ব্যাগে ফ্যাশন

স্টাইলে নতুন মাত্রা যোগ করে দেয় হাতের ব্যাগটি। মডেল: সায়রা ও ওশিন। কৃতজ্ঞতা: পারসোনা, ব্যাগ ও পোশাক: এক্সট্যাসি, ক্যাটস আই ও স্টাইলসেল, ছবি: সুমন ইউসুফ
স্টাইলে নতুন মাত্রা যোগ করে দেয় হাতের ব্যাগটি। মডেল: সায়রা ও ওশিন। কৃতজ্ঞতা: পারসোনা, ব্যাগ ও পোশাক: এক্সট্যাসি, ক্যাটস আই ও স্টাইলসেল, ছবি: সুমন ইউসুফ

ফ্যাশন ভালোবাসে এমন মানুষেরা কয়েক দিন পরপরই নিজেদের ফ্যাশনে নতুন কিছু সংযোজন করতে চায়। তা ছাড়া অনেক সময় কাজের প্রয়োজন কিংবা আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেও বদলে যায় ফ্যাশন। শুধু ফিটফাট পোশাক আর স্টাইলিশ জুতাতেই এখন আর ‘ফ্যাশনেবল’ শব্দটা আটকে নেই। সুন্দর একটা ব্যাগও কিন্তু আপনার পুরো লুকে নিয়ে আসতে পারে চমক। আপনার পোশাক-আশাক, সাজে যোগ করতে পারে বাড়তি সৌন্দর্য।

ক্যাজুয়াল ব্যবহারের জন্য মানানসই ব্যাগ
ক্যাজুয়াল ব্যবহারের জন্য মানানসই ব্যাগ

হাতব্যাগের ব্যবহার আজকের নয়। ষোড়শ শতকের দিকে এর প্রচলন শুরু। সে সময় বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা আলাদা আলাদা করে রাখতে ছোট ছোট ব্যাগ ব্যবহার করা হতো৷ এরপর ফরাসি বিপ্লবের সময় মেয়েদের স্কার্টের নকশায় পরিবর্তন আসে। ওই সময় অপেক্ষাকৃত অপ্রশস্ত পোশাক পরার কারণে হাতে ব্যাগ বহন করতে শুরু করেন মেয়েরা৷ অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের দিকে হাতে ব্যাগ বহন আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এক পাশে ঝোলানো ছোট আকারের পার্স
এক পাশে ঝোলানো ছোট আকারের পার্স

বাজারে এখন একটু ঘুরলেই চোখে পড়বে বাহারি নকশার সব ব্যাগ। দোকানগুলোতে বিভিন্ন নকশা ও রঙের আধিক্য দেখলেই বোঝা যায় বর্তমান ফ্যাশনে ব্যাগের বেশ জনপ্রিয়তা। এক্সট্যাসি ও তানজীম ব্র্যান্ডের প্রধান নির্বাহী তানজীম হক জানান, ব্যবহারিক প্রয়োজনের চেয়েও এখন হাতব্যাগ বেশি প্রাধান্য পায় আভিজাত্য ও ফ্যাশনের কারণে। এটি সব সাজের ফিনিশিং টাচ। পোশাকে সাদামাটা থাকলেও রং-চঙা বা ট্রেন্ডি ব্যাগসহ অন্যান্য ফ্যাশন অনুষঙ্গে এখন মনোযোগ বেশি।

.
.

টোট ব্যাগ
ক্যাটস আইয়ের ডিজাইনার রুম্মাইল্লা সিদ্দিকী বলেন, ‘আকৃতিতে একটু বড় ব্যাগের হাতাটা একটু ছোট হয়ে থাকে। আর সেই হাতলের ফাঁক গলিয়ে হাতে প্রবেশ করানোটাই এখন জনপ্রিয় ফ্যাশন।’ টোট ব্যাগ সাধারণত কাপড় বা চামড়ার হয়ে থাকে। তবে এখন সিনথেটিক সামগ্রী দিয়েও তৈরি হয়ে থাকে নানা ধরনের টোট ব্যাগ। ছাপা নকশার লেদারের টোট ব্যাগ এখন জনপ্রিয় স্টাইল, যা মানাবে শুধুই টি-শার্ট কিংবা ফতুয়ার সঙ্গে জিনস পরলে।

.
.

