ভাইরাল ‘সিক্স সেভেন’-এ কেন মেতেছে জেন আলফা, মানে কী এর
প্রজন্ম বদলায়, আর প্রতিটি নতুন প্রজন্মই হাজির হয় তাদের নিজস্ব ‘পাগলামি’ নিয়ে। পাগলামি কেন বলছি? চলুন, কিছুটা পেছনে ফেরা যাক। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে বেবি বুমাররা মেতেছিল বিটল ম্যানিয়ায়, যখন পৃথিবীময় সুরের জাদুতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল ব্রিটিশ ব্যান্ড দ্য বিটলস।
জেন এক্সের প্রিয় ছিল এমটিভি আর পাঙ্ক রক ঘরানার গান। মিলেনিয়ালদের সময়টা একটু অন্য রকম, নতুন আসা ইন্টারনেটেই বুঁদ ছিল তারা।
আর জেন জির অদ্ভুত সব টার্ম আর মিম তো এখনো আলোচনার বিষয়। এরই মধ্যে কয়েক দিন ধরে ভাইরাল দুটি সংখ্যা—৬ আর ৭। হাতের অঙ্গভঙ্গিতে ইংরেজিতে সুরে সুরে যাকে বলা হচ্ছে ‘সিক্স সেভেন’।
এটা বলে বা শুনে জেন আলফা বেশ মজা পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু স্কুল ‘সিক্স সেভেন’ শব্দটাই নাকি নিষিদ্ধ করেছে! কিন্তু কেন?
শুরুটা কোথায়
জেন আলফার কাছে শব্দটি উচ্ছ্বাস বা বিস্ময়সূচক। এর অর্থ ধরা হচ্ছে ‘মোটামুটি’ বা ‘লম্বা’ (লম্বা মানুষ বোঝাতে)। শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টিকটকের ভাইরাল ভিডিও ও মিম থেকে।
এটি মূলত মার্কিন র্যাপার স্ক্রিলার ‘ডুট ডুট’ নামের ট্র্যাক, যা টিকটকে ভাইরাল হয় গত বছর এবং মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড় লামেলো বলের উচ্চতার (৬ ফুট ৭ ইঞ্চি) সঙ্গে সম্পর্কিত। এই গানের কোনো গভীর মানে নেই, শুধু ছন্দে বারবার বাজে ‘সিক্স সেভেন’, যেটা আলফা জেনারেশনের মনে গেঁথে গেছে।
এরপরই সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক ভিডিও, রিমিকস, মিম, আর অবশেষে ট্রেন্ডেই পরিণত হয়েছে। কয়েক সপ্তাহেই এটি হয়ে উঠেছে জেন আলফার ‘ইনসাইড জোক’।
অর্থহীন, কিন্তু অর্থপূর্ণ
ভাষাবিদদের মতে, একে বলে ‘সেমান্টিক ব্লিচিং’, মানে কোনো শব্দের মূল অর্থ মুছে গিয়ে বেঁচে থাকে কেবল একটি অভিব্যক্তি বা অনুভূতি। ‘সিক্স সেভেন’-এর কোনো অভিধানগত মানে নেই, কিন্তু এটি একধরনের হাস্যরসের উপাদান, যোগাযোগের প্রতীকও বটে। জেন আলফা এটি ব্যবহার করে নিজেদের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করতে আর একসঙ্গে বড়দের কিছুটা হতবুদ্ধি করে দিতেও।
যেমন বন্ধুর রসিকতায় তারা হঠাৎ বলে ওঠে, ‘সিক্স সেভেন!’ আবার অনেক সময় এটি কেবল একধরনের কৌতুক, যা বোঝে শুধু আলফা প্রজন্মের সদস্যরাই। অর্থাৎ এটি একটি সাংকেতিক হাস্যরস, যেখানে শব্দের মানে নয়, বরং বোঝার অক্ষমতাটাই মজার অংশ। তবে মজার ব্যাপার হলো, ২০২৫ সালে ডিকশনারি ডটকম অবিশ্বাস্যভাবে এই ‘সিক্স সেভেন’–কে ঘোষণা করেছে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে।
শেষ কথা
খানিকটা বিভ্রান্তিকর হলেও আপাতত ‘সিক্স সেভেনেই’ মজা খুঁজে নিয়েছেন জেন আলফা। হয়তো অন্যান্য ট্রেন্ডের মতো এটিও ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু মনে রাখবেন, প্রতিটি প্রজন্মই বড় হয় তাদের নিজস্ব ভাষায়। বিটলম্যানিয়া বা সিক্স সেভেন—একেক প্রজন্মের ভিন্ন জিনিসের প্রতি কৌতূহল, একাত্মতা আর স্বকীয়তার প্রতীক।
সূত্র: ফক্স ফাইভ নিউইয়র্ক, ফার্স্ট পোস্ট ও দ্য ইনফোগ্রাফিকস শো