আপনার পুরোনো পোশাক আছে? সেটা দিয়ে আপনি একেবারে নতুন পোশাক বানিয়ে নিতে চান? সম্ভব। তা–ও মাত্র পাঁচ ঘণ্টায়। চমৎকার এই উদ্যোগ নিয়েছে সুইডিশ রিটেইল জায়ান্ট এইচ অ্যান্ড এম।
বস্তুত, নানা বর্জ্যই এখন সারা বিশ্বের মহা মাথাব্যথার কারণ। এর মধ্যে আবার তৈরি পোশাকশিল্পের বর্জ্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি সামলাতেই বিশেষ উদ্যোগ এইচ অ্যান্ড এমের।
এইচ অ্যান্ড এম অক্টোবর মাস থেকে কেবল তাদের স্টকহোমের আউটলেটে এই সেবা দেওয়া শুরু করেছে। তবে পুরোনো যেকোনো পোশাক থেকে এই মুহূর্তে তিন ধরনের আইটেম অর্থাৎ স্কার্ফ, সোয়েটার আর বাচ্চাদের কম্বলের যেকোনো একটি তৈরি করিয়ে নেওয়া যাবে। এর জন্য দিতে হবে ১১ থেকে ১৬ ডলার।
যে পোশাকই দেওয়া হোক, সেটাকে প্রথমে একটি মেশিনে নিয়ে সবকিছু খুলে ফেলে ছোট ছোট টুকরা করা হবে। এই মেশিনকে বলা হচ্ছে লুপ মেশিন। এরপর সেটাকে তুলার মতো তন্তুতে পরিণত করে তা দিয়ে সুতা তৈরি করে সেই সুতায় তৈরি হবে নতুন পণ্য। এভাবেই পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করছে এইচ অ্যান্ড এম।
এই প্রক্রিয়ার জন্য কোনো পানি কিংবা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হবে না বলেই জানিয়েছে এইচঅ্যান্ডএম কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া এই মেশিনে একসঙ্গে একাধিক পোশাককে রিসাইকেল করতে পারবে। অবশ্য কোনো বিশেষ উপকরণের প্রয়োজন হলে সেটা টেকসই উৎস থেকেই নেওয়া হবে। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য লাগবে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা।
এই পদ্ধতি মানুষকে, বিশেষ ফ্যাশন অনুরাগীদের সচেতন করে তোলায় বিশেষ সহায়ক হবে। কারণ, এনভায়রনমেন্ট প্রোকেটশন এজেন্সির তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই পোশাকবর্জ্য জমে ১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন। পরিবর্তে বর্তমানে পুনর্ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে মাত্রা ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন।
এইচ অ্যান্ড এম ২০১৩ সালে শুরু করে বৈশ্বিক পোশাক সংগ্রহ কর্মসূচি। তাদের সারা বিশ্বের সব আউটলেটেই পুরোনো পোশাক সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই ব্র্যান্ডের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের সব স্টোরে বিক্রীত পোশাকের পুরোটাই হবে পুনর্ব্যবহাযোগ্য উপকরণে তৈরি। আপাতত এই পরিমাণ দঁড়িয়েছে ৫৭ শতাংশ।
ওয়্যার দ্য ওয়েস্ট
বর্জ্য পরুন—এ স্লোগানে বর্জ্য থেকে নতুন পোশাক তৈরি করেছে অ্যান্ড এম। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০–কে সামনে রেখে বিশ্বখ্যাত সুইডিশ রিটেইলারের এ উদ্যোগ। বিশ্ববাসীকে ফ্যাশনেবল রেখেও ফাস্ট ফ্যাশন থেকে সরিয়ে নিতে ২০১৩ সালে শুরু করে এইচ অ্যান্ড ফাউন্ডেশন। আর তখন থেকেই শুরু হয় এ বছরের অটাম/উইন্টার কালেকশন করা হয়েছে বর্জ্য ব্যবহার করে। আর একে বলাই হচ্ছে বিউটি ফ্রম ওয়েস্ট। বর্জ্য থেকে সৃজনশীল কাপড় তৈরি করে তা দিয়েই বানানো হয়েছে পোশাক। এই বর্জ্যে রয়েছে পুনর্ব্যবহৃত সুতি কাপড়, শস্যদানা ও ওয়াইন তৈরির পর থেকে যাওয়া বর্জ্য। এসব কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও অনুষঙ্গ। এসব পোশাক পরা যাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
একই পথে হাঁটছে জারা
এদিকে একই পথে হাঁটা শুরু করেছে আরেকটি আন্তর্জাতিক রিটেইল ব্র্যান্ড জারা। তাদের বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ৩০০ স্টোরেই নেওয়া হচ্ছে পুরোনো পোশাক, জুতা ও অনুষঙ্গ। ২০২৫ সালের মধ্যে এই ব্র্যান্ড চাহিদার পুরোটাই অর্গানিক সুতি, লিনেন ও পলিয়েস্টার ব্যবহার করবে বলে গেল বছর ঘোষণা দিয়েছে তারা।
এমনিতেই বিশ্বজুড়ে ফাস্ট ফ্যাশনের বিরুদ্ধে প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। সবাই টেকসই উৎপাদনের মধ্যে দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও কার্বন নিঃসরণ রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখার পক্ষে সোচ্চার হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে যুক্তরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। ভাবছেন শীর্ষ ব্র্যান্ড আর ডিজাইনাররাও। এরই অংশ হিসেবে পথিককৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এইচ অ্যান্ড এম। তাদের অনুসরণ করছে জারা। আস্তে আস্তে এই তালিকা দীর্ঘ হবে।
সূত্র: সিএনএন/ ফোর্বস