‘প্রথম দেখায় প্রেম’ কথাটায় কোনো দিন বিশ্বাস করিনি, অথচ...
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে লেখা আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভালোবাসার টক–ঝাল–মিষ্টি গল্প লিখে পাঠিয়েছেন পাঠক। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। তেমনই একটি লেখা পড়ুন এখানে।
‘প্রথম দেখায় প্রেম’ কথাটায় কোনো দিন বিশ্বাস করিনি। কারণ, মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যে আমি কখনো অকৃষ্ট হই না। তার প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।
নাম না হয় না–ই বলি। একটা প্রজেক্টে তার সঙ্গে দেখা। অনেক মানুষের ভিড়ে খুব যে একটা আলাদা, প্রথম দেখায় তা মনে হয়নি। কিন্তু একটা সময় খেয়াল করলাম, সবাই তার আচরণ, কাজ, কথায় মুগ্ধ। এ মুগ্ধতা আমাকে সেভাবে স্পর্শ করেনি; কারণ, দূরত্ব ছিল। সকালে যখন হাঁটতে বের হতাম, দেখতাম, সে জঙ্গলে ঘুরছে। নানা কিছু কুড়াচ্ছে, নয়তো কুকুরের বাচ্চা কোলে নিয়ে টংদোকানে ধোঁয়া–ওঠা চা খাচ্ছে। সাধারণ সৌজন্য বিনিময় হতো, ছোটখাটো সম্ভাষণ—এ পর্যন্ত।
একদিন ভোরে দেখি একটা গাছের নিচে চোখ বুজে ধ্যানের ভঙ্গিতে বসে আছে। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। এরপর সুপ্রভাত জানালাম। চোখ মেলে চাইল, যেন ধ্যানভঙ্গ হলো। এত ভোরে গাছের নিচে বসে আছে কেন, জানতে চাইলাম। আমাকে ইশারায় কথা বলতে বারণ করল এবং কাছে ডাকল। মন্ত্রমুগ্ধের মতো কাছে গেলাম, সে উঠে দাঁড়াল এবং তার বসার জায়গায় চোখ বন্ধ করে বসতে বলল। আমি চোখ বুজে ধ্যানে বসলাম।
মিষ্টি একটা সুবাস, বুক ভরে শ্বাস নিলাম। পরের ঘটনাটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমার ওপর যেন শত শত পাপড়ি ঝরে পড়ল। চোখ মেলে দেখি, কোথাও কেউ নেই। আমি একা আর চারপাশে ঝরে পড়া তারার মতো শুভ্র শিউলি ফুল। বুঝতে পারলাম, সে গাছটায় ঝাঁকি দিয়ে আমার ওপর ফুল ফেলে চলে গেছে।
এক দিন পর প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। দুজন দুদিকে চলে গেছি। ভেবেছিলাম, এ ক্ষণিকের মোহ। কিন্তু এখনো খুব ভোরে ঘুমের ঘোরে শিউলির সুবাস আমাকে আচ্ছন্ন করে। মনে হয়, শতসহস্র শিউলি আমার ওপর ঝরে পড়ছে।
আমি তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। শুনেছি, অন্য শহরে আরেকটা প্রজেক্টে কাজ করছে। এখন শুধু মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষা।