করপোরেট জীবনের স্বচ্ছন্দ উপেক্ষিত হয় বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার অভিপ্রায়ে। এই অভিযাত্রা কঠিন আর ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু প্রত্যয়দৃঢ় মনোবল, হাইএন্ড পোশাক বাংলাদেশে তৈরির লক্ষ্য, বিদেশমুখী ফ্যাশনিস্তাদের দেশমুখী করা আর বছরজুড়ে মানসম্মত পোশাক উপহার দেওয়া—এসব পরিকল্পনার সময়োপযোগী বাস্তবায়নেই মধ্যে ত্বরান্বিত হয়েছে নতুন এই ব্র্যান্ডের সাফল্য।
ফলে অল্পদিনেই বাংলাদেশের হাইফ্যাশনে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করে ফেলেছে হাউস অব আহমেদ। এর নেপথ্যে রয়েছেন এক তরুণ দম্পতি। আহমেদ তুহিন রেজা ও তানজিলা এলমা। এঁদের সফলতার গল্প এখন ফ্যাশনপ্রিয় লোকজনের মুখে মুখে। বলা যেতে পারে, ফ্যাশন পরিমণ্ডলে আলোচনার বিষয়ও। সম্প্রতি কথা হচ্ছিল প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তানজিলা এলমার সঙ্গে। তাঁর আত্মবিশ্বাস মুগ্ধ করার মতো।
করোনাকালেও থেমে ছিল না বিয়ে, দিন যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে সংখ্যা। ফলে বিদেশনির্ভর ক্রেতাদের এই সুযোগে তাঁরা দেশমুখী করতে পেরেছেন। এবং এই সময়ে এই প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের ছাঁটাই তো করেইনি, বরং আরও বেশি কাজ দিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের বিয়েতে যে ধরনের পোশাক সচরাচর পরা হয়, তার সবই এই ফ্যাশন ব্র্যান্ড তৈরি করে থাকে। তা-ও সম্পূর্ণ বাংলাদেশের কাপড়ে তৈরি। মান অন্যদেশের চেয়ে কম নয় বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও ভালো। উদ্ভাবনী মার্কেটিং কৌশলও তাঁদের সাফল্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এর একটি ট্র্যাঙ্ক শো।
যা হোক, এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫ মার্চ আয়োজন করে বিশেষ ফ্যাশন শোর। ম্যাজিকাল থ্রেড ২০২১ শিরোনামে এই আয়োজনের সূচনা হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডিজাইনার বিবি রাসেলের কিউ দিয়ে। বরাবরের মতো বিবি তাঁর বৈশিষ্ট্য অনুসারী পোশাক উপস্থাপন করেছেন। যেখানে মুখ্য ছিল পতাকার রং লাল ও সবুজ। জামদানি এবং চেক কাপড়ের লেয়ারিং পোশাকই তিনি উপস্থাপন করেন। অ্যাকসেসরিজও ছিল তাঁর। মোট ১১টি আউটফিট এই কিউতে প্রদর্শিত হয়।
মোট ৪০টি আউটফিট উপস্থাপিত হয় হাউস অব আহমেদের কিউতে, যেখানে প্রাধান্য ছিল ট্র্যাডিশনাল এথনিক ওয়্যারের। পুরুষ আর নারী মিশ্র সংগ্রহ। পুরো কালেকশন তৈরি হয়েছে দেশীয় কাপড়ে। ব্যবহার করা হয়েছে রাজশাহী সিল্ক, মিরপুর কাতান, র সিল্ক, মসলিন ও জামদানি।
নানা ধরনের হাতের কাজে ভ্যালু অ্যাডিশন করা হয়েছে প্রতিটি পোশাকে। পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, প্রিন্স কোট, ওয়েস্টকোট যেমন ছিল, তেমনি ছিল সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা, শাড়িসহ ফিউশন পোশাকও। প্রতিটি পোশাকের নকশা, কাট আর প্যাটার্ন এবং মোটিফের চমৎকারিত্ব নজরকাড়া। এসবই উৎসব পোশাক; বিশেষ বিয়ের সংগ্রহ হিসেবে দারুণ মানানসই।
পোশাকগুলোর নকশায় আরও স্পষ্ট হয় আমাদের সূচিশিল্পীদের সৃজন-মুনশিয়ানা। এ ধরনের উদ্যোগ এই খাতকে আরও বেগবান করবে সন্দেহ নেই। ফলে হাউস অব আহমেদ প্রশংসার্হ হতেই পারে।
প্রতিটি পোশাকের মূল কাপড়ের রং যেমন দৃষ্টি কাড়ে, তেমনি আকর্ষণ করে সেই কাপড়ের জমি অলংকরণ। মোটিফের বৈচিত্র্যের সঙ্গে সূচিকর্মের বৈচিত্র্যও পোশাকগুলোতে দিয়েছে অনন্যতা।
এই উপলক্ষে পাঁচতারকা হোটেল র্যাডিশন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের পুল সাইডের পুরো এলাকায় অতিথিদের বসার ব্যবস্থার ফাঁকে ফাঁকে ছিল হাউস অব আহমেদের পোশাক, অ্যাকসেসরি আর সরঞ্জামের নান্দনিক প্রদর্শনী। ফলে শো দেখার আগে এই হাউস সম্পর্কে নানা জানা বা সম্যক অবগত নন এমন অতিথিরা পেয়েছেন অগ্রিম ধারণা।
এই শো কোরিয়গ্রাফ করে ভারতের জনপ্রিয় মডেল ও কোরিওগ্রাফার নয়নিকা চট্টোপাধ্যায়। মেকআপের দায়িত্বে ছিল ফারজানা শাকিল’র মেওভার স্যালন। দুটি কালেকশন উপস্থাপনার মাঝে কথা বলেন অতিথিরা। বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।