লে মেরিডিয়ানে যাপন উৎসব

অতিমারিকালে সংকট উত্তরণে নারী ফ্যাশন ডিজাইনারদের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে লে মেরিডিয়ান আয়োজন করতে চলেছে বিশেষ যাপন উৎসব। এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে ৩৮টি ব্র্যান্ডকে। দুই মাসের এই আয়োজনে উন্মোচিত হবে সৃজনশীলতার নতুন দিগন্ত। দেখা যাবে নানা বয়সের ট্রেন্ডি সব পোশাক, যার সবই বাংলাদেশে তৈরি। আর জানা যাবে নিভৃতে কাজ করে চলা পোশাক নকশাবিদদের সম্পর্কেও।

বেসমেন্টের এনট্রেসল হলে বসবে উৎসবছবি: লে মেরিডিয়ান

অতিমারিকালের অবরুদ্ধতা কাটিয়ে স্বাভাবিক প্রাত্যহিকীতে অভ্যস্ত হচ্ছে মানুষ। তাদের এই যাপনে অনুঘটক হচ্ছে টিকাদান কর্মসূচি। এই অবকাশে মন্দ সময় কাটিয়ে সুদিনে ফিরতে চাইছেন নানা মাপের উদ্যোক্তারা। তাঁরা নিচ্ছেন নানা উদ্যোগ করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে।

নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে এই আয়োজন
ছবি: লে মেরিডিয়ান

বিশেষত, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চমৎকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ান। ৪ মার্চ থেকে তারা শুরু করছে ‘রয়্যাল বেঙ্গল অ্যাটেলিয়ার’ শিরোনামে বিশেষ যাপন উৎসব। প্রাথমিকভাবে পাওয়া ২০০ আবেদন থেকে বাছাই করে ৩৮ জনকে মনোনীত করেছে এই প্রতিষ্ঠান। হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরের এনট্রেসল হলের ১৫ হাজার ৩০০ স্কয়ার ফুট জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে দুই মাসব্যাপী এই উৎসব, যার আয়োজনে প্রেরণা হয়েছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পপ-আপ স্টোরের ভাবনা।

এই আয়োজন ঘিরে চলমান প্রস্তুতি দৃষ্টিগোচর হলো ২০ ফেব্রুয়ারি সেখানে গিয়ে। গ্রাউন্ড ফ্লোরের এনট্রেসল হলে বিভিন্ন সাইজের স্টলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিসরের কারণে স্টলের সাইজ অভিন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে স্টলগুলো বরাদ্দে স্বচ্ছতা আনতে লটারির ব্যবস্থা থাকছে বলে জানালেন লে মেরিডিয়ানের বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মো. তানভীরুল আবেদীন।

চলছে প্রস্তুতি
ছবি: লেখক

বস্তুত লে মেরিডিয়ানের সোশ্যাল করপোরেট রেসপনসিবিলিটির অংশ হিসেবেই এই উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে বলেই জানালেন তানভীরুল আবেদীন। বললেন, নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। এটা সেই নিরিখে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ। পাশাপাশি তিনি যোগ করলেন, লে মেরিডিয়ান এই আয়োজন করতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই।

আরও জানা গেল, এই উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীতরা মূলত সবাই নারী উদ্যোক্তা এবং তাঁরা নারী, পুরুষ ও শিশুদের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হবেন। যদিও অংশগ্রহণের জন্য তাঁদের কাছ থেকে কোনো ফি বা স্টল ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি আয়োজনের যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিচ্ছে লে মেরিডিয়ান। তবে অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে তাদের পণ্য অবশ্যই বাংলাদেশে তৈরি হতে হবে। কোন আমদানি করা পণ্য নিয়ে কোনো উদ্যোক্তা অংশ নিতে পারবেন না। এ ছাড়া প্রতিটি উদ্যোক্তাকে তাঁদের স্টল ডিজাইন আগে জমা দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তাঁরা স্টল তৈরি করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রেও তাঁরা পণ্যের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সৃজনশীলতাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এখানেই থাকবে কপি শপ
ছবি: লে মেরিডিয়ান