মেসেঞ্জার ব্যাগ
হালের জনপ্রিয় আর স্টাইলিশ ব্যাগ হলো মেসেঞ্জার ব্যাগ। কাঁধের এক পাশ দিয়ে ঝোলানো এই ব্যাগ এখন হিপহপ স্টাইলের তকমাপ্রাপ্ত।
ন্যাপস্যাক
কাপড় কিংবা চামড়া দুটো দিয়েই তৈরি হতে পারে এই ব্যাগ। এই ব্যাগের কোনো আলাদা লক সিস্টেম থাকে না। শুধু দড়ি দিয়ে মুখটা প্যাঁচানো থাকে। এখানে আলাদা কোনো পকেটও থাকে না। কাপড়ের বর্ণিল ন্যাপস্যাক পাওয়া যায় সবখানেই।
পার্স
পার্স পাওয়া যাচ্ছে পার্টি কিংবা ক্যাজুয়াল সব ধরনের। শাড়ি কিংবা জমকালো কামিজের সঙ্গে হাতে ম্যাচ করা ঝলমলে পার্স না থাকলেই নয়।
বক্স ব্যাগ
এটি শক্ত বক্স আকারের। ছোট-বড় সব ধরনেরই আছে। ছোট হাতল থাকে। কালো রঙের ব্যাগের ওপর থাকে সোনালি কাজ। এ ছাড়া চকলেট, বাদামি রংগুলো বেশি চলে। আবার এখন ওপরে রাবারের মতো নতুন নকশার কিছু ব্যাগ এসেছে। সামনে থাকছে লক সিস্টেম। চারকোনা গড়নের।

সারা দিনের ঘোরাঘুরিতে সবার নজর কাড়বে এ ধরনের ব্যাগ
সারা দিনের ঘোরাঘুরিতে সবার নজর কাড়বে এ ধরনের ব্যাগ

ক্লাচ ব্যাগ
ফ্যাশনে সব সময় এগিয়ে ক্লাচ ব্যাগ। চারকোনা, ডিম্বাকৃতি, গোলাকৃতি, পানপাতা আকৃতি, তিনকোনা, কাঠের হাতলসহ বাজারে রয়েছে নানা আকারের ক্লাচ ব্যাগ। এ ধরনের ব্যাগগুলো হয় দ্বৈত স্টাইলের। হাতে নেওয়া ছাড়াও সরু চেইন দিয়ে কাঁধেও ঝোলাতে পারেন। নকশাও নজরকাড়া। কোনো ব্যাগের শরীর ঢাকা নরম পালকে, কোনোটায় মেটাল বা লেদার আবার কোনোটা স্যাটিনের কাপড়ের নকশাদার আবরণ। তবে এখন বেশ জনপ্রিয় ছোট্ট বাক্সের মতো দেখতে ক্লাচ ব্যাগ আর চৌকাকৃতির লেদার স্লিম ব্যাগ।
বটুয়া
বিয়ে বা ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের জন্যও আছে বটুয়া ঘরানার ব্যাগ। বাটিক, টাইডাই, ব্লক বা স্ক্রিনপ্রিন্ট এসব কাপড়ের ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া ধুপিয়ান, সিল্ক, ভেলভেট, জামদানি, কাতান ও বেনারসি কাপড়েও তৈরি হচ্ছে ব্যাগ। ডিজাইনের ক্ষেত্রে দেশীয় মোটিফ যেমন কলকা, ফুল, নকশিকাঁথা জ্যামিতিক নকশা ইত্যাদি প্রাধান্য পাচ্ছে।
শোরুমের বিক্রেতারা জানান, ইচ্ছেমতো রং বা আকারের ব্যাগ ব্যবহারের চল এখন। কেউ কেউ পছন্দ করেন জুতার সঙ্গে ব্যাগের কালার ব্লকিং ফ্যাশনও। শুধু গড়নেই নয়, ব্যাগ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন উপাদানেও। চামড়ার পাশাপাশি চামড়ার মতো দেখতে ব্যাগের চাহিদা এখন তুঙ্গে। এখন ফোম, মখমল, পলিয়েস্টার, কর্ডের আকর্ষণীয় আকৃতির সব ব্যাগ বেশ চলতি। তবে বড়, ছোট বা মাঝারি সব ধরনের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। তা ছাড়া অ্যানিমেল প্রিন্ট, পলকা ডট, মাল্টি কালার ইত্যাদি ব্যাগের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এবং তরুণীদের আগ্রহ বেশি।
দরদাম      
আরবান ট্রুথে স্ট্রাকচার ব্যাগের দাম পড়বে ১ হাজার ৪০০ টাকা, এনভেলপ ক্লাচ ব্যাগগুলো পাবেন ১ হাজার ৩৯০ আর ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যেই মিলবে অন্যান্য নকশার ব্যাগগুলো। এদিকে ব্যাগ পাবেন ১ হাজার ৫৯০ থেকে ২ হাজার টাকায়। এক্সট্যাসি, স্টাইলসেলে ব্যাগের দাম পড়বে ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। আড়ংয়ে মাঝারি আকারের চামড়ার ব্যাগ পাওয়া যাবে এক হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে। পিংক সিটিতে পাওয়া যাবে কম্বোডিয়া ও হংকং থেকে আমদানি করা গুচি, বারবেরি, ভারসাচে, মাইকেল কোরস ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ব্যাগ। ব্র্যান্ড ও আকার ভেদে এসব ব্যাগের দাম পড়বে ৬ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। এ ছাড়া বসুন্ধরা শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্ক ইত্যাদি জায়গা থেকেও কিনতে পারেন ব্যাগ। অনলাইনেও একটু খুঁজে ব্যাগের ফরমাশ দিতে পারেন।

গোল আকারের ব্যাগগুলো এখনকার নতুন আকর্ষণ
গোল আকারের ব্যাগগুলো এখনকার নতুন আকর্ষণ