উৎসবের রাতে হস্তচালিত তাঁতের বুননের পোশাকে আপনি যে অনন্য হয়ে উঠতে পারেন, তা ল্যাকমের ডিজিটাল আসরে একঝাঁক ডিজাইনার আবার প্রমাণ করলেন। 'ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২০'-এর প্রথম রাতে ফ্যাশন দুনিয়ার নামীদামি ডিজাইনার টেকসই ফ্যাশনের নানান দরজা খুলে দেখিয়ে দিলেন ভবিষ্যতের করণীয়।
সূচনা রাতে ডিজাইনার পায়েল খান্ডেলওয়ালের জামদানির অভিনবত্ব সবার নজর কাড়ে। প্রতিবারের মতো এবারও নবীনের প্রদর্শন দিয়ে ল্যাকমে ফ্যাশন উৎসব শুরু হয়। এরপর গৌরাঙ্গ, রাজেশ প্রতাপ সিং, অ্যানাভিলা মিশ্র, পায়েল খান্ডেলওয়াল, আব্রাহাম অ্যান্ড ঠাকরেসহ একঝাঁক ডিজাইনার তাঁদের নকশার নতুন ধারা তুলে ধরেন।
এবারের ল্যাকমের ডিজিটাল প্রাঙ্গণে গৌরাঙ্গ পরিবেশন করেন ‘তারামতী’ সংগ্রহ। সংবাদ সম্মেলনে গৌরাঙ্গ বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও ল্যাকমে ফ্যাশন উৎসব নিয়ে অধীর ছিলাম। অবশেষে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে আমি আমার আয়োজন জনসমক্ষে আনতে পেরেছি। তবে লাইভ উপস্থাপনা খুব মিস করছি। চূড়ান্ত ব্যস্ততা, ছুটোছুটি, একরাশ উৎকণ্ঠা, দর্শকের করতালি সবকিছু দারুণ মিস করছি।’
জাতীয় পুরস্কারজয়ী খ্যাতনামা এই ডিজাইনার তাঁর কালেকশন প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রায় আড়াই বছর আগেই আমি “তারামতী” কালেকশনের ওপর কাজ করা শুরু করি। ৪০০-৫০০ বছর আগের এক শিল্পধারাকে আমি ল্যাকমের মঞ্চে আবার জীবন্ত করেছি। হাতে বোনা পার্শি, কচ্ছ, চিকনকারি, কোটা এসব কিছু নিয়ে আমার এই আয়োজন।’ উৎসব রাতের পোশাক বাছতে হলে গৌরাঙ্গর তারামতী সত্যি ব্যতিক্রমী। তবে উৎসবের রাত মানেই জমকালো রং, এই প্রথাকে ভেঙেছেন গৌরাঙ্গ। হাল্কা রঙের শাড়িতেও নিজেকে রঙিন করা যায়, তারামতীই তার প্রমাণ।
এই রাতে পায়েল খান্ডেলওয়ালের আয়োজনও ছিল ব্যতিক্রমী। সাবেকি ঘরানার ঐতিহ্যবাহী জামদানির ব্যতিক্রমী পরিবেশনায় পায়েল এই রাতকে আরও রঙিন করেন। বাংলার ফুলিয়ার বয়নশিল্পীদের হাতে বোনা শিল্পকলা এই ডিজাইনার তাঁর আয়োজনে তুলে ধরেছেন। জামদানি বুনন নিয়েও অভিনবত্ব এনেছেন ডিজাইনার ঊর্বশী কাউর। এ ছাড়া এই ডিজাইনার বেছে নিয়েছেন হাতে বোনা অরগ্যানিক কটন, শির কোটা সিল্ক। উর্বশীর ‘তাহুল’ কালেকশন সম্পূর্ণ প্রকৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত।
অ্যানাভিলা মিশ্র পরিচয় করান তার আয়োজন ‘ধনক’-এর সঙ্গে। সংস্কৃতে ‘ধনক’-এর অর্থ রামধনু। তাই তার এই আয়োজন ছিল সাত রঙে রঙিন। অ্যানাভিলার কালেকশনের বিশেষত্ব ছিল সূক্ষ্ম জরি এবং খাতওয়া কাজ।
ইক্কত শাড়ির প্রচলিত প্রথাকে ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছেন ডিজাইনার রাজেশ প্রতাপ সিং। সত্য পলের ব্র্যান্ডে তিনি উপস্থাপন করেছেন এই সংগ্রহ। সাদা-কালো, সাদা-লাল কম্বিনেশনের ইকত শাড়ি যে উৎসবের রাতকে অন্য মাত্রা দিতে পারে, তা প্রমাণ করলেন বিখ্যাত এই ডিজাইনার।
ফ্যাশন উৎসবের প্রথম রাতে ডিজাইনার সুকেত ধীরের আয়োজন ছিল ভিন্ন। সুকেত তাঁর আয়োজনে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের শিল্পকলাকে মিলিয়ে দিয়েছেন। হাতে বোনা ব্রোকেডের হট প্যান্ট, কোট, স্কার্ট, মিডি জ্যাকেট, ফ্লেয়ার্ড, গ্যাদার্ড স্কার্টসহ আরও অনেক কিছু ছিল তাঁর সম্ভারে৷ এই রাতের শেষ আয়োজন ছিল সঞ্জয় গর্গের ‘র ম্যাংগো’। রাজস্থানের বাঁধনি, জারদৌজি কাজের লেহেঙ্গা, চোলি, ঘাঘড়া, চুড়িদার ছিল তাঁর সংগ্রহে।