লন্ডনে জামদানি পরে সমাবর্তনে অংশ নিলেন ভাবনা

ওয়েলসের ইউনিভার্সিটি অব রেক্সাম থেকে বিবিএ করেছেন ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় মুখ আশনা হাবিব ভাবনা। ১১ তারিখ ছিল তাঁর সমাবর্তন। আর তাতে অংশ নিতে ১০ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গিয়ে পৌঁছেছেন তিনি।

সমাবর্তনে ছোট বোন অনন্যা ও ভাবনা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সমাবর্তনের দিন ভাবনার পরনে ছিল হালকা বিস্কুটরঙা, হলুদ পাড়ের জামদানি শাড়ি। সেই শাড়িটি তিনি পরেছিলেন একটি ক্রপটপ দিয়ে। সমাবর্তনের দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেবল ভাবনার পরনেই ছিল শাড়ি। ভাবনার সহপাঠীরা অনেকেই ভাবনাকে দেখে বলেছে, ‘ওয়াও।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবশ্য দেখেই চিনেছেন। বলেছেন, ‘তুমি কী পরেছ, আমি কিন্তু জানি। এর নাম শাড়ি। দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের জনপ্রিয় পোশাক। কোনো সেলাই ছাড়া এক টুকরা লম্বা কাপড়।’ ভাবনা হেসে জানিয়েছেন, ‘ঠিক বলেছেন। আমি যে শাড়িটি পরেছি, এর নাম জামদানি। এটি বাংলাদেশের নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক।’

ব্লাউজ ছিল না, জামদানিটি পরেছেন ক্রপটপের সঙ্গে
ছবি: ভাবনার কাছ থেকে সংগৃহীত

নিজের সমাবর্তন নিয়ৈ একটি বিশেষ পোস্ট দিয়েছেন ভাবনা। সেখানে লিখেছেন, ‘কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুন নিজে নিজেকে বিশ্বাস করা সবচেয়ে জরুরি । কেউ পাশে থাকুক, বা না থাকুক নিজের পাশে নিজের থাকাটা জরুরি।’ বাবা–মা, বোনের সঙ্গে সঙ্গে নিন্দুককে ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি সেই পোস্টে, ‘যারা আমাকে জাজ করেন, যারা আমাকে ছোট করে কথা বলতে ভোলেন না, যারা আমাকে টেনে ফেলে দিতে চান, যাদের আমাকে দেখলে অনেক হাসি পায়— আমি সত্যি আপনাদের বেশি ভালোবাসি। আপনাদের কারণেই আমি চলতে থাকি নিজেক মতো। আমি শুধু এতটুকু বলব আমার লেখাপড়া কেবল শুরু। আরও অনেক কাজ করতে চাই। একটি দিনও আমি বসে থাকতে চাই না। সেই যাত্রায় আপনারা আমার পাশে থাকবেন।’

সমাবর্তনে ছোট বোনের সঙ্গে ভাবনা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

যদিও সমাবর্তনের ফ্যাশন নিয়ে অন্য পরিকল্পনা করেছিলেন ভাবনা। কিন্তু তাড়াহুড়োয় সেসব ভেস্তে গেছে। বললেন, ‘হঠাৎ করে দেখি আমার পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। শুরু হলো পাসপোর্ট নবায়নের কাজ। তারপর ভিসার জন্য আবেদন করতে করতেই দেরি হয়ে গেল। এখানে যে আসব, সেটা অনেকটাই অনিশ্চিত ছিল। তাই পোশাক নিয়ে আলাদা করে ভাবার সুযোগ ছিল না। যখন ভিসা পেলাম, তখন ওয়ার্ডরোব খুলে আমার জামদানির কালেকশনগুলো একে একে বের করলাম। এই শাড়িটা আমার খুবই পছন্দের। পরার জন্য উপলক্ষ খুঁজছিলাম। ব্যস, মিলে গেল।’

এই জামদানি শাড়িটা ভাবনার খুব পছন্দের
ছবি: ভাবনার কাছ থেকে সংগৃহীত

এমনিতেই ফ্যাশনেবল আর স্টাইলিশ হিসেবে নামডাক আছে ভাবনার। আর কোনো উপলক্ষ পেলে একচুলও ছাড় দেন না ভাবনা। নিজেকে যথাসম্ভব ফ্যাশনিস্তা করে তুলে ধরেন। এই যেমন ধরুন, লন্ডনে গিয়েই ভাবনা যে বডি হাগিং ক্রিমরঙা গাউনটি পরেছেন, সেটিও তাঁকে দিব্যি মানিয়ে গেছে। যদিও পোশাকটি ভাবনার নয়। এবার ভাবনার সফরসঙ্গী হয়েছে তাঁর ছোট বোন অনন্যা। এই দুই বোন উঠেছেন ছোট বোন অনন্যার বান্ধবী সারার বাসায়। প্রথম দিন ভাবনা যে পোশাকটি পরেছেন, সেটি সারার।

ছোটবোনের বান্ধবীর পোশাকে লন্ডনের রাস্তায় ভাবনা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সারার বাসায় ঢোকামাত্রই সে বলে উঠেছে, ‘আপু, এই ড্রেসটা তুমি পরো। তোমাকে খুব ভালো লাগবে।’ ভাবনার সঙ্গে যখন কথা বলছি, তখন পাশ থেকে সারা বলল, ‘ড্রেসটা আমি এখানকার স্থানীয় ব্র্যান্ড মিন থেকে মাত্র ১০ ডলার দিয়ে কিনেছিলাম।’ ভাবনা যোগ করলেন, ‘প্যাকেট খুলে ড্রেসটি বের করে তো আমি খুশি হয়ে গেলাম। যেন একদম আমার জন্যই। খুব মানিয়েছে।’  

সমাবর্তনের গাউন আর হ্যাট পরে ভাবনা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

হোটেলে উঠতে চেয়েছিলেন ভাবনা। কিন্তু সারা রাজি নয়। দুজনকেই তার বাসায় থেকে যেতে রাজি করিয়েছে। দেশের বাইরে গেলেই স্পা আর নেইল আর্ট করান ভাবনা। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। ভাবনা, অনন্যা, সারা—তিনজনে মিলে ঘোরাঘুরি, বিউটি কেয়ার, নতুন নতুন খাবার চেখে দেখার সঙ্গে সমানতালে চলবে শপিং। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৬ মে ঢাকায় ফিরবেন ভাবনা ও তাঁর বোন অনন্যা।