ক্যাম্পাসে স্টল দিয়ে প্রায় ৯৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন এই উদ্যোক্তা

পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বসেই অনলাইনে দেশজুড়ে ব্যবসা করছেন অনেক তরুণ। ঈদ সামনে রেখে তুমুল ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে তাদের কারও কারও সময়। পড়ুন তেমনই একজনের কথা।

আনতারা ফারজানার উদ্যোগটির নাম খানদানি
ছবি: সংগৃহীত

আনতারা ফারজানার মা-বাবা—দুজনই ব্যবসায়ী। তাই ব্যবসার খুঁটিনাটি তাঁর ছোটবেলা থেকেই জানা। স্কুল-কলেজে যখন পড়তেন, তখন থেকেই ব্যবসার প্রতি একটা টান। ভাবতেন, আমারও যদি মা-বাবার মতো একটা নিজের ব্যবসা থাকত! সেই স্বপ্ন পূরণের একটা সুযোগ আসে করোনা মহামারির সময়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন বন্ধ, তখন সারা দেশের আরও অনেক শিক্ষার্থীর মতো আনতারাও শুরু করেন অনলাইনভিত্তিক পোশাকের ব্যবসা—খানদানি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী এখন তাঁতের পোশাক নিয়ে কাজ করছেন।

‘আমার বাড়ি গাজীপুর। সেখানে তৈরি পোশাকশিল্পের বহু কারখানা আছে, পাওয়া যায় নানা রকম রপ্তানি পণ্য। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করব। তাই প্রথমে যাই টাঙ্গাইল। টাঙ্গাইলে ১২টি উপজেলায় ১২ রকমের শাড়ি তৈরি হয়। সেখানকার তাঁতশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম শাড়ি টাঙ্গাইল থেকেই আনি,’ বলছিলেন আনতারা। এখন ঢাকার বিভিন্ন কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ করে শাড়ির পাশাপাশি থ্রি-পিস আনারও ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

ঈদ সামনে রেখে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন আনতারা। রোজার শুরুতে ক্যাম্পাসে স্টল দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চালু ছিল স্টল। এবারের ঈদ যেহেতু গ্রীষ্মে, তাই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সুতি, তাঁত ও বুটিকের থ্রি–পিসের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে নিয়মিত পণ্যগুলোও ছিল। স্টলের শেষ দিন ২০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থাও করেছেন। ঈদ সামনে রেখে শুধু স্টল থেকেই প্রায় ৯৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন এই উদ্যোক্তা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চালু ছিল স্টল
ছবি: সংগৃহীত

করোনার কারণে ব্যবসা শুরুর প্রথম এক বছর বাসায় থেকেই অনলাইনে কাজ করেছেন। তখনই সারা বাংলাদেশে পণ্য ডেলিভারি দিতে হতো। কিন্তু করোনা–পরবর্তী সময়ে গত বছর এপ্রিলে প্রথমবার ক্যাম্পাসে স্টল দেওয়ার চিন্তা মাথায় আসে। আনতারা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যাঁদের নানা রকম উদ্যোগ আছে, তাঁদের নিয়ে আমাদের “বিজনেস কমিউনিটি” নামে একটা গ্রুপ আছে। সবার সঙ্গে কথা বলেই মেলা আয়োজন করার কথা ভেবেছিলাম। তবে তেমন সাড়া না পাওয়ায় মেলা করা যায়নি। পরে আরেক উদ্যোক্তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবার ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলকভাবে একটি স্টল দিয়েছিলাম। সেখানে গ্রাহকদের সাড়া ছিল অকল্পনীয়। মাত্র তিন দিনে প্রায় ৭৪ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। সেটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।’

যাত্রাটা সহজ ছিল না। শুরুর দিকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। দেখা গেছে, গ্রাহক একটা পণ্য অর্ডার করেছেন, কিন্তু পরে আর দাম পরিশোধ করেননি। আবার প্রথমবার হয়তো কারখানা থেকে দেখেশুনে ভালো কাপড় এনেছেন। পরেরবার যখন কুরিয়ারে কাপড় এসেছে, তখন দেখা গেছে পাঁচ-ছয়টা কাপড় নষ্ট। শুরুর দিকে এই অসুবিধার সম্মুখীন হলেও এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন।

এবারের ঈদ যেহেতু গ্রীষ্মে, তাই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সুতি, তাঁত ও বুটিকের থ্রি–পিসের ওপর জোর দিয়েছেন আনতারা
ছবি: সংগৃহীত

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এখন কাপড় বিক্রি করে,’ বলে বাঁকা চোখে তাকিয়েছে কেউ কেউ। আনতারা আমলে নেননি। সবকিছু ঠিক থাকলে এই উদ্যোগকেই বড় করতে চান তিনি। দাঁড় করাতে চান নিজের প্রোডাকশন হাউস, যেখানে সুতা থেকে শুরু করে কাপড়, ব্লক, প্রিন্ট, সব তৈরি হবে। তখন আর অন্যের দ্বারস্থ হতে হবে না।