যে ৬টি লক্ষণ বলে দেবে অফিসের কাজের পরিবেশ বিষাক্ত কি না

কাজের পরিবেশ টক্সিক হলে সেখানে কাজ করা বেশ কঠিন হয়ে যায়
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০ জন চাকরিজীবীর ৭ জনই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রকে টক্সিক বা বিষাক্ত মনে করেন। অনেকে উপায় নেই বলে চাকরিটা চালিয়ে যান। কাজের পরিবেশ টক্সিক হলে সেখানে কাজ করা বেশ কঠিন হয়ে যায়। এ ধরনের ঝামেলায় পড়তে না চাইলে নতুন চাকরি খোঁজার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখুন।

টক্সিক কর্মপরিবেশে কাজ করতে না চাইলে চাকরিতে আবেদনের সময় ভালোভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে নিন বা সাক্ষাৎকার পর্বে নিচের ৬টি বাক্য যদি বলা হয়, তাহলে বুঝবেন, কর্মক্ষেত্রটি আপনার জন্য সঠিক নয়। যদিও এসব কথাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা ইন্টারভিউ বোর্ডে খুব ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হবে।

আরও পড়ুন
বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০ জন চাকরিজীবীর ৭ জনই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রকে টক্সিক বা বিষাক্ত মনে করেন
ছবি: পেক্সেলস

১. আমাদের কর্মীরা ছোট ছোট দলে কাজ করে
সাধারণত খুব বড় কিংবা একেবারে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এ বাক্য লেখা থাকে। কথাটিতে নিম্নপদস্থ বা কনিষ্ঠ কর্মীদের শোষণ ও উৎপীড়নের আভাস আছে। দল ছোট হলে আপনার ওপর সব সময়ই অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকবে। দেখা যাবে, উপার্জনের তুলনায় আপনাকে অনেক বেশি কাজ করতে হচ্ছে।
২. এই পদে প্রতিযোগিতামূলক বেতন ও পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে
এই বাক্য সাধারণত ছোট বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরির বিবরণে দেখা যায়। এখানে ম্যানেজার জানেন, এই পদে যে লোককে নেওয়া হবে, তাঁকে ঠিকঠাক বেতন দেওয়া হবে না। চাকরির বিজ্ঞপ্তিতেও বেতনের কথাটা উল্লেখ করা থাকবে না। এ ধরনের চাকরিতে সময়ের সঙ্গে কাজের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে লেখা সেই পদোন্নতির প্রতিশ্রুতি আর পূরণ হবে না। উল্টা যখন কোনো বড় পদ খালি হবে, তখন নতুন কাউকে নিয়ে আসা হবে। তারপর বস আপনাকে বলবে, ‘নতুন লোকটাকে প্রশিক্ষণ দাও।’

নতুন চাকরি খোঁজার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখুন
ছবি: প্রথম আলো

৩. আমরা কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি আনন্দও করি
এর অর্থ হচ্ছে, আপনাকে এত কাজ দেওয়া হবে, যা আপনি অফিসের নির্ধারিত কর্মঘণ্টায় শেষ করতে পারবেন না। কিন্তু তারপরও ব্যবস্থাপকেরা চাইবেন আপনি অফিসের পর ‘হ্যাপি আওয়ারে’ বা ছুটির দিনে অফিসের সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেবেন। তবে কাজের বাইরে বাড়তি সময় দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত কোনো টাকা না পেলেও ‘ফ্রি’ খাবার পেলেও পেতে পারেন।
৪. প্রার্থীকে দ্রুততার সঙ্গে উন্নত মানের কাজ করতে জানতে হবে
বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা লেখা থাকে। এখানে বেতন ভালো হতে পারে, কিন্তু কাজের গতি হতে হবে রকেটের মতো! অর্থাৎ সব কাজই দ্রুত করতে হবে। কাজে ভুল করলে চাকরি খোওয়াতেও প্রস্তুত থাকতে হবে।

অফিসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সংখ্যালঘু, নারী বা একটু ব্যতিক্রমী পরিচয়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে ভিন্ন রকম আচরণ করা হয়।
ছবি: প্রথম আলো

৫. আমরা সবার সঙ্গে সমান আচরণ করি
কথাটা শুনতে বেশ লাগে। আর কোম্পানিও চায় সবাই ভাবুক তাঁরা খুব ‘ইনক্লুসিভ’ ও মুক্তমনা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাস্তবে এমন কিছুই না। যেকোনো জায়গায়ই সংখ্যালঘু, নারী বা একটু ব্যতিক্রমী পরিচয়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে ভিন্ন রকম আচরণ করা হয়। তাই যেসব প্রতিষ্ঠান এই দাবি করে যে তারা সবার জন্য সমান, তারা কি আদতেই সত্যি বলছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।
৬. আমাদের আনলিমিটেড ছুটি আছে
শুনতে তো বেশ দারুণ লাগে, তাই না? কিন্তু কাজের চাপ এত বেশি থাকবে যে ছুটি নেওয়ার সময়ই পাবেন না। তার ওপর ছুটি নিতে হলে ম্যানেজারের অনুমতি লাগবে। সেটিও পাবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর যদি কোনোভাবে ছুটি পেয়েও যান, তখনো অফিস আপনার পিছু ছাড়বে না। তাই বছরে ঠিক কদিন ছুটি পাবেন, আগে থেকেই তার নিয়মমাফিক হিসাব থাকা চাই।

চাকরি ছেড়ে আবার চাকরি খোঁজা বিরাট ঝক্কির কাজ, তাই চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে আগে পড়ে নিন
ছবি: পেক্সেলস

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এই ৬টি বাক্য থাকলে যা করবেন
প্রথমেই জেনে রাখা ভালো, এ ধরনের কথা লেখা থাকলেই যে সেই অফিসের পরিবেশ টক্সিক, এমনটা কিন্তু সব সময় ঘটে না। বিজ্ঞপ্তিতে যদি এমন একটা বা দুটি বাক্য লেখা থাকে, তাহলে সেখানে আবেদন করা মোটামুটি নিরাপদ।
এসব কথা লেখা থাকলেও নিজের সন্তুষ্টির জন্য ইন্টারভিউ রাউন্ড পর্যন্ত যেতে পারেন এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সরাসরি জানতে পারেন।
কোথায় কাজ করতে যাচ্ছেন, এ ব্যাপারে আগে থেকেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কারণ, চাকরি ছেড়ে আবার চাকরি খোঁজা বিরাট ঝক্কি। তাই চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। সন্দেহজনক কিছু লেখা থাকলে সেখানে আবেদন করবেন নাকি করবেন না, সে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আপনার।

সূত্র: আনগ্রিন্ড কালচার

আরও পড়ুন