বাসাতেই উৎসবের মেজাজে টালিউড তারকারা

করোনাকালেও কলকাতা তথা বাংলাজুড়ে সাজসাজ রব। সব বিষণ্নতা শিকেয় তুলে পুরোপুরি শারদ উৎসবের মেজাজে বাঙালি। তবে এই অতিমারির মাঝে মোটেও উৎসবে গা ভাসাতে রাজি নন টলিউড তারকা। তাই এ বছর তাঁরা বাসায় বসে পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পূজা উদযাপন করছেন। টালিউডের শীর্ষ তারকাদের সঙ্গে পূজার হালচাল নিয়ে আলাপে মাতেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি। কথায় কথায় জানিয়ে দেন কীভাবে কাটাবেন তাঁরা এবারের পূজা।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
ছবি: নির্মল চক্রবর্তী

আমি এখন সিঙ্গাপুরে আছি। তাই দুর্গাপূজার সময় কলকাতাকে দারুণভাবে মিস করছি। কলকাতাতে আমার মায়ের বাড়িতে পূজা হয়। সেখানে পাত পেড়ে ভোগ খাই। কলকাতার কিছু বন্ধুর বাড়িতে পূজা হয়। তাদের বাড়িতে গিয়ে খুব মজা করি। আমার ছেলেমেয়েদের জন্য খুব খারাপ লাগছে। ওরাও পূজাটা খুব মিস করছে। তবে সিঙ্গাপুরেও আমরা হইহুল্লোড় করে পূজা উদযাপন করি। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর আর প্রতিমাপূজা হবে না। শুধু ঘটপূজা হবে। তাই সেজেগুজে মণ্ডপে যাওয়া এ বছর আর হচ্ছে না।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
ছবি: নির্মল চক্রবর্তী

তবে পূজাতে পাঁচ বন্ধুবান্ধব মিলে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। এখানকার নিয়ম অনুযায়ী পাঁচজনের বেশি এক হতে পারব না। একজন বন্ধুর বাড়িতে বেনারসি শাড়ির থিম রাখা হয়েছে। তাই সেদিন বেনারসি শাড়ি পরে ওদের বাড়ি যাব। আর একজন বন্ধুর বাড়িতে সিঁদুর খেলার আয়োজন করেছে। আমার বাড়িতেও এক দিন ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুদের ডাকব। সেদিন নিজে রান্না করার পরিকল্পনা আছে। যদিও আমি ভারতীয় রান্না খুব একটা পারি না। কন্টিনেন্টাল রান্নাতে আমি পারদর্শী। তবে পূজা মানেই বাঙালি রসনা। তাই পোলাও, মাছ, মাংস, নিরামিষ করার ইচ্ছা আছে। পূজায় লাল টিকা লাগিয়ে, নতুন শাড়ি পরে অঞ্জলি দেওয়া খুব মিস করব। তাই এবারের পূজায় কেনাকাটা করিনি। আমার শাশুড়ি আমার জন্য নতুন শাড়ি কিনে পাঠিয়েছেন। এই শাড়িটা এক দিন পরব।

মুম্বাইয়ের ‘ডিএন নগর’ পূজার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলাম আমি। অমিতাভ বচ্চন, জয়াজি সবাই এখানে অঞ্জলি দিতেন। মুম্বাইয়ের পূজা আমার দারুণ লাগে। সব ভাষাভাষী মানুষ এখানে আনন্দে মেতে ওঠেন।

সোনালী চৌধুরী

সোনালী চৌধুরী

এ বছরটা অন্য বছরগুলোর থেকে একদম আলাদা। মা দুর্গা আসছেন, অত্যন্ত আনন্দের কথা। কিন্তু এবার আমি এক সচেতন নাগরিক হিসেবে পূজাটা কাটাতে চাই। তাই একদমই বাইরে যাওয়া বা প্রতিমা দর্শনের পরিকল্পনা নেই। শুধু নবমীর দিন মায়ের কাছে যাব। এখানে আমাদের পারিবারিক আড্ডা, খাওয়াদাওয়া হবে। আর দশমীর দিন দু-তিনজন বন্ধু মিলে বাড়িতে আড্ডা দেব। নবমীর দিন নিজের হাতে কাবাব বানানোর ইচ্ছা আছে। মা পাঁঠার মাংস রান্না করবেন। আমার স্বামী রজত কাবাব খেতে ভালোবাসে। এবার করোনার কারণে অনেকের চাকরি নেই। অনেকে আবার প্রিয়জন হারিয়েছেন। তাই আমিও কেনাকাটার মুডে নেই। নিজের জন্য একটা সুতাও কিনিনি। মা, শাশুড়ি মা, আত্মীয়–পরিজনদের জন্য শুধু কেনাকাটা করেছি।

