ব্যবসার আইডিয়া পেতে পড়তে পারেন এই ৫ বই

ছাত্রজীবন থেকেই অনেক শিক্ষার্থীর মাথায় ব্যবসার চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। কোথায় পাওয়া যায় নতুন কোনো ব্যবসার ‘আইডিয়া’? উত্তরটা নিজেকেই খুঁজতে হবে। তবে কয়েকটি বই পড়ে নিলে বোধ হয় মাথায় ঝড় তোলাটা সহজ হবে। এ রকমই কয়েকটি বই সম্পর্কে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ

মডেল: লাবন্য

দ্য লিন স্টার্টআপ, এরিক রিস

দ্য লিন স্টার্টআপ, এরিক রিস
ছবি: সংগৃহীত

২০১১ সালে প্রকাশের পর থেকেই বইটি ব্যবসা–দুনিয়ায় আলোচিত। কোনো ব্যবসার ধারণা বা স্টার্টআপ আইডিয়া কীভাবে বৈজ্ঞানিকভাবে বাস্তবায়ন করবেন, সেই সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক। প্রাথমিকভাবে কোনো পণ্য বা সেবার বাজার কীভাবে যাচাই করতে হয়, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য বা সেবা কীভাবে গ্রাহক ও ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, ধারণা পেতে পারেন এই বই পড়ে। এমনকি বইটির সুবাদেই স্টার্টআপ দুনিয়ায় ‘লিন স্টার্টআপ মডেল’ নামে একটি ধারণা জনপ্রিয় হয়েছে। বইতে ‘বিল্ড-মেজার-লার্ন ফিডব্যাক লুপ’ নামে একটি মডেল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেকোনো আইডিয়াকে এই মডেলে যুক্ত করে ব্যবসা বা উদ্যোগের শুরুটা করতে পারেন।

জিরো টু ওয়ান, পিটার থিল

পিটারের লেখা বইটির নাম থেকেই বুঝতে পারছেন, একদম শূন্য থেকে শুরু করতে বলছেন তিনি
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ডটকম যুগের পরের সময়কার আলোচিত উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী পিটার থিল। অধিকাংশ উদ্যোক্তা সাধারণত প্রচলিত কোনো ব্যবসার আইডিয়াই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তবে পিটারের লেখা বইটির নাম থেকেই বুঝতে পারছেন, একদম শূন্য থেকে শুরু করতে বলছেন তিনি। লেখক এমন সব ধারণা দেওয়া চেষ্টা করেছেন, যা আগে ছিল না। নতুন ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন, প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ কীভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়ে বই থেকে জানার সুযোগ আছে। ব্যবসা করার চিরায়ত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন আইডিয়াকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, পাঠকের সামনে তা-ই তুলে ধরেছেন লেখক।

স্টার্ট উইথ হোয়াই, সাইমন সিনেক

হাজারো আইডিয়া নিয়ে কাজ করা যায়; কিন্তু কোন আইডিয়া কতটা কাজের, কীভাবে কাজ করে, কেন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু করবেন—সেসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই বইতে।
ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসা কেন করবেন, কোন আইডিয়ার ওপর নির্ভর করে উদ্যোক্তা হবেন—এমন অনেক প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরপাক খায়। বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন, কেন আসলে ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু করবেন। ব্যবসা নিয়ে আপনার যে আইডিয়া বা ধারণা আছে, সেটি বড় আকারে ছড়িয়ে দিতে বইটি হাতে-কলমে অনেক কিছু জানার সুযোগ করে দেবে। হাজারো আইডিয়া নিয়ে কাজ করা যায়; কিন্তু কোন আইডিয়া কতটা কাজের, কীভাবে কাজ করে, কেন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু করবেন—সেসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই বইতে।

ব্লু ওশেন স্ট্র্যাটেজি, ডব্লিউ চ্যান কিম ও রেনে ম্যাবর্ন

আপনার আইডিয়াটি কীভাবে অন্যদের চেয়ে আলাদা ও সৃজনশীল হতে পারে, জানতে পারেন এই বই থেকে
ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসানির্ভর করে কৌশলের ওপর। আপনি যে সেবা বা পণ্য নিয়ে কাজ করবেন, তাকে কীভাবে কোন কৌশলে বাজারে উপস্থাপন করবেন, সেটা জানা খুব জরুরি। আপনার আইডিয়াটি কীভাবে অন্যদের চেয়ে আলাদা ও সৃজনশীল হতে পারে, জানতে পারেন এই বই থেকে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমেও আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন, আবার নিজের আইডিয়াকে প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে আলাদাভাবে উপস্থাপনও করতে পারেন। আপনার আইডিয়া কীভাবে প্রতিযোগিতার উপযোগী হতে পারে, সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন দুই লেখক।

বিল্ট টু লাস্ট, জেমস সি কলিন্স ও জেরি আই পোরাস

বিল্ট টু লাস্ট: সাকসেসফুল হ্যাবিটস অব ভিশনারি কোম্পানিজ বই থেকে জানতে পারবেন, কীভাবে এখনকার আলোচিত প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তারা টিকে গেছেন
ছবি: সংগৃহীত

আপনি কত দূর যাবেন বা যেতে চান—ব্যবসার শুরুতেই এই পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলতে হবে। যেনতেনভাবে শুরুর চেয়ে গুছিয়ে শুরু করলে ব্যবসাটা ধীরে ধীরে বড় করার সুযোগ থাকে। বিল্ট টু লাস্ট: সাকসেসফুল হ্যাবিটস অব ভিশনারি কোম্পানিজ বই থেকে জানতে পারবেন, কীভাবে এখনকার আলোচিত প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তারা টিকে গেছেন। কোন কৌশলে বাজারের প্রতিযোগিতায় তাঁদের আইডিয়াগুলো জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে?

আরও দুটি বই

যাঁরা ছোট আইডিয়া নিয়ে বিশ্ব জয় করতে চান, তারা শু ডগ ও স্টিভ জবস নামের দুটি জীবনীগ্রন্থ পড়তে পারেন। শু ডগ বইটি লিখেছেন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নাইকির প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইট। যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট এক শহরে বসে কীভাবে বৈশ্বিক একটি ব্র্যান্ড তিনি তৈরি করেছেন, তা এই বই থেকে জানতে পারবেন। কীভাবে সাধারণ একটি ব্যবসাকে ক্রীড়া–দুনিয়ার মঞ্চে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলেছেন ফিল, সেই গল্প নিশ্চয়ই আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।

অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের জীবনীগ্রন্থ পড়ার মাধ্যমেও নতুন আইডিয়াকে কীভাবে ব্যবসা হিসেবে দাঁড় করাতে হয়, তা জানতে পারবেন। ওয়াল্টার আইজ্যাকশনের লেখা স্টিভ জবসের জীবনীগ্রন্থ থেকে জানা যায়—কলেজ ড্রপআউট স্টিভ জবস কীভাবে কম্পিউটারের ব্যবসা শুরু করলেন, কেমন করে সৃজনশীল নানা ডিজাইনের মাধ্যমে অন্যতম সেরা সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) হিসেবে পরিচিতি পেলেন।