করোনায় যখন অলস সময় কাটছে, তখন অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গ্রাফিকস ও ওয়েব ডিজাইনের কাজ শুরু করেন তরিকুল ইসলাম। প্রথম মাসেই আয় হয় কয়েক হাজার টাকা। সেই থেকে শুরু। এখন ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেন। রোজগারও মাসে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বছর দুয়েক হলো হলে থাকা-খাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ আর মা-বাবার কাছে চাইতে হয় না, নিজেই দেন তরিকুল।
তরিকুল ইসলাম যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে থাকেন। বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী। চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে গেছে। এখন ফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকায় বড় পরিসরে একটি স্টার্টআপ চালু করার পরিকল্পনা আছে।
এখন থেকেই তাঁর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। পড়ালেখার পাশাপাশি ক্যাম্পাসেই ‘আরডি সলিউশন আইটি’ নামে একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এই তরুণ। প্রতিষ্ঠানে তরিকুলসহ মোট তিনজন কাজ করেন। কম্পিউটারবিজ্ঞানের এই ছাত্র বলছিলেন, ‘চাকরি করার ইচ্ছা আমার নেই। আমি বরং চাকরি দিতে চাই। এমন একটা প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই, যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
শুধু তরিকুল ইসলাম নন; যবিপ্রবিতে এমন আরও অনেকের সঙ্গেই দেখা হলো, যাঁরা ক্যাম্পাসে ফ্রিল্যান্সিং করে রোজগার করছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের খরচ নিজে বহন করেন। কেউ কেউ বাড়িতে টাকাও পাঠান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর হোসাইন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি নামী কোম্পানির ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনার কাজ করেন। সঙ্গে একটা ল্যাপটপ থাকলেই হলো। ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠই হয়ে যায় তানভীরের ‘অফিস’। তানভীর জানালেন, একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর বার্ষিক চুক্তি আছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, ইকুয়েডর, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের নামী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরি ও গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ করেন। ঘণ্টা কিংবা প্রকল্পভিত্তিক, দুধরনের কাজই করেন তিনি। তানভীর হোসাইনের বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায়। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলে থাকেন এই তরুণ। বলছিলেন, ‘আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। বাড়িতে মা-বাবা ও ছোট বোন থাকে। চাকরি থেকে বাবা অবসর গ্রহণের পরপরই আমি নিজে আয় করে নিজের খরচ চালাতে পারছি। আমার কাছে এটা অনেক বড় বিষয়।’
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এম সাব্বির মোল্লাও এখন ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। দেড় বছর ধরে বাড়ি থেকে কোনো টাকা নেন না তিনি। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।
তরিকুল, তানভীর ও সাব্বিরের মতো বিভিন্ন বিভাগের ছয়জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা অনলাইনে কাজ করে ডলার উপার্জন করছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ করেন। এই তরুণদের দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্যরাও। তবে তরিকুলের মন্তব্য, ‘শুরুতেই টাকার পেছনে দৌড়ালে হবে না। কাজটা আগে ভালো করে শিখতে হবে। কাজ শিখতে পারলে টাকা এমনিতেই ধরা দেবে। সে জন্য ধৈর্য থাকা চাই।’
তানভীর হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে দেখভাল ও কর্মশালার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করা, বিদেশি গ্রাহকদের কাছ থেকে কাজ নেওয়া, কাজ সম্পন্ন করা এবং উপার্জিত ডলার টাকায় রূপান্তর করা—এসবের অনেক কিছুই নতুনেরা বুঝতে পারেন না। তাই ইচ্ছা থাকলেও প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী সম্ভাবনাময় এই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারছেন না।’
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক আলম হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কেউ আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ নিতে আসেনি। তবে আপনি যেহেতু জানালেন, এ বিষয়ে একটি গণ নোটিশ দিয়ে যারা আগ্রহী, তাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে।’