যিশু সেনগুপ্ত

যিশু সেনগুপ্ত
ছবি: যিশু সেনগুপ্ত ফ্যানক্লাবের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে

দেশপ্রিয় পার্কের ‘লেক সর্বজনীন দুর্গোৎসব’কে ঘিরেই আমার বড় হয়ে ওঠা। এখানটা ছেড়ে আমি অন্য কোথাও যাই না। এবারের পূজাও আমার এখানেই কাটবে। তবে করোনার কারণে আমাদের পূজা এবার ছোট আকারে হবে। আর আমিও আগের মতো অতটা সক্রিয় থাকব না। বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব। ছোটবেলা থেকে পূজার অষ্টমীর দিন নিয়ম করে ধুতি-পাঞ্জাবি পরতাম। মা–বাবাই নিজের হাতে আমাকে সাজিয়ে দিতেন। এখনো আমি সেই ধারা বজায় রেখে ধুতি-পাঞ্জাবি পরি।
তবে এবারের পূজায় কী পরব তা জানি না। নীলাঞ্জনা মেয়েদের জন্য অনলাইনে কেনাকাটা করেছে। আমরা এবার সে রকম কেনাকাটা করিনি।

পূজার সময় কলকাতার বাইরে থেকে বন্ধুরা আসে। আমরা এক হয়ে আড্ডা মারি। এ বছর সেটা আর হবে না। ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুবান্ধবের মধ্যে রাহুল, ইন্দ্রাশীষ, গৌরব, ঋদ্ধিমাসহ আরও অনেকে আসে আমাদের পূজায়। জানি না এবার কেউ আসবে কি না। পূজার কদিন বিশেষ কিছু খাওয়ার পরিকল্পনা নেই। নীলাঞ্জনা যা রান্না করবে তাই খাব। আসলে খাওয়াদাওয়া নিয়ে আমার খুব একটা বায়নাক্কা নেই। চায়নিজ, বিরিয়ানি খেতে ভালোবাসি। তবে সারা বছর ভাত, ডিম সেদ্ধ খেয়েও কাটাতে পারি। ডায়েটের আমি ধার ধারি না। আমি সবাইকে অনুরোধ করতে চাই যে এবারের পূজাটা বাড়িতে বসেই উপভোগ করুন।

সোহিনী সরকার

সোহিনী সরকার
সোহিনী সরকারের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে

এ বছর পূজার ষষ্ঠী দিনে একটা নাটকের অনুষ্ঠান আছে। ফেব্রুয়ারির পর আবার আমরা মঞ্চে আসছি। তাই প্রচুর মহড়া চলছে। তবে ষষ্ঠীর পর থেকে আমি বাড়িতেই থাকব। অন্যবার পাড়ার পূজায় গিয়ে অঞ্জলি দিই। তবে এবার বোধ হয় বাড়িতেই মা দুর্গার উদ্দেশে অঞ্জলি দেব। কয়েকজন বন্ধুর বাড়িতে আসার কথা আছে। তাদের সঙ্গে আড্ডা মেরে সময় কাটাব। অন্যবার একটা চ্যানেলের হয়ে পূজা পরিক্রমাতে যাই। আবিরদা, পাওলিদিসহ আরও অনেকে মিলে প্রচুর মজা করি। এবার আর তা হবে না। তাই ওদের সঙ্গে সেই আড্ডা খুব মিস করব। পূজার সময় আমি সাবেকি শাড়ি পরতে ভালবাসি। এ ছাড়া এথনিক লং স্কার্ট পরতেও দারুণ লাগে। তবে এবার একদমই কেনাকাটা করিনি। আলমারিতে কয়েকটা নতুন শাড়ি আছে। এগুলো পরেই পূজাটা কাটিয়ে দেব।

শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়

পূজার কদিন আমরা বাইরে বেড়াতে চলে যাই। কলকাতায় এত ভিড়ে যে ঘুরে ঠাকুর দেখা যায় না। তবে এবার পরিস্থিতি অন্য রকম। তাই বাইরে বেড়াতে যাওয়া হয়নি। আর পূজার পরপরই আউটডোর শুটিংয়ের জন্য কলকাতার বাইরে যেতে হবে। তাই আমি একদম বাড়ির বাইরে পা রাখব না। করোনাকে নিজের বাড়িতে আনার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি অসুস্থ হলে পুরো শুটিং শিডিউল ভন্ডুল হয়ে যাবে। তাই বাড়িতে সবার সঙ্গে এবারের পূজাটা উপভোগ করব। আর কোনো বন্ধুবান্ধব বাড়িতে আসতে চাইলে তাদের সাদর আমন্ত্রণ। আমি একদমই ফ্যাশনেবল নই। তাই পূজার সাজ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথ্যা নেই।

মনামি ঘোষ

মনামি ঘোষ

গত বছর সপ্তমী অবধি কলকাতাতে পূজা পরিক্রমার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এরপর ভিয়েতনামে বেড়াতে চলে যাই। এবার অবশ্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতে পারছি না। তাই পুরোপুরি বাড়িতেই কাটাব। এমনকি মণ্ডপে গিয়ে অঞ্জলি দেওয়ার ইচ্ছাও এবার নেই। পূজার সময় সাবেকি পোশাকের মধ্যে শাড়ি, আনারকলি, চুড়িদার পরতে আমি ভালোবাসি। তবে কয়েকটা নতুন শাড়ি আছে। তাই বাড়িতেই নতুন শাড়ি পরে থাকব। আর এই কদিন আমি বাঙালি খাবার খেতে ভালোবাসি। নিজে অবশ্য রান্নাবান্না পারি না। তাই মায়ের হাতের বাঙালি রান্না জমিয়ে খাব। ইচ্ছা আছে পূজার সময় আমার ইউটিউব চ্যানেলে নাচের একটা ভিডিও আপলোড করার। তবে আমি সবাইকে বলতে চাই, বাড়িতে থেকে এবারের পূজাটা উদযাপন করুন। আর বাইরে বের হলেও তাঁরা যেন সচেতন থাকেন।

আবির চট্টোপাধ্যায়

আবির চট্টোপাধ্যায়

এ বছরের পূজাটা একদম অন্য রকম। এবার বাড়ির বাইরে পা রাখার প্রশ্নই নেই। ১১ বছর পর এবার পূজা আমি পুরোপুরি আমার পরিবারের সঙ্গে কাটাব। নিজের ও পরিবারের সাবধানতার জন্য বাড়িতে থাকব। এ ছাড়া অন্য একটা কারণ আছে। আমরা সমাজের মুখপাত্র হয়ে সাধারণ মানুষকে বারবার সতর্ক করছি বাড়িতে থাকার জন্য। বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করছি। তাই আমি বাড়িতে থেকে দায়িত্বশীল এবং সচেতন নাগরিক হতে চাই।

দুর্গাপূজা মানেই শপিং। তবে আমার বউ অসাধ্য সাধন করেছে এবার। অনলাইনে সবার জন্য প্রচুর কেনাকাটা করেছে। পূজা পরিক্রমা বা অন্য কোনো কাজ থাকলে তখন বাধ্য হয়ে সাবেকি পোশাক পরতে হয়। তবে আমি টি-শার্ট আর ট্র্যাক প্যান্টেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই এই পোশাকেই এবার পূজাটা বোধ হয় কেটে যাবে। পূজায় এবার বাড়িতে থাকব বলে মায়ের হাতের বাঙালি রান্না জমিয়ে খাব। বাইরে থেকে খাবার আনানোর পরিকল্পনা আছে। পূজার সময় একটু নিয়ম ভেঙে খাওয়াদাওয়া করব। এর মধ্যে একটু–আধটু শরীরচর্চাও করে নেব।