ফুলের দিনে ফুলেল পোশাক

ফুল ফোটার বসন্ত দিনে পোশাকও ভরে গেছে ফুলে ফুলে। মডেল: সায়রা, পোশাক: প্রাইড গার্লস, সাজ: পারসোনা, ছবি: সুমন ইউসুফ
ফুল ফোটার বসন্ত দিনে পোশাকও ভরে গেছে ফুলে ফুলে। মডেল: সায়রা, পোশাক: প্রাইড গার্লস, সাজ: পারসোনা, ছবি: সুমন ইউসুফ

ফ্যাশনের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন তাঁরা জানেন, আন্তর্জাতিক ফ্যাশনে যা কিছু নতুন আসে, তার ছাপ এ দেশে পড়ে বেশ কিছুদিন পরে। ফুলেল ছাপার রেশ ধরেই এবারের বসন্ত ও গ্রীষ্মের সংগ্রহের পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। ফুলে ফুলে এ মুহূর্তে মাতোয়ারা নিউইয়র্ক, লন্ডন ও প্যারিসের রাস্তা। ঢাকার রাস্তাগুলোরও একই অবস্থা।
পাশ্চাত্যর মতো বাংলাদেশেও বসন্ত আর গ্রীষ্মের জন্য তৈরি পোশাকগুলোর মোটিফে ঘুরেফিরে এসেছে ফুল। সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, টপ, গাউনে রং মেলেছে ছোট বড় উজ্জ্বল পাপড়ির দল। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, এমন রঙিন বসন্তে পিছিয়ে নেই আমরাও। জংলি ছাপার ফুল দেখে যারা নাক সিটকাতেন, তারাই পরম আগ্রহে কিনছেন ফুলেল ছাপের পোশাক। কর্মজীবী, ছাত্রী আর গৃহিণী—সবাই যোগ দিয়েছেন ফুলের উৎসবে। এই যেমন রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন খালেদা আক্তার। তিনি বললেন, ’অফিসের জন্য কিছু পোশাক তৈরি করতে গিয়ে দেখেছি, ঢাকার বাজারে কাপড় ছেয়ে গেছে ফুলে ফুলে। লিনেন, সুতি ও লন কাপড়ে উজ্জ্বল রঙের বড় বড় ফুলের নকশাগুলো বেশ রুচিশীল। চোখে দেখতেও আরাম লাগে।’
গজ কাপড়ের নিচে লাগানো থাকছে নকশাদার লেস। ফুলের নকশা এখন এমনই নজরকাড়া যে মন হারাবেই। অন্যদিকে আধুনিক পোশাকের নিয়মিত ক্রেতা জান্নাত আরা বললেন, ’বন্ধুদের পার্টিতে একটু ভিন্ন ছাঁটের পোশাক পরতেই পছন্দ করি। পশ্চিমা ধাঁচের কিংবা আধুনিক ছাঁটের তৈরি গাউন, স্কার্ট, টপ বা শার্টে সাম্প্রতিক ছাপা ফুলের নকশাগুলো দারুণ লাগছে।’

ভিসকস কাপড়ে ফুলেল ছাপ
ভিসকস কাপড়ে ফুলেল ছাপ

সবুজ মেলানো রঙের দল
এই সুযোগে জানিয়ে রাখি, নিউ জার্সিতে অবস্থিত প্যান্টনি ইনকরপোরেটেডই মূলত যাচাই-বাছাই করার পর ঠিক করে দেয়, চলতি বছরের ফ্যাশনে কোন রংটি প্রাধান্য পাবে। ২০১৭-এর নির্দিষ্ট রং সবুজ। সবুজের সঙ্গে মেলে এমন সব উজ্জ্বল রংই মূলত ফুটে উঠেছে ফুলের প্রিন্টগুলোয়। লাল, গোলাপি, হলুদ, নীল, পিচ, বেগুনি, কমলা, চকলেট আর সবুজের সব কটি শেড ফুটে দেখতে পাবেন ফুলেল ছাপার যেকোনো কাপড়ে।

