পরিবেশবাদী ফ্যাশন উদ্যোক্তা

ফাস্ট ফ্যাশনের জোয়ার থাকলেও স্রোতের বিপরীতে গিয়ে টেকসই বিশ্ব গড়ার কাজ নিজের মতো করে করছেন অনেকেই। তেমনই একজন ফ্যাশন উদ্যোক্তা আনুশা আলমগীর। পোশাকের বর্জ্য কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

কালারডটঢাকার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

যেকোনো শিল্পকর্মের আবেদন ব্যক্তি ভেদে আলাদা। ফ্যাশনও ঠিক তা-ই। একেকজনের কাছে ফ্যাশনের সংজ্ঞা ভিন্ন। ফ্যাশন আসলে ব্যক্তিগত পরিচয়, স্বাধীনতা এবং আকাঙ্ক্ষারই বিবৃতি। মানুষের পোশাক, কিছুটা হলেও তার ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে থাকে। ফ্যাশন বিষয়টা আমাদের ভাব প্রকাশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা টুলও বটে। বর্তমান প্রজন্ম বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়েই ভাবে। তারা অনেক বেশি ফ্যাশন-সচেতনও।

তরুণ ফ্যাশন উদ্যোক্তা আনুশা আলমগীর
ছবি: লেখক

এই প্রজন্মেরই প্রতিনিধি আনুশা আলমগীর। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ উদ্যোক্তা সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় ব্যাচেলার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব আর্ট থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স পড়ছেন। তিনি ‘থিংস টু ডু আদার দ্যান সোশ্যাল মিডিয়া’ ও  ‘বাংলা সিনেমার কালারিং’ বইয়ের লেখক; পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণেও রয়েছে দক্ষতা। এর বাইরে তিনি একজন ফ্যাশন উদ্যোক্তাও।

বছর দুয়েক ধরে তিনি ইনস্টাগ্রামে চালাচ্ছেন colors.dhaka নামে একটি পেজ। ইতিমধ্যে এটা বেশ জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে। পেজটি বেশ গোছানো। সেখানে স্পষ্ট তারুণ্যের বিষয়টি। ছবিতে ভেঙে ফেলা হয়েছে ফ্যাশন ফটোশুটের একঘেয়েমি।

কালারডটঢাকার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

তাঁর উদ্যোগ বেশ ইন্টারেস্টিং। কারণ তিনি যে পোশাক বিক্রি করেন, তা সবই সেকেন্ড হ্যান্ড। তবে সেখানে রয়েছে নিজের সৃজনশীলতা। আনুশা আসলে বিভিন্ন জায়গা থেকে অসাধারণ কিছু সেকেন্ড হ্যান্ড কাপড় সংগ্রহ করেন। তারপর নিজের মতো করে সাজিয়ে সেই কাপড়গুলো অত্যন্ত যুক্তিসংগত দামে বিক্রি করেন তাঁর এই colors.dhaka পেজের মাধ্যমে।

অল্প সময়ের মধ্যেই পেজটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এই পেজের গ্রাফিকস, নকশা এবং উপস্থাপনা দৃষ্টি কেড়েছে তরুণ প্রজন্মের। এর সঙ্গে রয়েছে সাশ্রয়ী দামে আকর্ষক পোশাক।

তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হচ্ছিল আনুশার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ফ্যাশন তাঁর কাছে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যম। তবে বিষয়টি অগভীর এবং অপব্যয়ের মাধ্যম হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। আবার ফ্যাশনকে দুর্দান্ত শিল্প হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।

কালারডটঢাকার ফটোশুটেও আছে নতুনত্ব
ছবি: কালারডটঢাকার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

আগেই বলেছি, নানা ধরনের কাজ নিয়ে মেতে আছেন তিনি। ডিজাইন করেন এবং শিল্প নিয়ে বই লেখেন। আর এখন ফাস্ট ফ্যাশনের বিপরীত স্রোতে গিয়ে সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক নিয়ে কাজ করছেন। এসব কাজ তিনি করেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে। এ প্রসঙ্গে বললেন, আমি যেহেতু বিভিন্ন রকমের কাজ করি, তাই আমার মনে হয় না বাংলাদেশে এমন কেউ আছেন, যাঁকে আমি ফলো করতে পারি।

কথায় কথায় তাঁর colors.dhaka পেজের প্রসঙ্গ ওঠে। আনুশা জানান, colors.dhaka শুরু করি প্রায় ২ বছর আগে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সৃজনশীল এবং দুর্দান্ত তরুণ বন্ধু আমাকে ভীষণ সাপোর্ট করেছে। এই যাত্রা কোথায় গিয়ে পৌঁছায়, তা দেখতে আমি ভীষণ আগ্রহী।

ফ্যাশন বর্জ্য কমাতে প্রত্যয়ী কালারডটঢাকা
ছবি: কালারডটঢাকার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

তবে কেবল বিক্রি নয়, এর পাশাপাশি অন্য কিছুই রয়েছে আমার ভাবনায়, বললেন তিনি, আসলে আমি বাংলাদেশে টেকসই ফ্যাশনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চাই। আমি চাই গার্মেন্টসের মালিকেরা তাঁদের বিষাক্ত বর্জ্য সম্পর্কে যেন সচেতন হন। তাঁরা যেন তাঁদের নতুন পোশাকের দ্রুত ও অধিক উৎপাদন কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে, জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে, এই বিষয় নিয়ে একটু ভাবেন। তাঁরা কাপড়ের পুনর্ব্যবহার নিয়ে কাজ করতে এগিয়ে আসুক।

এ জন্য ফাস্ট ফ্যাশনে উৎসাহী নন তিনি। বরং পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবকে বিবেচনায় রেখে তিনি টেকসই ফ্যাশনকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। আর এর মধ্যে দিয়েই পরবর্তী প্রজন্মকে ফ্যাশনসচেতন ও নির্ভীক করে তোলার পাশাপাশি তাদের পরিবেশসচেতনও করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

লেখক: ফ্যাশন ডিজাইনার