ধরনের ‘স্টেটমেন্ট নেকলেস’ মানানসই। পোশাকের ওপরের ভাগে নকশা থাকলে তাতে নেকলেস ও পোশাকের নকশা দুটোই চাপা পড়ে যায়। এ ধরনের নেকলেস যখন প্রথম আসে, তখন শুধু পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গেই পরার উপযোগী ছিল। এখন সংগ্রহে বৈচিত্র্য এসেছে, শাড়ির সঙ্গে স্বচ্ছন্দে পরা যায় এমন নেকলেসও পাওয়া যাচ্ছে। অ্যান্টিক ধাঁচের বড় নেকলেসগুলো শাড়ির সঙ্গে মানানসই হবে।

তামা, পিতল, রুপা ইত্যাদি ধাতুর রঙে নেকলেসগুলো বেশি পাওয়া যাচ্ছে। নানা রকম ফুল, পয়সা, জ্যামিতিক মোটিফ দিয়ে নকশা করা হচ্ছে। চোকার, বিব, কলার কিংবা দু-তিন ছড়ার স্টাইলে তৈরি হচ্ছে এগুলো।

তামা, পিতল, রুপা ইত্যাদি ধাতুর রঙে নেকলেসগুলো বেশি পাওয়া যাচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

গাউন কিংবা ম্যাক্সি ড্রেসের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট নকশা ও রঙের বড় নেকলেস এখন খুব পরতে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের মডেল ও অভিনয়শিল্পীদের সাজপোশাকেও এর ব্যবহার চলছে। কথা হয় মডেল দোয়েলের সঙ্গে। বড় নেকপিস দিয়ে পছন্দের লুক কীভাবে তৈরি করেন, তা জানিয়ে দিলেন তিনি। ‘ছিমছাম সাদা শার্টের সঙ্গে কমলা কিংবা ম্যাজেন্টা রঙের বড় নেকলেস পরি। চুলটা উঁচু খোঁপা করে বেঁধে নিই। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা ফটোশুটে অনুজ্জ্বল কোনো রঙের গাউন পরি, তার সঙ্গে গলায় থাকে ঝকঝকে বড় নেকলেস। এর সঙ্গে অন্য কোনো অলংকার পরি না। তবে মাঝেমধ্যে কানে খুব ছোট এক পাথরের টপ ব্যবহার করে থাকি।’

কোরিয়া, ভারত—এসব দেশ থেকে আনা হয় নেকলেস। এ ছাড়া দেশেও কিছু তৈরি হয়।

একজন বিশেষজ্ঞ জানালেন, কোরিয়ান নেকলেসগুলোতে পাথরের ব্যবহার বেশি। ভারতীয় নেকলেস নানা রকম ধাতুর তৈরি হয়ে থাকে। আমাদের দেশি নেকলেসগুলো তৈরিতে সাধারণত তামা ব্যবহার করা হয়।

গাউন কিংবা ম্যাক্সি ড্রেসের সঙ্গে বড় নেকলেস এখন খুব পরতে দেখা যাচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

রুবাইয়া দীপা বলেন, ‘ইদানীং চওড়া ও ভারী নেকলেসগুলোর চল দেখা যাচ্ছে। পয়সার মোটিফে নকশা করা নেকলেসগুলো বেশ জনপ্রিয় এখন। বোহিমিয়ান বা হিপ্পি ধাঁচের এ নেকলেসগুলো দু-তিন ছড়ার বা আরও জমকালো হয়।’

কোথায় পাওয়া যাবে

দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে দেশি নকশার নেকলেস পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন দোকানেও পাওয়া যাবে বিভিন্ন ধরনের নেকলেস। এ ছাড়া অনেকে এখন অর্ডারের ভিত্তিতেও বানিয়ে দিয়ে থাকেন পছন্দের নেকলেস।