যে কাপড়ে ফুটছে ফুল
‘ডিজিটাল, স্ক্রিন ও এমব্রয়ডারি—এই তিন ধারায় আমরা কাপড় তৈরি করি। সেখানে ফুলের মোটিফ বেছে নিয়েছি আন্তর্জাতিক ফ্যাশনে অনুপ্রাণিত হয়ে।’ এমনটাই জানানো হলো প্রাইড লিমিটেডের ফ্যাশন উন্নয়ন দলের পক্ষ থেকে। প্রাইড মূলত ভিসকস কাপড় ব্যবহার করে তরুণদের পোশাক বানায়। স্কার্ফ তৈরির জন্য বেছে নেয় মসলিন ও টিসি। সেখানেও থাকছে ফুলের ছাপা। সিল্ক, সামুজ সিল্ক, সাধারণ সুতি, লিনেন, জর্জেট, শিফন, ক্রেপ ও লন—সব ফেব্রিকেই পাবেন ফ্লোরাল মোটিফ। এই ধারা চলছে সেইলরসেও। সেইলরের ব্র্যান্ডপ্রধান রেজাউল কবির বলেন, ‘চলতি ধারায় বড় আকারে চোখে পড়ছে ফুলেল মোটিফ। তবে স্ট্রেট অথবা সিম্পল কাটের নকশায় ভালো মানায় এ ধরনের মোটিফ।’

ফুল যেন ফুটে থাকে সারা দিন পোশাক: সেইলর
ফুল যেন ফুটে থাকে সারা দিন পোশাক: সেইলর

কাপড়ের কাটছাঁট
ফুলের আকৃতি আর কাপড়ের ধরন বুঝে পোশাক কাট ঠিক করতে হবে। ঝলমলে কাপড়ে আধুনিক ছাঁট মানায়, আর আরামদায়ক সুতিতে চেনা কাট। আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজের উদ্যোক্তা ও ডিজাইনার তাসলিমা মলি মনে করেন, ‘ফুলেল ছাপায় তৈরি পোশাকের কাটিং, প্যাটার্ন হতে হবে ট্রেন্ডি। যেমন টপসে সেমি বোট নেক, রাউন্ড নেক, রাউন্ড উইথ ফল, ব্র্যান্ড কলার বেশি মানানসই। বটমে দেখা যায় কার্ভের মধ্যে ভিন্ন কিছু কাটিং। গাউন, খাটো কামিজ, টরসোর মতো ড্রেসে ফ্লোরাল প্রিন্টের ব্যবহার মানানসই।’

দাওয়াত কিংবা সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ সবকিছুতেই মানিয়ে যাচ্ছে ফুলেল পোশাক
দাওয়াত কিংবা সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ সবকিছুতেই মানিয়ে যাচ্ছে ফুলেল পোশাক

যার যেমন প্রিন্ট
এই ফুলের নকশায় আমাকে কেমন দেখাবে? কাপড় নির্ধারণ করার আগে এই প্রশ্ন মনে আসতেই পারে। ‘যতটা না ছাপায়, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে কীভাবে আপনি সেটা পরছেন তার ওপরে। জমিনের রং, কাপড়ের ধরন, পোশাকের ডিজাইন—সবকিছুই আপনার শারীরিক অবয়বে প্রভাব ফেলতে পারে।’ এভাবেই বলছিলেন রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস। তাঁর মতে, যাঁদের গড়ন পাতলা, তাঁদের যেকোনো ছাপা নকশাতেই মানাবে। কিন্তু ভারী গড়নের মেয়েরা আজকাল ফ্রকের মতো চারদিকে ছড়ানো পোশাক বেশি পছন্দ করছেন। ঢোলা কিন্তু কলার দেওয়া কুর্তা, বড় টপের সঙ্গে মেঝেছোঁয়া স্কার্ট কিংবা লম্বা কোটির মতো দুই পরত দেওয়া কামিজের ট্রেন্ড চলছে চারদিকে। এমন যেকোনো পোশাকে ফুলের ছাপ চমৎকার লাগে। ঘন ফুলের নকশা বা ফুলের মোটিফটাই যদি মুখ্য হয়, তবে এক রঙের সালোয়ার, প্যান্ট বা পালাজো ও ওড়না বাছাই করা ভালো। মিলিয়ে পরতে চাইলে ফুলের পাপড়ি থেকেই যেকোনো একটি রং বেছে নিতে পারেন।

.
.

এমন কাপড় পেতে
ফুল ছাপানো পোশাকের সম্ভার পাবেন আধুনিক পোশাকের ব্র্যান্ডগুলোতে। নিজের পছন্দে জামা বানাবেন? চলে যান থান কাপড়ের দোকানে। রাজধানীর প্রধান বিপণিকেন্দ্র যেমন চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, গাউছিয়া তো আছেই। সুতি কি সিনথেটিক—দেশের যেকোনো প্রান্তেই কাপড়ের দোকানে পাবেন ফুলের ছোঁয়া।
ছাপা সুতি কাপড়ের দাম ১৮০ থেকে ১৬০০, জর্জেটের দাম থাকবে ৪০০ থেকে ২০০০ টাকায়।