শিশুদের শুধু গরম কাপড় হলেই চলবে না

শীত প্রায় এসেই গেল। এখন প্রয়োজন শিশুদের গরম কাপড়। দুরন্ত ও চঞ্চল শিশুদের জন্য শীতের পোশাক কেনা সত্যিই কষ্টকর। অনেক কিছু ভাবতে হয় শিশুদের গরম কাপড় কেনার সময়।

শীতে প্রয়োজন শিশুদের গরম কাপড়
ছবি: কবির হোসেন

শিশুরা সারা দিন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। এক গাদা মোটা কাপড় পরেও তারা হুটোপুটি করতেই থাকবে। ফলে আরামের জন্য শীতের পোশাক পরিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। শীতের পোশাক পরে হুটোপুটি করতে গিয়ে শিশু গরমে ঘেমে যাচ্ছে কি না, সে মোটা কাপড় পরে আরাম বোধ করছে কি না, এ রকম অনেক বিষয় ভাবতে হয়। শিশুবিশেষজ্ঞ সোহেলা আখতার জানান, হালকা শীতে শিশুকে সুতির ভারী পোশাক পরানো যেতে পারে। অতিরিক্ত শীতে শিশুকে উলের পোশাক পরালেও ভেতরে সুতি কাপড়ের পোশাক পরিয়ে নিতে হবে। সরাসরি উলের পোশাক পরানো হলে শিশুর অস্বস্তি হতে পারে।

সোহেলা আখতার আরও জানান, শীতে শিশুকে গরম কাপড় পরালেও খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত গরম কাপড় পরানোর জন্য শিশুর শরীর ঘেমে যাচ্ছে কি না। দীর্ঘ সময় ঘেমে থাকলে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

ছেলেদের জন্য পাওয়া যাবে সোয়েটার, ফুলহাতা শার্ট, জিনসসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী কাপড়ের প্যান্ট
ছবি: কবির হোসেন

শীতে ফ্ল্যানেলের কাপড়ের পোশাক শিশুদের জন্য আরামদায়ক হতে পারে। সুতি ও ফ্ল্যানেলের কাপড় শিশুর কোমল ত্বকে তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না। খেয়াল রাখতে হবে, কোনো কৃত্রিম তন্তুর পোশাক পরালে শিশু অস্বস্তিতে ভোগে কি না। কৃত্রিম তন্তু বা সুতার তৈরি পোশাক শিশুর অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। এ রকম অবস্থায় খেয়াল রাখতে হবে, কোনো বিশেষ কাপড়ের পোশাক পরালে শিশুর গায়ে লালচে দাগ বা চুলকানি হচ্ছে কি না। হলে সেই কাপড়ে তৈরি কোনো পোশাক শিশুকে পরানো যাবে না।

সকাল ও সন্ধ্যায় সাধারণত শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। এ সময় শিশুকে কানঢাকা টুপি পরানো ভালো। তা ছাড়া নরম কাপড়ের মাফলারও পরানো যেতে পারে। তবে রোদ উঠলে বা গরম লাগলে শীতের মোটা কাপড় খুলে রাখতে হবে। এটি অভিভাবকেরাও যেমন করবেন, তেমনি শিশুকেও শিখিয়ে দিতে হবে, যেন তারা নিজেরাও সেটা করতে পারে। এ বিষয়ে স্কুলগামী শিশুদের জন্য স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীরাও সহায়তা করবেন শিশুদের।

মেয়ে শিশুদের জন্য রয়েছে লং পুলওভার, রোল নেক বা গাউনের ধাঁচে তৈরি সোয়েটার
ছবি: কবির হোসেন

এ প্রসঙ্গে ঢাকার গুলশান আরা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাবিনা শারমিন বলেন, ‘টিফিনের সময়টাতে বাচ্চারা খেলাধুলা করে। এ সময় গরম লাগলেও অনেক শিশুই শীতের পোশাক খুলে রাখে না। আমরা ওদের আলাদা খেয়াল রাখি। ওদের প্রয়োজনমতো সাহায্যও করি।’

পোশাক বিষয়ে শিশুদের পছন্দ–অপছন্দ স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, যাতে তারা শিশুকে সহায়তা করতে পারেন যথাসময়ে।

বাজারে শিশুদের জন্য বাহারি শীতপোশাক দেখা যায়। মিকি মাউস, গুফিসহ নানা কার্টুন চরিত্রের ছবি আঁকা পোশাক রয়েছে। খরগোশ, জিরাফ আর নানা রকম প্রাণীর মজার মজার ছবি আঁকা পোশাকও পাবেন ওদের জন্য। পুতুল বসানো ভিন্নধর্মী কিছু পোশাকও মিলবে। শিশুদের জন্য যথাসম্ভব উজ্জ্বল রং ও বৈচিত্র্যময় নকশার পোশাক বেছে নেওয়া প্রয়োজন।

নকশাবিদ সাদিক কুদ্দুস জানালেন, ছোট্ট মেয়েদের জন্য সূক্ষ্ম উলের সুতা দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের কটি পাওয়া যাচ্ছে। এসব কটি টপ-জিনসের সঙ্গে যেমন মানাবে, তেমনি কামিজের সঙ্গেও দেখাবে দারুণ। এ ছাড়া রয়েছে লং পুলওভার, রোল নেক বা গাউনের ধাঁচে তৈরি সোয়েটার। ছোট ছেলেদের জন্য বিভিন্ন ধরনের শীতপোশাকের মধ্যে ডেনিমের জ্যাকেট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ছেলেদের জন্য পাবেন সোয়েটার, জ্যাকেট আর ফুলহাতা শার্ট। জিনসসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী কাপড়ের প্যান্ট রয়েছে বাজারে। ক্যাজুয়াল ব্লেজারও কিনে দিতে পারেন ছোট্ট ছেলেটিকে।

ছেলেদের জন্য পাওয়া যাবে জ্যাকেট
ছবি: কবির হোসেন

মেয়েদের জন্যও রয়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট আর ভারী কাপড়ের প্যান্ট। সোয়েটারের বুননে যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি রয়েছে পুঁতি ও লেসের ব্যবহার। হুডিযুক্ত পোশাক রয়েছে ছেলেমেয়ে সবার জন্যই।

সাদা ও রঙিন—দুই ধরনেরই মোজা পাবেন শিশুদের জন্য। একই ডিজাইনের টুপি আর মাফলারের সেট কিনে দিতে পারেন আপনার শিশুকে। মাফলার আর টুপি আলাদাভাবে পরতে না চাইলে শিশুকে কানঢাকা টুপি কিনে দিতে পারেন।

ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, কাপড়ের দোকান এবং বাজারে শিশুদের জন্য গরম কাপড় কিনতে পাওয়া যাবে বিভিন্ন দামে।