শেষ রাতে মোহময়ী ম্রুণাল

ল্যাকমে ফ্যাশন উৎসবের অনুরণিত হচ্ছে বিদায়ের সুর। গতকাল রোববার রাতে শেষ হয়েছে করোনার কারণে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২০’-এর ভার্চ্যুয়াল আয়োজন। তবে ল্যাকমে শেষ দিনের আয়োজন ছিল নেহাতই সাদামাটা। অনুষ্ঠিত হয় দুটি মাত্র শো।

যদিও দিন শুরু হয়েছিল চমৎকার আলোচনা অনুষ্ঠান দিয়ে; ভয়েস অব ফ্যাশনের ব্যানারে এ আলোচনার শিরোনাম ছিল ‘কোশ্চেনস নো ওয়ান আসকস’। চমৎকার এ আলোচনায় ফ্যাশন–দুনিয়ার নানা ইতিবাচক, নেতিবাচক আর সমসাময়িক বাস্তবতা উঠে আসে আলোচকদের বক্তব্যে। এমনকি প্রত্যেকে তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন দর্শকদের সঙ্গে।

শেফালি বাসুদেবের উপস্থাপনায় আলোচনায় অংশ নেন মুম্বাই মিররের নম্রতা জাকারিয়া, হিন্দু উইকএন্ডের সম্পাদক রোজেলা স্টিফেন, মুম্বাই মিডডের ফ্যাশন রাইটার শ্বেতা শিবারে এবং ফ্যাশন কনসালট্যান্ট ও লেখক বরুণ রানা। কোনো সন্দেহ নেই, এই আলোচনা ভারতীয় ফ্যাশনজগৎকে বুঝতে বিশেষ সহায়ক হবে। তাঁদের আলোচনায় নানা বিষয়ের পাশাপাশি উঠে আসে ভারতীয় ফ্যাশনে বলিউড তারকাদের সম্পৃক্ততার ভালো–মন্দও। এমনকি এই ভার্চ্যুয়াল আসর নিয়েও তাঁরা আলোচনা করেন। এই শোগুলোকে ফ্যাশন ফিল্ম আখ্যায়িত করে পক্ষে–বিপক্ষে কথা বলেন আলোচকেরা।

দিনের প্রথম শোতে ছিল ডিজাইনার আয়শা রাও ও পুনিত বালানার অভিনব আয়োজন। ডিজাইনার আয়শা তাঁর এই আয়োজন অস্ট্রেলিয়ার রংবাহারি ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। ব্যাংকসিয়াস, গামনাটস, ওরিয়েন্টাল পপিস, ট্যামারিলস, ম্যাডোনা লিলিসহ নানা ফুলের সৌন্দর্য তিনি মেলে ধরেন তাঁর কাপড়ের ক্যানভাসে। তবে আয়শা তাঁর এ আয়োজনে সাবেক ভারতীয় শিল্পধারাকে খুব সুন্দরভাবে যুক্ত করেছিলেন। লং স্লিভ চোলি ও লেহেঙ্গা পরে আয়শার আয়োজনকে আরও আলোকিত করেন বলিউড নায়িকা আথিয়া শেঠি।

পুনিত বালানা তিন রঙের আঁচড়ে তার ক্যানভাসকে রঙিন করেন। উৎসবের রাতের জন্য তিনি রং বেছে নেন রক্তলাল, গোলাপি আর বাটার কাপ। পুনিত জয়পুর ও মোগল সাম্রাজ্যের নানা শিল্পকলাকে মোটিফ হিসেবে তুলে ধরেন।

এই শোয়ের পর ছিল ‘আজিও স্নিকারহুড: ফর দ্য লাভ অব স্নিকারস’। নানা ধরনের স্নিকার প্রদর্শিত হয় সংক্ষিপ্ত এ ক্যাটওয়াক কাম ফিল্মে।

পরবর্তী আয়োজন ছিল এবারের আয়োজক ল্যাকমের আয়োজনে ‘ল্যাকমে মেকআপ মাস্টারক্লাস’। ল্যাকমের নতুন ৪৮ ধরনের শেড নিয়েই মূলত কথা হয়। বিউটিশিয়ান নম্রতা সোনি ওই শেড ব্যবহার করে সাজান ল্যাকমের পণ্যদূত ম্রুণাল ঠাকুরকে। পরে তিনি রিমঝিম দাদুর পোশাকে গ্র্যান্ড ফিনালের ক্যাটওয়াকে অংশ নেন।

ল্যাকমের এই ভার্চ্যুয়াল উৎসবের শেষ রাত উজ্জ্বল ছিল সাক্ষা ভাট, কিন্নি কামাত আর রিমঝিম দাদুর নান্দনিক নিবেদনে। তরুণ ডিজাইনার জুটি সাক্ষা-কিন্নি ল্যাকমের এই গ্র্যান্ড ফিনালেকে নানান রঙে রঙিন করেন। তাঁদের সংগ্রহ ‘বানজারা’, অর্থাৎ যাযাবর সম্প্রদায় দ্বারা অনুপ্রাণিত। মিররের কাজ, সুতার কাজ, বাটিক, ব্লক প্রিন্ট, মধুবনীসহ সবকিছুই ছিল তাঁদের সম্ভারে৷ সাক্ষা-কিন্নির ডিজাইন করা সবুজ রঙের স্লিট স্কার্ট আর রঙিন শার্ট পরে এই রাতে সবাইকে মুগ্ধ করেন বলিউড অভিনেত্রী ম্রুণাল ঠাকুর।

সমাপনী রাতে পর্দা নামানো উপস্থাপনা ছিল ডিজাইনার রিমঝিম দাদুর। উৎসবের রং হিসেবে তিনি বেছে নেন গোল্ড, সিলভার, গাঢ় সবুজ, নীল ও কালো। মেটালিক উপাদানের আবহে জ্যামিতিক নানান মোটিফ মেলে ধরেন রিমঝিম। ম্রুণাল মেটালিক অফশোল্ডার টপের সঙ্গে সিকুইনের কাজ করা লেহেঙ্গায় রাতকে আরও মোহময়ী করে তোলেন। এই প্রথম ল্যাকমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে ল্যাকমের গ্র্যান্ড ফিনালেতে হাঁটলেন ম্রুণাল। অনুষ্ঠান শেষে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই বলিউড অভিনেত্রী একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে এ সফর স্বপ্নের মতো। আমি কখনো ল্যাকমের ফিনালের র‍্যাম্পে হাঁটব, তা কল্পনাও করিনি। তাই আজ আমার দারুণ লাগছে।’