মশা এক কামড়ে কতটুকু রক্ত খায়
বিকেলে হয়তো আরাম করে বসেছেন বারান্দায়, হাতে এক কাপ চা। হঠাৎ বাহুতে একটু চুলকানি হলো। চুলকানির স্থানে তাকিয়ে দেখলেন, একটা লাল দাগ। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কাজটা মশার। এক ফাঁকে কামড় দিয়ে রক্ত নিয়ে চলে গেছে। আর মশাটা চলে যাওয়ার পরই আপনি তা টের পেয়েছেন। কিন্তু মশাটা এক কামড়ে আপনার শরীর থেকে কতটা রক্ত নিয়ে গেল?
উত্তরটা শুনলে একটু অবাকই হবেন। একটি স্ত্রী মশা এক কামড়ে মাত্র ০.০০১ থেকে ০.০১ মিলিলিটার রক্ত খায়। মানে ১ থেকে ১০ মাইক্রোলিটার। আরও সহজভাবে বললে, এক ফোঁটা পানির পাঁচ ভাগের এক ভাগ মাত্র!
আপনার জন্য পরিমাণটা খুব সামান্য হলেও মশার জন্য কিন্তু ওটুকুই বিশাল ভোজ! আপনার শরীরের যতটা রক্ত আছে, তা শেষ করতে একসঙ্গে ১০ লাখের বেশি মশার কামড় লাগবে। তবে এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি নিশ্চয়ই কেউ হতে চাইবেন না।
মশা কীভাবে রক্ত চুরি করে
স্ত্রী মশার মুখে একটা বিশেষ অঙ্গ থাকে। দেখতে অনেকটা ইনজেকশনের সুচের মতো। এর নাম প্রোবোসিস। এই ধারালো অঙ্গটি দিয়ে মশা আমাদের চামড়া ফুটো করে সূক্ষ্ম রক্তনালি খুঁজে বের করে এবং সেখান থেকে রক্ত চুষে নেয়।
রক্ত খাওয়ার সময় সে নিজের কিছুটা লালা আমাদের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়। এই লালার কারণেই মূলত আমাদের শরীরে চুলকানি হয়। মাঝেমধ্যে লাল দাগ হয়ে যায় এবং ফোলা দেখায়।
মশা কামড়ানোর স্থানে ফুলে যায় কেন
মশা লালা নিঃসরণের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কার্যকর হয়। মানে ইমিউন সিস্টেম বুঝতে পারে, বাইরে থেকে ক্ষতিকর কিছু প্রবেশ করছে। তখন দেহের ইমিউন সিস্টেম তা প্রতিরোধ করতে উঠেপড়ে লাগে।
দেহ তখন হিস্টামিন নামে একধরনের রাসায়নিক নিঃসরণ করে শরীরকে রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই হিস্টামিনের কারণেই মশার ওই কামড়ে দেওয়া স্থানে চুলকায় এবং জ্বালা করে। আর চুলকালে সেই স্থান ফুলে যায়।
মশা এত রক্ত খায় কেন
খেয়াল করলে দেখবেন, মশা প্রায় পেট ফেটে যাওয়ার আগপর্যন্ত রক্ত খায়। কারণ, মানুষের রক্ত মশার জন্য শুধু খাবার নয়, জীবনধারনের অপরিহার্য উপাদান।
স্ত্রী মশার ডিম পাড়ার জন্য রক্তের প্রোটিন দরকার হয়। আর মানুষের রক্তে থাকে প্রচুর প্রোটিন। পেটপুরে রক্ত খেতে পারলে মশা একসঙ্গে অনেক ডিম দিতে পারে। আর একটা মশা নিজের ওজনের চেয়ে প্রায় তিন গুণ পর্যন্ত রক্ত খেতে পারে। সেটা অবশ্য আমাদের চোখে ওই এক ফোঁটা পানির পাঁচ ভাগের এক ভাগ মাত্র!
মজার ব্যাপার হলো, মশা কিন্তু একসঙ্গে পেট ভরে না। কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ধীরে ধীরে রক্ত খায়। তারপর উড়ে যায়। বেশির ভাগ সময় আপনার বিশাল হাতখানা ওর শরীরকে পিষে দেওয়ার আগেই উড়ে যেতে পারে। মাঝেমধ্যে অবশ্য ধরা পড়ে এবং আমাদের থাপ্পড় খেয়ে মারা যায়।
সব মশা কি রক্ত খায়
আগেই বলেছি, ডিম পাড়ার জন্য মশার রক্ত দরকার হয়। যেহেতু শুধু স্ত্রী মশারা ডিম পাড়ে, তাই ওরাই শুধু রক্ত খায়। পুরুষ মশারা সাধারণত রক্ত খায় না। এরা শুধু গাছের মধু আর মিষ্টি রস খেয়েই সন্তুষ্ট।
পুরুষ মশার মুখেও সেই বিশেষ সুচের মতো অংশ নেই, যা দিয়ে চামড়া ফুঁড়ে রক্ত চুষতে হয়। আর ভুল করেও যদি কোনো পুরুষ মশা রক্ত খায়, তাহলে সেটা ওর জন্য বরং ক্ষতিকর। এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। প্রকৃতিতে পুরুষ মশারা শুধু সঙ্গী খুঁজে বেড়ায় আর গাছের রস খায়। তাই মানুষের জন্য এরা ক্ষতিকর নয়।
সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ডটঅর্গ