মাস্কে এখন বনেদিয়ানা

শারদ উৎসবের মাস্ক
ছবি: দশভূজা

পোশাকের সঙ্গে এখন মানানসই মাস্ক না পরলে সাজটাই মাটি। তাই পোশাকের পাশাপাশি মাস্কও এখন ফ্যাশন দুনিয়ায় ঝড় তুলেছে। পূজার সময় নিজের পছন্দের শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে মাস্ক চাই-ই চাই। কলকাতার ‘দশভুজা’ বুটিকের স্রষ্টা, তথা নামজাদা ডিজাইনার ডালিয়া বি মিত্র সুতির বনেদি শাড়ির সঙ্গে মাস্কেও বনেদিয়ানা বজায় রেখেছেন।

দশভুজা এবারের পূজায় তাদের আয়োজনে সাধ্যের সঙ্গে সাধের এক অভিনব মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিজাইনার ডালিয়া মিত্র বলেন, ‘এবার করোনার কারণে অনেকেরই পকেটের অবস্থা ভালো নয়। তাই আমি অভিনব ডিজাইনের পাশাপাশি দামের বিষয়টা মাথায় রেখেছি। এমন রেঞ্জের শাড়ি, পোশাক এবং মাস্ক রাখা হয়েছে, যা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। কারণ, বাঙালি এখন পূজার মেজাজে থাকলেও উৎসবের মেজাজে নেই।’ দশভুজার ভান্ডারে শাড়ির পাশাপাশি মাস্কের বাহার নজর কাড়ার মতো। কলকাতার এই জনপ্রিয় ডিজাইনার বলেন, ‘এপ্রিল মাস থেকে আমি মাস্ক নিয়ে কাজ করছি। রকমারি মাস্ক নিয়ে এসেছি ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য। তিন স্তরের সুতির মাস্ক।’

শুধু ভারতে নয়, ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও নিত্যনতুন নকশার সন্ধানে ছুটে যান ডালিয়া মিত্র। ফ্যাশন দুনিয়ায় বাংলাদেশের জামদানিরও আছে দশভুজার আয়োজনে। ডালিয়া মিত্র বলেন, ‘আমার ঢাকাই শাড়ির বিশেষত্ব এর নকশা। আমি শাড়িতে হাতের কাজ বেশি পছন্দ করি।’ ঢাকা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে আড়াইহাজারেও ডালিয়া ছুটে গেছেন নতুন সৃষ্টির সন্ধানে। এই গ্রাম বিখ্যাত রাজস্থানি ‘বাঁধনি’ কাজের জন্য। বাংলাদেশি সুতির ওপর বাঁধনির কারুকাজে তিনি জন্ম দিয়েছেন ফ্যাশনের এক নতুন সৃষ্টিকথা।

কলমকারি মাস্ক
ছবি: দশভূজা

দশভুজার ভান্ডারে অবাক করে দেওয়ার মতো আরও বাহারি শাড়ি আছে। ভাগলপুরি হ্যান্ডলুমের কলমকারি প্রিন্টের শাড়ির এবারের পূজায় চাহিদা তুঙ্গে। তবে সাধের পাশাপাশি সাধ্যের কথা মাথায় রেখে ডালিয়া মিত্র এবারের পূজায় সুতির আয়োজন বেশি রেখেছেন। এই উৎসব যাতে সবাই নিজেকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারেন, সেটাই চান এই প্রখ্যাত ডিজাইনার। আর করোনাকালের অন্ধকারকে দূর করতে লাল, সাদা, কমলা গোলাপি, হলুদ, সবুজসহ নানান উজ্জ্বল রঙের বাহার তাঁর পূজার আয়োজনে। গত বছর পূজায় তাঁর আয়োজনে সেরা আকর্ষণ ছিল ‘লিভা’ কালেকশন। এ বছরও লিভা কালেকশনে বৈচিত্র্য এনেছেন ডালিয়া।

গত বছর আদিত্য বিড়লা গ্রুপ ফ্যাশন দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় করায় লিভা ব্রান্ডের। এ প্রসঙ্গে ডালিয়া মিত্র বলেন, ‘আদিত্য বিড়লা গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমি লিভা কালেকশন গত বছর পূজায় নিয়ে আসি। এটা দারুণ সাড়া পেয়েছে। এবারেও লিভার রকমারি থাকবে আমার আয়োজনে। বার্চ, পাইন, ইউক্যালিপটাসগাছের তন্তু থেকে সুতা বের করে সেই সুতার সঙ্গে সুতি মিশিয়ে আমি লিভা শাড়ি বানাই। এমনকি কাঠের সুতা দিয়েও আমি ঢাকাই শাড়ি করিয়েছি।

মাস্কার্ফ
ছবি: দশভূজা

এবারের পূজাতেও লিভার চাহিদা তুঙ্গে। এর দাম ২ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। এবার দশভুজার নতুন সংযোজন ‘ভাগলপুরি হ্যান্ডলুম লিনেন’ শাড়ি। আর তার জন্য ডালিয়া ছুটে গিয়েছিলেন বিহারের ভাগলপুর থেকে আরও ভেতরে মন্দার গ্রামে। এই গ্রামের বয়নশিল্পীদের বর্জিত সিল্কের সুতার সঙ্গে সুতি মিশিয়ে এক নতুন ফেব্রিকের জন্ম দেন তিনি। নতুন ধরনের এই ফেব্রিকের ওপর ডালিয়া মেলে ধরেন কলমকারি আর মোমের বাটিক প্রিন্ট।

এ তো গেল শাড়ির কথা। শাড়ির সঙ্গে মানানসই মাস্কও আছে দশভুজার সম্ভারে। মাস্কের ক্ষেত্রেও তারা বনেদিয়ানা মাথায় রেখেছে। তাই সুতির মাস্কের ওপর ঢাকাই, কলমকারি, কাঁথা স্টিচ, বাটিক—সবকিছুই আছে তাদের পূজার আয়োজনে। দশভুজা মাস্কে বনেদিয়ানার পাশাপাশি ফ্যাশন ট্রেন্ডকেও ধরে রেখেছে।

ডিজাইনার মাস্ক
ছবি: দশভূজা

বলা যায়, মাস্ক ফ্যাশনে এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছেন ডিজাইনার ডালিয়া মিত্র। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবারের পূজায় নিজের সুরক্ষা সবার আগে। তাই মাস্কের ক্ষেত্রে আমি অভিনবত্ব এনেছি। চার ধরনের মাস্ক আছে আমার আয়োজনে, “মাস্ক”, “মাস্ক কানা”, “মাস্ক বানা” আর “মাস্ক স্কার্ফ”। শুধু নাক-মুখ নয়, চুল, গলা, ঘাড়কে সুরক্ষা দেওয়া যাবে “মাস্ক স্কার্ফ”-এর সাহায্যে। শাড়ির সঙ্গে মানানসই ঢাকাই, বাটিক, কাঁথা স্টিচ, কলমকারি, সুতির নানান মাস্ক পাওয়া যাবে আমার বুটিকে।’