সূচিশিল্পে বিশেষায়িত সংগ্রহ নিপুণের

পরিস্থিতি যেমনই হোক প্রকৃতি চলবে আপন খেয়ালে। সময় ঘুরে আসবে ঈদ। ফ্যাশন হাউসগুলোর প্রস্তুতি তাই ছিল বরাবরের মতো। সেই খবর থাকছে ধারাবাহিকভাবে

নিপুণ। দেশীয় ফ্যাশনের অগ্রবর্তী এই ব্র্যান্ড শুরু থেকেই কাজ করে আসছে হ্যান্ডলুমের কাপড় নিয়ে। সেই ধারা আজও অব্যাহত। তবে ট্র্যাডিশন রক্ষায় ট্রেন্ড থেকেও দূরে সরে আসেনি এই ফ্যাশন ব্র্যান্ড। নকশা আর এমবেলিশমেন্টে, ঐতিহ্য আর আধুনিকতা সমান্তরালে উপস্থাপন করে চলছে নিপুণ। যেমন ঐতিহ্যবাহী সূচিশিল্প আজও তাদের পোশাকে স্থান পায় সমসময়ের ট্রেন্ডের আলোকে। ব্যতিক্রম ঘটেনি নিপুণের এবারের ঈদ কালেকশনে।

রং, কাপড় ও ডিজাইন বৈচিত্র্যকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হয়েছে নিপুণের ঈদ কালেকশন। ইতিমধ্যে ঈদ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ক্রেতারাও। যদিও করোনার প্রভাবে এবারও মানুষ গৃহবন্দী। বাংলাদেশের মানুষ এখনো জানে না এবারের ঈদ উৎসব তারা কীভাবে পালন করবে। ঘরে, না মুক্ত বাতাসে। যদিও হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। এর মাঝে প্রকৃতিও তার রূপ পাল্টাচ্ছে; বৈশাখের ঝোড়ো বাতাস, রোদের তীব্রতা, ভ্যাপসা গরম। সব মিলিয়ে প্রকৃতিতেও নেই স্বস্তি। তাই ক্রেতাদের সময় উপযোগী পোশাকে সমৃদ্ধ একটি ঈদ কালেকশন বাজারে এনেছে দেশীয় ফ্যাশন হাউস নিপুণ।

এবারের ঈদ আয়োজন নিয়ে নিপুণের কর্ণধার আশরাফুর রহমান বলেন, এবারের ঈদ কালেকশনের জন্য প্রথমেই আমাদের ভাবতে হয়েছে ফেব্রিক নিয়ে। যেহেতু সময়টা গরমের, তাই আরামদায়ক কাপড়ে পোশাক তৈরি করতে হবে। আবার এর মধ্যে ফেস্টিভটাও তুলে ধরতে হবে। তাই ক্রেতাদের স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে নিপুণের প্রোডাক্ট লাইনে ফেব্রিক হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে সুতি, লিনেন, জয়সিল্ক ও সুতি; আর মোটিফের ক্ষেত্রে ফ্লোরাল, দেশীয় রাজবাড়ী, ইসলামিক প্রাধান্য পেয়েছে। তবে পুরো কালেকশনে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সূচিশিল্প। এ ছাড়া ভ্যালু এডিশন ও অলংকরণ করা হয়েছে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, গ্লাস, টারসেল, স্ক্রিন প্রিন্ট।

দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন ও আরামদায়ক ফেব্রিকে তৈরি নিপুণের ঈদ কালেকশনে তুলে ধরা হয়েছে উৎসবের মেজাজ। সেখানে থাকছে নিজস্ব ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লং কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস-স্কার্ট, কটি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট এবং অর্নামেন্টস ও গৃহসজ্জা সামগ্রী।

রং এবং কাট-প্যাটার্নের বৈচিত্র্যও লক্ষ করা যায় এই সংগ্রহে। অশরাফুর রহমান ফারুক আরও যোগ করেন, কয়েক বছর ধরেই সালোয়ার–কামিজে বেশ কিছু বৈচিত্র্য যোগ হয়েছে। ক্রেতাদের কাছেও যা বেশ সমাদৃত। সালোয়ারে প্যান্ট স্টাইলই রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কামিজে ইনার আর কেইপ প্যাটার্ন তরুণীদের এলিগ্যান্ট লুক এনে দেয়। আর রং নির্বাচনে মাল্টিকালার বা কনট্রাস্ট কালার বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া অফ হোয়াইট, কমলা, মেরুন, ম্যাজেন্টা, বিস্কুট, পিচ এবং নীলের নানা শেড ব্যবহার করা হয়েছে। লাল রঙেরও কিছু ভেরিয়েন্ট শেড নিয়ে কাজ করা হয়েছে।

মাকুর সংগ্রহ

নিজেদের কো ব্যান্ড মাকু নিয়েও বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এই জ্যেষ্ঠ উদ্যোক্তা। জানান, মূলত বয়সে তরুণদের জন্য ট্রেন্ডি কালেকশন তৈরি করে নিপুণের এই কো-ব্র্যান্ড। তবে পাওয়া যাবে সব বয়সীর জন্য আরামদায়ক পোশাক। মাকুর আরও একটি বিশেষ দিক হচ্ছে এখানে সব পোশাকই সিঙ্গেল পিস। কেউ চাইলে টপস পার্টের সঙ্গে বটম মিলিয়ে কিনতে পারবে। মূলত মিনিম্যালিস্টিক ফ্যাশনকেই প্রতিনিধিত্ব করে এই কো-ব্র্যান্ড। একজন মানুষের ডেইলি ফ্যাশন নিয়ে কাজ করলেও উৎসবগুলোতে সেজে উঠে ভিন্ন সাজে। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের মাধ্যমে ট্রেন্ড এবং ফেস্টিভ স্টাইল স্টেটমেন্টকে তুলে ধরে মাকুর ফেস্টিভ কালেকশন।

তবে মহামারি থমকে দিয়েছে অনেক কিছুই। সে আকুতিও ছিল আশরাফুর রহমানের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘গত বছর প্রধান উৎসবগুলোতে আমরা ব্যবসা হারিয়েছি। এ বছরও তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো টিকের থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো সারভাইভ করে যাবে আর বাকিরা হারাবে তাদের সহায় সম্বল। এর থেকেও বড় একটি বিষয় হচ্ছে, হাতের কাজের যে দক্ষ কারিগরেরা রয়েছেন, তাঁরা যদি কাজের অভাবে বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যান, আমরা আমাদের ঐতিহ্যের অনেক বড় একটি অংশ হারাব। কারণ, লকডাউনে ফ্যাশন হাউসগুলোর আউটলেট বন্ধ থাকায় তৈরি পোশাক বিক্রি না হওয়ায় কারিগরেরাও রয়েছেন বিপাকে।’

ছবি: নিপুণ