এখানে স্টলের বাইরে আরও থাকছে একটি মিটিং এরিয়া ও একটি কফি শপ। ফলে প্রতিদিনই থাকছে ডিজাইনারদের সঙ্গে জনসংযোগের সুযোগ আর অবশ্যই মেলা ঘুরে দেখে কিছুক্ষণ সময় কাটানো আর গরম কফিতে চুমুক দেওয়ার ব্যবস্থা।

এই আয়োজনের সবকিছুই দেখছে লে মেরিডিয়ান। পাশাপাশি তারা প্রতিদিনি লাইভ করবে মেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। থাকবে ডিজাইনারদের সাক্ষাৎকারসহ নানা তথ্য। এ ছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন সেক্টরের তারকা, ফ্যাশন ডিজাইনরদের উপস্থিতি থাকবে এই উদ্‌যাপনকে মাত্রা দিতে। এ ছাড়া প্রত্যেক উদ্যোক্তা সূচি মেনে আয়োজন করতে পারবেন ফ্যাশন শো।

এই আয়োজনের বিস্তারিত জানানো হবে ২৪ ফেব্রুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে। এর আগে লে মেরিডিয়ানের মহাব্যবস্থাপক কনস্তান্তিনোস এস গ্যাভ্রিয়েল জানালেন, ‘সামাজিক কর্মকাণ্ডে আমরা অবদান রেখে থাকি। এরই অংশ হিসেবে আমাদের মনে হয়েছে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। এ জন্যই আমাদের সোশ্যাল করপোরেট রেসপনসিবিলিটিরই অংশ এই আয়োজন।’

এই আয়োজনকে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির প্রতি লে মেরিডিয়ানের ট্রিবিউট বলেই মনে করছেন কনস্তান্তিনোস। তিনি আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে দেশের নারী ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের উৎসাহী করার প্রয়াস তাঁরা পাচ্ছেন এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

অন্যদিকে লে মেরিডিয়ানের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের পরিচালক আফরা আনজুম মনে করেন, বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল খাত। বাংলাদেশেরও রয়েছে ঋদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় পোশাক ইতিহাস। ফলে এই আয়োজন বাংলাদেশের পোশাক নকশাবিদদের সৃজনশীলতারই উদ্‌যাপন। কোনো সন্দেহ নেই, আয়োজক হিসেবে এই উৎসব আমাদের অনিশেষ আনন্দের উৎস হচ্ছে।

এক ছাদের নিচে ৩৮ ব্র্যান্ড
ছবি: লে মেরিডিয়ান

বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের পরিচালক তাসনুভা ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলা উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়ছে। এই আয়োজন আসলে তাদের প্রাণিত করার প্রয়াস। এ জন্যই নারী ফ্যাশন ডিজাইনারদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে ভাবনার যে বিষয় এই ফ্যাশনে থেকে যায়, সেটা আমাদের ডিজাইনারদের তো আছেই; আরও আছে মার্কেট ট্রেন্ড সম্পর্কে অবগত হওয়ার সক্ষমতা। ফলে এই আয়োজন তাদের পাশে দাঁড়ানোর নামান্তর।

বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক নতুন মুখের আগমন ঘটেছে, যাঁদের নাম সেভাবে শোনা যায় না। অনেকেই নিভৃতে কাজ করেন। অথচ মানসম্মত কাজ করে থাকেন। তাঁদের তুলে আনাও এই উৎসব আয়োজনের একটি উদ্দেশ্য বটে। ফলে নতুন বা পাদপ্রদীপের আলোয় না থাকা ডিজাইনারদের সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেবে এই উৎসব। জানা যাবে তাদের ব্র্রান্ড আর কাজের ধরন সম্পর্কে। ভোক্তারা যেমন জানতে পারবেন, তেমনই মিডিয়াও অবগত হতে পারবে।

৪ মার্চ এই ফ্যাশন উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট রুবানা হক, বিভিন্ন দেশের কয়েকজন রাষ্ট্রদূতসহ উপস্থিত থাকবেন অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি।