পুরোনো কাপড়ে ফ্যাশন তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে
এই তো দুই দিন আগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়ার এক বান্ধবীর বিয়ে হলো। সেখানে তিনি শাড়ি পরে যান। সবাই শাড়িটির প্রশংসা করে জানতে চান, সেটি কোত্থেকে নেওয়া। তাঁরাও চান ঠিক ওই রকমের একটি শাড়ি কিনতে। ফেসবুকে ছবি দেওয়ার পরও একই রকম মন্তব্য ও প্রশ্ন, ‘শাড়িটা তো ভারি সুন্দর!’ ‘কোত্থেকে নেওয়া?’ ‘দাম কত?’, ‘শাড়িটা কোথায় পাব?’ উত্তরে অবশ্য সাদিয়া কিছু বলেননি। কেবল মুচকি হেসেছেন। শাড়িটা তিনি ফুটপাত থেকে কিনেছিলেন মাত্র ৩০০ টাকায়!
ছবিতে রঙিন উলের যে ব্লেজারটা দেখতে পাচ্ছেন, এটির দাম মাত্র ৫৩০ টাকা। এটি ‘বাংলাদেশ থ্রিফট’ নামের একটি ভিনটেজ অনলাইন দোকান থেকে নেওয়া। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার পোস্ট দিয়েছে তারা। সবই বিভিন্ন ঋতুর মানানসই পোশাক ঘিরে। এ সময় যেমন এই পেজ থেকে পোস্ট করা হচ্ছে ওভারকোট, কোট, ব্লেজার, জ্যাকেট, ডেনিম, ফর্মাল প্যান্টসহ নানা কিছু। এগুলোর কোনোটার দাম ৬০০ টাকার বেশি নয়। ডেনিমগুলোর দাম বেঁধে ফেলা হয়েছে ৪০০ টাকার ভেতরে। গাউন ও ফ্রকের দাম সাড়ে ৫০০ টাকার ভেতরে।
মজার ব্যাপার হলো, এখানে পোস্ট করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পোশাকগুলো টপাটপ বিক্রি হয়ে যায়। প্রতিযোগিতায় জিততে হলে সবার আগে কমেন্ট বক্সে লিখতে হয় ‘বুক্ড’। একই সময়ে অনেকে মন্তব্য করেন। তখন সবার আগে যাঁর মন্তব্য পোস্ট হয়, তিনিই পণ্যটি কেনার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হন। বাংলাদেশে এ রকম অনলাইনভিত্তিক পুরোনো (সেকেন্ডহ্যান্ড) পোশাক বিক্রির দোকানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থ্রিফট ছাড়াও থ্রিফট কালেকশন, ঢাকা থ্রিফট, থ্রিফট শপ বিডি, টিনএজ থ্রিফট, থ্রিফট স্টোর, আরবান থ্রিফট, কালারস ঢাকা, থ্রিফটটেটিকস, অ্যাস্থেস ডট বিডিসহ অনেক ঠিকানায় ঢুঁ দিয়ে আপনিও খুঁজতে পারেন আপনার পছন্দের পোশাক। অল্প টাকায় সেকেন্ডহ্যান্ড শাড়ি কিনতে ঘুরে আসেতে পারেন ইশ, ভিনটাজেজিয়ানায়।
থ্রিফট শপিং কেন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তরুণদের কাছে? সেকেন্ডহ্যান্ড কাপড় পরা আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। রাজধানীর বঙ্গবাজার একসময় বিখ্যাত ছিল পুরোনো কাপড়ের বাজার হিসেবে। সেসময় নাকি সেসব জামাকাপড়ের পকেট থেকে অনেক কিছু পাওয়াও যেত। মুদ্রা, চকলেট, কাগজ বা ছোট ছোট স্যুভেনির। তো সেকেন্ড হ্যান্ড, রিসাইকেল, আপসাইকেল করা কাপড় কেনা অনেকটা উৎসবের মতো। রস্তার পাশে বা খোলা মাঠে এরকম বাজার বসে। কেবল নিম্নবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্তরাই নয়, উচ্চ মধ্যবিত্তরাও গাড়ি থেকে নেমে এসব বাজার থেকে পছন্দসই শীতের কাপড় কেনেন।
বাংলাদেশেও এ ধরনের রিসাইক্লিং ও আপসাইক্লিং শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘চল’। এর পুরোনো কাপড় দিয়ে তৈরি করছে নতুন আউটফিট। ফ্যাশন হাউস ‘যাত্রা’ও এনেছে আপসাইকেলড কর্নার। এমনিতেই বিধিনিষেধে কেনাকাটা অনেকটাই উঠে এসেছে অনলাইনে। বিশেষ করে তরুণরা বাজারে বাজারে ঘুরে কেনাকাটা করায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। আর মহামারিকালে এই অভ্যাস তৈরির বিকল্প ছিল না। এখন যখন থ্রিফট শপগুলোও অনলাইনে উঠে এসেছে, আর অনন্য সব কালেকশন পাওয়া যাচ্ছে, তাই তরুণরা হুড়মুড়িয়ে কিনছেন এসব পোশাক।
থ্রিফট শপিং জনপ্রিয়তা পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, মানুষ এখন ফাস্ট ফ্যাশন থেকে মুখ ফিরিয়ে টেকসই ফ্যাশনের দিকে আগ্রহী হচ্ছে। এসব কালেকশন সাধারণত ‘এক পিস’ই। এ রকম পোশাক আরেকটি খুঁজে পাওয়া দায়। আর সবচেয়ে বড় কারণ হলো, এগুলো দামে সস্তা আর মানও ভালো। ভালো পরিবেশের জন্যও।
পরিবেশের ওপর থেকে চাপ আর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার অন্যতম সমাধানের নাম টেকসই ফ্যাশনশিল্প। আর টেকসই ফ্যাশনশিল্পের অন্যতম স্তম্ভ থ্রিফট শপিং। বলা হচ্ছে, একটা পোশাকের গড় যে আয়ুষ্কাল, সেটা যদি ছয় মাস বাড়ানো হয়, তাহলেই পরিবেশের ওপর চাপ অনেকটা কমে যায়। অর্থাৎ একটি পোশাক আপনি যতদিন পরেন, তার চেয়ে যদি ছয় মাস বেশি পরা হয়, তাহলেই পোশাক থেকে পরিবেশ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা অনেকটা কমে আসবে। তাই থ্রিফট শপিংয়ের এই জনপ্রিয়তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক, মানিব্যাগ, ফ্যাশন আর পরিবেশ— সব দিক থেকেই!