লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ৪ আগস্টের বিস্ফোরণে প্রাণহানি আর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। অন্য অনেকের মতো এই দুর্ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে লেবাননের বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার এলি সাবের সদর দপ্তর। সম্প্রতি নিজের জন্ম শহরে ফিরে দেখেছেন সেই ধ্বংস। তবে তিনি স্বস্তি বোধ করেছেন তাঁর ছেলে ও প্রতিষ্ঠানের ২০০ কর্মচারীর নিরাপদ থাকার খবরে।
এই ধ্বংসযজ্ঞে ১৭৮ জন মারা যায় আর আহত হয় অন্তত ৬ হাজার। সমগ্র এলাকা পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। তাঁর ছেলে আহত হন। তাঁর মাথা ও হাত কেটে যায়। তবে তেমন গুরুতর ছিল না সেই আঘাত। বিদেশে বসে সেই বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলেন না এলি সাব। নিজের অফিস, আউটলেট ছাড়া কয়েক কদম দূরে তাঁর বাড়িও দুর্ঘটনায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
এলি সাব ছাড়াও দুর্ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও দুজন ডিজাইনার জুহাইর মুরাদ ও রাবিহ কেইরুজের শোরুম।
এলি সাবের টুইটার পেজ।
ধ্বংসযজ্ঞ এলি সাবের জন্য নতুন কিছু নয়। কারণ তাঁর প্রতিষ্ঠানের সূচনাই হয়েছে গৃহযুদ্ধের মধ্যে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল লেবাননের সেই গৃহযুদ্ধ। আর তিনি শুরু করেছিলেন ১৯৮২ সালে।
‘এবার এসে চারপাশে আমি যেন অবিকল গন্ধ শুঁকছি। সেই ধুলো, ভাঙা কাচ। এই পুনরাবৃত্তি কাঙ্ক্ষিত নয়’, বলেছেন সাব। তবে এটাই তো বৈরুত। বারবার ধ্বংসের মুখোমুখি হয় আবার সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায়।
২০ আগস্ট থেকে আবার কাজ শুরু করেছে তাঁর কর্মীরা। কারণ সেপ্টেম্বরের প্যারিস কতুর শোর ডেডলাইন ধরতে হবে, জানান সাব।
তবে তাঁর বাড়ি নতুন করে গড়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন এই ডিজাইনার।
‘এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা লেবাননের মানুষেরা তো হার মানতে রাজি নই। তবে পরিতাপের বিষয়, যাদের হারিয়েছি তাঁদের তো ফেরানো যাবে না’, খেদের সঙ্গে বলেছেন এই বরেণ্য ডিজাইনার।
আরব দেশের ডিজাইনার হিসেবে তিনিই প্রথম ফ্যাশনের বৈশ্বিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালে তিনিই প্রথম ইতালিয় নন এমন ডিজাইনার হিসেবে সে দেশের ন্যাশনাল চেম্বার অব ইতালিয়ান ফ্যাশনের সদস্য হন।
এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা লেবাননের মানুষেরা তো হার মানতে রাজি নই। তবে পরিতাপের বিষয়, যাদের হারিয়েছি তাঁদের তো ফেরানো যাবে না
আর সে বছরেই প্রথম লেবাননের বাইরে রোমে তাঁর সংগ্রহ প্রদর্শন করেন। পরের বছর তিনি মিলান ফ্যাশন উইকে অংশ নেন। সেবার মোনাকোতো অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শোতে উপস্থিত ছিলেন রাজকন্যা স্তেফানি। অস্কার বিজয়ী হ্যালি বেরির জন্য তিনি পোশাক ডিজাইন করেন ২০০২ সালে। পরের বছর তিনি প্যারিসের শামব্রে সিন্দিকেল দে লা ওত্ কতুর-এর সদস্য মনোনীত হন। ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনের জন্য পোশাক করেছেন লেবাননের এই ফ্যাশন ডিজাইনার। তাঁর সূচনা ছিল বিয়ের পোশাক ডিজাইন দিয়ে। পরে অবশ্য বিভিন্ন ধরনের পোশাক করতে থাকেন।
এলি সাব মনে করেন বরাবরের মতোই ঘুরে দাঁড়াবে তাঁর দেশ। এটাই তো চিরকালের লেবানন। এর মিল যেন পাওয়া যায় তাঁর টেবিলের ওপর দুভাগ হয়ে ভেঙে পড়ে থাকা লেবাননের সংগীতশিল্পী ফইরুজের রেকর্ড ‘লেবানন ফরএভার’-এ।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও অন্যান্য